পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] “জানিনা, অদৃষ্ট যেদিকে নিয়ে যায়,” বলিয়া সে তাড়াতাড়ি বাহির হইয়া পড়িল । সে চলিয়া যাইবার পরও সরযু অনেকক্ষণ সেই অন্ধকার ঘরে দাড়াইয়া রহিল। মাগর দুষ্ট চোখ বার বার জলে ভরিয়া উঠিতে লাগিল । সেই গভীর রাত্রেই কাহাকেও কিছু না বলিয়। একবস্বে প্রায় রিক্ত হস্তে নরেন তাহার আজন্ম পরিচিত সংসার ছাড়িয়া নিরুদ্দেশ হইয়া গেল। পরদিন বন্ধু ও শত্ৰু মিলিয়া তাহার খোজে দেশ তোল পাড় করিয়া তুলিল, কিন্তু তাহার আর কোন চিহ্নই পাওয়া গেল ন । ( ૨ ) “সরযু, ও সরযু। দোর খেলেন । তখন থেকে ডাক ডাকি করছি, মেয়ের কানে যেন যায়ই না।” ঘরের দরজাট সশকে খুলিয়া সরযু জিজ্ঞাসা করিল, “চাই কি তোমার, ঃে দুপুরবেলা এত চেচামেচি হক *:বছ ? খাটুতে খাটতে ত মানুষের একটু বিশ্রামেরও সরকার হয়। আমার বুঝি সেটুকুতেও অধিকার নেই ?” মেয়ের কথার স্বরে মায়ের মেজাজের উত্তাপও প ফ বাড়িয়া গেল। কিন্তু এ ক্ষেত্রে চটিয়া লাভ নাই নিজের পেটেরই মেয়ে, চটিয়া হইবে কি ? সে অবুঝ চলেও, তাহাকেও তাহার মঙ্গল চেষ্টা করিতেই হইবে। কাজেই মনের ঝণঝ মনেই রাগিয়া তিনি বলিলেন, “বলি বিকেল বেলা যে দেখতে আসবে তার খোজ রাগিস ? বেল গড়িয়ে এল, এখুনি ওবাড়ীর স্বকি আসবে তোকে সাজাতে। তাই ডাকৃছি, তা না হ’লে তোকে বিশ্রাম করতে দিতে কি আর আমার অসাধ ?” অতি দুঃপের হাসি হাসিয়া সরযু বলিল, “আমাকে সুজিবে মা ? কি দিয়ে সাজাবে ? সাজালেই কি কুরূপকে স্বরূপ করা যায় ?” "কেন রে ? তোর কুরূপ কোনখানটায় ? খাটুনি একটু কমে আর একটু ভালমন্দ খেতে পাস ত রূপ কেমন ন বেরয় দেখি ।” সরযু বলিল, “আচ্ছ মা, আমার না হয় রূপ আছেই, ধ’রে নিলাম, কিন্তু তোমার টাকা কোথায় ? বাংলা দেশে হাজার স্বন্দরী মেয়েরও টাকা ন হ’লে বিয়ে হয় না, আর আমি ত কোন ছার । দাদার মাইনে ত পঞ্চাশ ধ্রুবতারা 6 e o টাকা, তাতে আমাদের থেতেই কুলোয় না, তবে কিসের ভরসায় তুমি সম্বন্ধ করতে সাহস কর্ছ ?” “না ক'রে করিই বা কি ? জাতের বাড়া মানুষের কিছু নেই, সেই জতই যেতে বসেছে। লোকের কাছে বয়স ত চারবছর কমিয়ে বলি, কিন্তু তোমাকে কি আর চোঁদ পনেরো বছরের ব’লে চালাবার যে আছে ? ধ তাল গাছের মত চেহারা ! টাকা হয়ত তার চাইবেও না, যদি মেয়ে তাদের পছন্দ হয় । পছন্দ হ’তেও পারে, তার বেশ একটি ডাগর মেয়েই খুজছে। ছেলের ঘরে খাবার কোনো ভাবনা নেই, কষ্ট হবে না বেশী বৌয়ের ।” সরযু কিছু আর বলিল না। এই বরের ইতিহাস সে প্রতিবেশিনী সুকুমারীর নিকট ভাল করিয়াই শুনিয়াছিল। ছেলেটির চরিত্রের বিশেষ কিছু খ্যাতি ছিল না, তাহার উন্ডডীয়মান মনকে বাধিয়া রাথিবীর জন্যই একটি বড়সড় বধুর প্রয়োজন । তাহাকেই কি না শেষে এই প্রয়োজনে বলি দেওয়া হইবে মনে করিয়া ঘূণীয় সরযুর শরীর বারবার সঙ্কুচিত হইয়া উঠিতে লাগিল। কিন্তু নিজের ভাগ্য সম্বন্ধে সে এখন প্রায় সম্পূর্ণ উদাসীন হইয়া উঠিয়াছিল। সুখের সম্ভাবনা তাহার জীবনে আর নাই একথা সে একান্ত ভাবে বিশ্বাস করিত বলিয়া, আপনাকে বলি দিয়া আত্মীয় স্বজনের স্ববিধার ব্যবস্থা করিতে সে বিশেষ কিছু আপত্তি অনুভব করিল না। তবুও সমস্ত দেহ মনে যে ঘৃণার শিহরণ তাহার জাগিয়া উঠিত এই বিবাহের নামে তাহাকে সে কিছুতেই নিবারণ করিতে পারিত না। পরিবারের স্থখ-শান্তির জন্ত জীবন বলি দিতে বলিলেও এতটা আপত্তি তাহার হইত কি ন সন্দেহ । কিন্তু হিন্দুর কন্যা সে, একজনকে ভালবাসিয়া হৃদয় দান করিয়াছিল, এখন পারিবারিক প্রয়োজনে তাহাকে এক চরিত্রহীন মদ্যপায়ীর কাছে আত্মদান কয়িতে হইবে, ইহার গভীর লজ্জ তাহাকে তিল তিল করিয়া ক্ষয় করিতেছিল। কিন্তু ইহা সে বলিবেই বা কার কাছে এবং বলিয়া লাভই বা হইবে কি ? যে দেশে স্বয়ম্বর সাবিত্ৰী সতীত্বের সৰ্ব্বোচ্চ আদর্শ, সেইদেশেই কন্যার স্বয়ম্বর হওয়া এখন সৰ্ব্বাপেক্ষ লজ্জার কথা । কাজেই