পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখf } দুখন আমার পড়ার চেয়ে দরকারি তখন খাত। বই ফেলে হাড়ি কুঁড়ি নিয়েই বসেছি।” পাশের ঘর হইতে নারীকন্ঠে কে জিজ্ঞাসা করিল, “ভাত নামূল নাকি সরযু ?” “ এই যে নামূল ব’লে ” বলিয়া সরযু হাত-বেড়ী লইয়া ব্যস্ত হইয়া উঠিল। নরেন লজ্জিত হইয়। বলিল “এই দেখ, শুধু শুধু তোমার কাজ মাটি করছি।” সে • ছাতাড়ি বাহির হইয়া পড়িল । বড় রাস্তার উপর দাড়াইয়। সে একটু ভাবিয়া লইল । শস্য হাতেই বাড়ী ফিরিবে না, আর একটু ঘুরিয়া দেখিবে। ধারুর শীর্ণ মুখ মনে করিয়া ফিরিয়া যাইতেও তাহার মন উঠিতেছিল না, কিন্তু বাইবেই বা সে কোথায় ? বিশ্বজোড়া লোক তাহারই কাছে টাক। পাইবে, সে কাহার ও কাছেই কি কিছু পাইবে না ? ভাবিয়া দেখিল দুইটি মাত্র লোক তাহার কাছে টাকা ধারে । এক সতীশ, সে তাঁহারই মতন অভাবগ্ৰস্ত, তাহার নিকট টাকা আদায় করিবার চেষ্ট নিষ্ঠুরতা ভিন্ন আর কিছুষ্ট নহে । আর একটি মাতুয আছে, জগতে তাহার অভাব মাত্র অভাবের, কিন্তু এইজন্যই সে অন্তের অভাবকে একেবারে আমল দিতে চায় না। তাহারই কাছে একবার শ্যে চেষ্টা করিয়া দেখিতে হইবে । o হইতে কে বলিয়া উঠিল, "নরেন যে ! রাত্তিরে চলেছ কোথায় ? এস না, সাম্নের রেস্তর তে এক পেয়ালা চ থেয়ে যাবে ।” ক্ষুধায় নরেনের পণ টলিতেছিল ; চায়ের মতন সৌখীন পানীয় তখন তাহার প্রয়োজন ছিল না। তবু ইহাও মৃণালাভ ভাবিয়া সে বন্ধু অমরের সঙ্গে সঙ্গে রেস্তরীর ভিতরে গিয়া বসিল । অমরের বুদ্ধি কিছু ছিল, সে চায়ের সঙ্গে চপ কাট্‌লেট প্রভৃতি অনেক কিছু ফরমাশ করিয়া বসিল । ধীরুর মুখ একবার নরেনের মনে পড়িল, কিন্তু সে না খাইলেই কি ধীরুর পেট ভরিবে ? বরং সে কিছু পাইয়া শরীর-মনের শক্তি একটু ফিরিয়া পাইলে ধীরুর. কাজে লাগিতে পারে । অমর বলিল, “চপের মধ্যে কি এমন দার্শনিকতত্ব S98-\రి ধ্রুবতার $సిసి পেলে হে ? একেবারে যে তন্ময় হ’য়ে ভাবতে ব’সে গেছ ?” নরেন হাসিবার চেষ্টা করিয়া বলিল, “ধারা আসল ‘জিনিয়াস’ তাদের কি আর বড় উপলক্ষ্যের দরকার হয় ? কের্টুলির নল দিয়ে ধয়ে বার হচ্ছে দেখেই তারা ট্রেন আবিষ্কার ক’রে বসে।” অমর বলিল, “ ত বটে, কিন্তু চপ ট। যে জুড়িধে যাচ্ছে ।” নরেন ভাবনা রাখিয়া অfহাবে মন দিল । আমর তাহার কানের কাছে বসিয়া অনর্গল বকবক করিয়া চলিল, তাহার কতক বা নরেনের কানে গেল, কতক বা গেল না । আহারাদি শেষ করিয়া তfহার যখন বাহির হইয়। আসিল, তখনও রাত বেশী গভীর হয় নাই। নরেনের বন্ধু শীঘ্রই নিজের কাজে চলিয়া গেল, নরেন রাস্তাব মোড়ে দাড়াইয়া ইতস্তত করিতে লাগিল, সে বাড়ী ফিরিবে, ন', অভয় নন্দীর সন্ধানেই যাত্রা করিবে । বাড়ী ফিরিবার উৎসাহের তাহার কোনোই কারণ ছিল না, আলো বাতাসহীন ক্ষুদ্র ঘরের মধ্যে মুখনিদ্রার সম্ভাবনা ও খুব বেশী ছিল তা বলা যায় না । কিন্তু অভয় নদীর কাছে গেলেই বা লাভ হইবে কি ? স্বভাল মরিলে ও যায় না বলিয়া বাংলা ভাষায় প্রবাদ আছে, কাজেই বঁচিয়া থাকিতেই কি নন্দীর স্বভাবের পরিবর্তন ঘটবে ? কিন্তু কোনো চেষ্টারই ক্রটি রাখিবে না স্থির করিয়াষ্ট নরেন পথে বাহির হইয়াছিল, স্ততরাং ভাবনায় বেশী সময় খরচ না করিয়া সে চলিতে আরম্ভ করিল। অভয় নদীর সদর দরজা সন্ধ্য হইতে ন হইতেই বন্ধ হইয়া যায়। তবে দুতলার একটি ছোট জানলা খোলা থাকে, সেইথানে ঢ়িল ছুড়িয়া মারিলে কৰ্ত্ত ঘরে আছেন কিনা তাঁহার সন্ধান পাওয়া যায়। বাড়ীর কাছাকাছি আসিয়াই নরেন লক্ষ্য করিল যে সে জানলাটিও বন্ধ। তবু দরজায় বার কতক ঘা না দিয়া যাইতে তাহার মন উঠিল না। কয়েকবার দরজায় ধাক্কা দিবার পর ভিতর হইতে কাংস্তকণ্ঠে কে যেন জিজ্ঞাসা করিল, “কে গা ?”