পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] বিবিধ প্রসঙ্গ—মসজিদের সামৃনে গীতবাদ্য ©8Ꮌ অমুসলমানদের মিছিলের গোলমালও সহ করিতে বলিতেছি, হিন্দুদিগকেও তেমনই মুসলমানদের গো-বলিদান সহ করিতে বলিয়া থাকি। প্রত্যহ অহিন্দু লক্ষ লক্ষ লোকের আহারের জন্ত হাজার হাজার গোবধ এই ভারতবর্ষে হইতেছে। তাহা হিন্দুরা বন্ধ করিতে পারেন না। কেবল বক্রীদের সময় গোবধ লইয়া ঝগড়া বিবাদ ও মারামারি করা যুক্তিসঙ্গত নহে। আমরা"মৎস্যমাংসভোজী নহি । গোবধ দূরে থাকুক, ছাগবলি দেখাও আমাদের পক্ষে কষ্টকর। কিন্তু সকল মামুষের মত একরকম নহে । স্বতরাং অগত্যা যেমন প্রকাশু ছাগবলি সহ করি, গোবধ প্রকাশ্ব ভাবে হইলেও তাহাও সহ্য করিতে প্রস্তুত হইতে হইবে । কলিকাতায় পুলিস্ কর্তৃক মিছিলের যে-অনুমতি প্রদত্ত হয়, তাহাতে লিখিত আছে, যে, মিছিলের গীতবাদ্য গির্জা, মসজিদ, মন্দির প্রভৃতির সম্মুখে সাধারণ উপাসনার ( public worshipএর ) সময় বন্ধ করিতে হইবে। লাট সাহেবের আদেশে পব্লিক্ ওয়াশিপের মানে *S*R* Bostol (congregational worship) বলা হইয়াছে। খৃষ্টিয়ানদের গির্জায় এরূপ উপাসন রবিবারে এক বা দুইবার হয় এবং ঈষ্টার, কৃষ্টমাস (বড়দিন) প্রভৃতি পৰ্ব্বদিনেও হয়। ব্রাহ্মদের এরূপ উপাসনা রবিবার বা বুধবারে হয়, এবং বিশেয বিশেষ উৎসবে হয় । আমরা যতদূর জানি, মুসলমানদেরও এইরূপ সাধারণ উপাসন প্রতি শুক্রবার হয়। নিষ্ঠাবান মুসলমানের রোজ যে পাঁচবার নামাজ করেন, তাহা তাহারা পথে ঘাটে রেলে সৰ্ব্বত্র যথাসময়ে করিয়া থাকেন। তাহ ব্যক্তিগত ব্যাপার। রেলে তাহা করিবার সময় রেলগাড়ী থামান হয় না, রেলগাড়ীর শব্দ বন্ধ হয় না, যে-কামরায় কোন নিষ্ঠাবান মুসলমান নামাজ করেন, তাহাতে উপবিষ্ট অমুসলমান যাত্রীরা কথাবাৰ্ত্ত বা অন্য গোলমাল বন্ধ করিতে বাধ্য হয় না। প্রত্যহ নিষ্ঠাবান কোন মুসলমান যে নামাজ করেন, তাহাতে অবশ্ব অন্য মুসলমানও যোগ দিতে পারেন ; কিন্তু এইরূপ নামাজকে পব্লিক্ ওয়াশিপ বলা চলে না, শুক্রবারের নামাজকেই সাধারণ উপাসনা বলা চলে, ইহাই আমাদের বিশ্বাস । অনেক মুসলমান নেতা যে,বলিতেছেন, যে, ২৪ ঘণ্টাই প্রত্যেক মসজিদে নামাজ চলিতে থাকে, এবং কোন মসজিদের সম্মুখে (বিশেষতঃ নামাজের সময় ) কখনও গীতবাদ্য হয় নাই, ইহা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। আমরা আগে আগে মনে করিতাম, ভারতীয় কোন কোন হিন্দু রাজনৈতিক প্রয়োজন মত যে-সব মিথ্যা কথা বলিয়া থাকেন, তাহাতে র্তাহাদের শিক্ষানবীসিই প্রমাণ হয়, মিথ্যাকথন বিষয়ে ব্রিটিশ, আমেরিকান ও অন্য পাশ্চাত্য অনেক নামজাদা রাজনৈতিকদের সমকক্ষ হইতে র্তাহাদের এখনও অনেক সময় লাগিবে। কিন্তু মসজিদের সম্মুখে গীতবাদ্য বিষয়ে অনেক মুসলমান নেতা ও কলিকাতা খিলাফং কমিটি যেরূপ কল্পনা ও উদ্ভাবনার পরিচয় দিয়াছেন, তাহাতে র্তাহাদিগকে এই বিদ্যায় জগদগুরু বলিয়া মানা ভিন্ন উপায় নাই । লাটসাহেবের হুকুমে মসজিদের কোন সংজ্ঞা নির্দিষ্ট হয় নাই, কলিকাতার কোন রাস্তায় কোন কোন জায়গায় কয়টি মসজিদ আছে, তাহার কোন তালিকাও দেওয়া হয় নাই। এখন যে-কোন স্থানে কোন খোলার ঘরের উপর মাটির গাম্‌লা উবুড় করিয়া রাখিয়া তাহাতে চুড়া বসাইয়া দিয়া তাহাকে মসজিদে পরিণত করিতে দেরী হইবে না। এই প্রকারে মুসলমানদের ইচ্ছামত সৰ্ব্বত্র ধৰ্ম্মসংক্রান্ত ও লৌকিক সব মিছিলে বাধা জন্মান খুব সহজ হইবে । বঙ্গভঙ্গের পর, কলিকাতায় আপার সার্কলার রোডে বধিরমুক বিদ্যালয়ের পাশে যে খোলা জায়গা ছিল, তাহাতে পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী মিলনের চিহ্নস্বরূপ একটি অট্টালিকা নিৰ্ম্মাণের প্রস্তাব হয়। উহাকে ফিডারেশান হল নাম দিবার প্রস্তাব হয় । কিন্তু উহাতে একটি পূৰ্ব্বোক্তরূপ খোলার ঘরের মসজিদ থাকায় বা অবিলম্বে খোলার ঘরের মসজিদত্ব প্রাপ্তি ঘটায়, ফিডারেশুন্‌ হল বানাইবার ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তির খোলার ঘরের মসজিদের পরিবর্তে পাকা মসজিদের জন্য অট্টালিক। নিৰ্ম্মাণ করাইয়াও, কোন কোন মুসলমানের চক্রান্তে ফিডারেশুন্‌ হল নিৰ্ম্মাণ করাইতে পারেন নাই । সুতরাং দরকার মত স্থানে স্থানে খোলার মসজিদের হঠাৎ আবির্ভাব কেহ যেন অসম্ভব মনে না করেন । লাটসাহেবের হুকুমে আছে, যে, কলিকাতার নাখোদা মসজিদের সম্মুখে দিনরাত্রি ২৪ ঘণ্টা সব সময়ই গীতবাদ্য বন্ধ রাখিতে ও বন্ধ করিতে হইবে। ইহার বৃহত্ত্ব, ইহার মর্য্যাদা ও গুরুত্ব, এবং ইছার অবস্থিতির স্থান এই হুকুমের কারণ বলিয়া লিখিত হইয়াছে। কারণগুল। আমাদের বেশ বোধগম্য হইল না । ছোট মসজিদের নামাজও নামাজ, বড় মসজিদের নামাজও নামাজ । ছোট মসজিদের নামাজকারীরাও বড় মসজিদের নামাজকারীদের মত ধাৰ্ম্মিক এবং ধৰ্ম্মের মৰ্য্যাদা রক্ষা করিবার জন্য তাহাদিগেরই মত কাফেরদিগকে শাস্তি দিতে ইচ্ছুক ও সমর্থ হইতে পারে। তবে, ছোট মসজিদ অপেক্ষ বড় মসজিদে এরূপ