পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(teR একটি তরুণ মুখ তাহার মনে পড়িল । সরযুর মুখ মনে হইতেই তাহার বুকের ভিতরটা ব্যথায় টন্‌-টন করিয়া করিয়া উঠিল । এই শেষ । জীবনে আর কোনো দিন তাহাকে চোখেও দেখিবে না, দৈবগতিকে যদি কখনও দেখা হয় তাহা হইলে ও সরযুর কাছে গিয়া দাড়াইবার, কথা বলিবার, অচির ভবিষ্যতে তাহাকে নিজের একাস্ত করিয়া পাইবার অধিকার এ জন্মের মতন তাতার গেল, তাই। আর ফিরিয়া পাইবার উপায় নাই । মাতালের মতন টলিতে টলিতে সে আবার পথ চলিতে আরম্ভ করিল। তাহাকে পাঠাইতে হইবে, আজ রাত্রেষ্ট, কাহাকেও ন জানাইয়া, কাহারও জানিবার পথ না রাখিয়া, কিন্তু কি উপায়ে ? মাপার ভিতর তাহার যেন কামারে ং তুড়ি পিটাইতেছে মনে হইতে লাগিল । চিস্ত। না করিয়া উপায় নাই, কিন্তু চিন্ত| করিয়াই বা উপায় পাওয়া যায় কই । t তাঙ্গদের বাড়ী যে-পাড়ায়, তাহার পা দুইটা তাহার গঙ্গাতসারেই তাহাকে সেই দিকে আনিয়। ফেলিয়াছিল । সরযুদের বাড়ীর কাছে অসিতেই কে যেন অদৃশু হাতে তাহাকে প্রবল বেগে সেই ক্ষুদ্র অন্ধকার গৃহের দিকে টানিতে লাগিল। আর একবার শুধু চোখের দেখা দেখিয়৷ যা ওয়া । তাহার সম্মুখে চির অন্ধকার রাত্রি ; পথ চলিবার মতন একটু খানি আলোর শিখ যদি সে সংগ্ৰহ করিতে যায় তাহাতে কাহারও কোন ক্ষতি নাই । জীর্ণ দরজায় ছিদ্র পথে তখনও প্রদীপের মৃদু রশ্মি দেখা যাইতেছে । ধীরে ধীরে আঘাত করিয়া নরেন ডাকিল, “সরযুসরযু।” সরযু তখনও নীচে রান্নাঘরে বাসন মাজার কাজে ব্যস্ত ছিল। গলার স্বর চিনিয়া তাড়াতাড়ি ছুটিয়া আসিয়া দরজা খুলিয়৷ দিল । আকৃত্রিম আনন্দের হাসিতে সার মুখ ভরিয়া বলিল, “আপনি গুনতে জানেন নাকি ?” নরেন হাসিবার চেষ্টা করিয়া বলিল, “তোমাদের বাড়ী আসবার জন্তে কি গুনতে জানবার দরকার হয় ?” "বাড়ী আসবার জন্তে নয়, বাড়ী এলে কিছু লাভ হবে, সেটা জানবার জন্যে ? কিন্তু আপনার চেহারা অমন প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩৩ { ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড হ’য়ে গেল কেন ? না খেয়ে তখন থেকে পথে পথে ঘুরছেন বুঝি ?” “না, সারাক্ষণই পথে ঘুরিনি। কিন্তু কি লাভের কথা তুমি বলছিলে ?” সরযু হাসিতে হাসিতেই বলিল, “ভিতরে এসে ন৷ বস্লে বলব না।” মিনিট খানেক ইতস্তত করিয়া নরেন ঘরের ভিতরই আসিয়া বসিল । সরযু বলিল, “আপনি এক মিনিট বস্ত্রণ, আমি আসছি উপর থেকে।” উপর হইতে সে চট্‌ করিয়া ঘুরিয়া আসিল । নরেনের সামনে গোট কয়েক নোট ধরিয়া বলিল, “দাদা এই গুলো আপনাকে দিতে ব’লে গেছে ।” নরেন যন্ত্রচালিতের মতন নোটগুলি হাতে লইয়৷ গুণিয়া দেখিল যাট টাকা । একটু থামিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “হঠাৎ টাকা এল কোথা থেকে ?” সরযু বলিল, “অনেক কাল আগে কে একজন বাবার কাছে ধার নিয়েছিল, দুদিনে ভগবান তার শুভমতি দিয়েছেন সে নিজে টাকা ফিরিয়ে দিয়ে গিয়েছে । বললে, অৰ্দ্ধেক আমাদের খরচের জন্যে রাখতে, অৰ্দ্ধেক আপনাকে দিতে ।” নরেন বলিবার কিছু খুজিয়া পাইল না । জগতে দয়। মায়া বলিয়া যে কিছু আছে, তাহা সে একরকম ভুলিয়াই গিয়াছিল, এখন দেখিল করুণার উৎস শুকাইয়াও, শুকায়না । দশটি টাকা নিজের জন্য রাখিয়া পঞ্চাশ টাকা সে মায়ের হাতে দিয়া যাইবে, তাহাতে অন্তত একমাস তাহদের চলিয়া যাইবে । তাহার পর ভগবান আছেন । চলিয়া যাইবার জন্ত সে উঠিয় দাড়াইল । সরয়ুর দিকে চাহিয়া নিজেকে আর সম্বরণ করিতে পারিল না । দুই হাতে তাহার একখানি হাত চাপিয়া ধরিয়া বলিল, “সরযু, আমাকে মনে রেখে । জগতের চোখে আমি দোষীই হব, তুমি কিন্তু আমাকে দোষী মনে কোরোন ।” সরযু তাহার স্পর্শে একবার বাপিয়া উঠিয়া স্থির হইয়া গেল। তাহার পর জিজ্ঞাসা করিল, “কোথায় যাচ্ছেন আপনি ?” দjদ।