পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] রকমের মন্তব্য প্রকাশ করিয়াছেন। প্রথমে একট। কমুনিকের ছ একটা সংবাদে ভুল ও অত্যুক্তি দেখান হয়, কিন্তু কোন কোন সংবাদ সত্য তাহ বলা হয় নাই । তাহাতে লোকের মনে এইরূপ ধারণ জন্মিতে পারে, যে, এরূপ সব বা অধিকাংশ সংবাদই মিথ্যা। তাহার পর সম্প্রতি যে কমুনিকে বাহির হইয়াছে, তাহাতেও, অনেক সংবাদ যে মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত, এইরূপ ভাবটা প্রবল। কিন্তু প্রসঙ্গক্রমে, তিনটা জেলায় যদি ১০০টা মন্দির ও দেবদেবী অপবিত্রীকরণ বা বিনাশ হইয়া থাকে, তাহ যেন বেশী কিছু গুরুতর ব্যাপার নহে, এইরূপ ভাব প্রকাশ পাইয়াছে। একশটা যদি হইয়া থাকে, এইরূপ একটা সংখ্য দৃষ্টাস্তস্বরূপ ধরিয়া লওয়ায় মনে হইতেছে, যে, গবন্মেণ্ট এইরুপ যত সংবাদ সত্য মনে করেন,তাহার সংখ্যা একশত অপেক্ষা কম হইবে না। একশত এইরূপ ঘটনা খুটিয়া থাকিলে তাহা কি বড় কম ? এইরূপ ঘটনা রাত্রে গোপনে হয় বলিয়া পুলিস তাহ নিবারণে অসমর্থ, ইহাও গবন্মেণ্ট-জ্ঞাপনীর অন্যতম কথা । তাহা হইলে প্রতিকার কি ? সৰ্বকার মত এই, যে, খবরের কাগজে এইসব সংবাদ বাহির হওয়াতেই যত অনর্থ ঘটিতেছে । মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত সংবাদ বাহির করা উচিত নয়, সংবাদদাতাদের ও সম্পাদকদের সত্য নিৰ্দ্ধারণে সৰ্ব্বদা খুব অবহিত থাকা উচিত, ইহা আমরা স্বীকার করি ;—বস্তুতঃ ইহা ত সংবাদপত্র পরিচালনের ক খ গ । কিন্তু ইহা কখনই সত্য নহে, যে,অধিকাংশ স্থলে ংবাদদাতারা মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত সংবাদ প্রেরণ করেন এবং সম্পাদকের জানিয়া শুনিয়া বা লঘুচিত্ততার সহিত কিম্ব সাম্প্রদায়িক বিদ্বেয বৰ্দ্ধনের জন্য তাহ প্রকাশ করেন। সংবাদগুলা না ছাপিলেই সব ঠাণ্ড হইয়া যাইবে, এ বড় অদ্ভুত মত। কাহারও গায়ে যদি ব্রণ ফোড়া হইতে থাকে, তাহা হইলে শরীরটা আবৃত রাখিলেই কি সেগুলা সারিয়া যায়? চিকিৎসার কোন প্রয়োজন হয় না ? গবন্মেণ্ট বলিতেছেন, যে, অতঃপর কোন সম্পাদক এরূপ সংবাদ কোন জেলা হইতে পাইলে সেই জেলার ম্যাজিষ্ট্রেটকে সংবাদপ্রেরকের নাম ঠিকানাদি সহ তাহ প্রেরণ করিতে হইবে। গবন্মেণ্ট ম্যাজিষ্ট্রেটুদিগকে বলিয়া দিয়াছেন যে, তাহারা অবিলম্বে এইসব সংবাদের সত্যসত্য সম্বন্ধে অনুসন্ধান করিয়া সম্পাদকদিগকে খবর দিবেন। তখন সম্পাদকের ম্যাজিষ্ট্রেটের দ্বারা সংশোধিত সংবাদ ছাপিতে পারিবেন। যদি কোন সম্পাদক তাহা না করিয়া কোন সংবাদ ছাপেন, তাহা হইলে সরকার মনে করিবেন, যে, সম্পাদক সংবাদটাকে সত্য মনে করেন নী । অর্থাৎ কিনা, যদি সত্য মনে করিতেন, তাহা হইলে বিবিধ প্রসঙ্গ—মন্দির ও বিগ্রহ নাশ 6:86t তাহার সত্যতা পরীক্ষার জন্য ম্যাজিষ্ট্রেটকে পাঠাইবার ভরসা সম্পাদকের হইত ! তাহার পর অবশ্য জানিয়া শুনিয়া মিথ্যা সংবাদ প্রচারের অভিযোগে সম্পাদকের নামে মোকদ্দমা হইতে পারিবে । সম্পাদকদের যে কৰ্ত্তব্য নির্দিষ্ট হইয়াছে, তাহার ফল অহমান করা কঠিন নয়। যে-সব সম্পাদক সরকারী পন্থার অনুসরণ করিবেন, র্তাহারা টাটকা খবর ছাপিতে পারিবেন না ; র্যাহারা যাচাই করিবার জন্য ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট সংবাদগুলা না পাঠাইয়া পাইবামাত্র ছাপিবেন, তাহদের নামে মোকদমা হইবার সম্ভাবনা ঘটিবে। এই দুই কারণে, অনেক কিম্বা সব সত্য ঘটনার খবর অপ্রকাশিতই থাকিয়া যাইবে । এবম্বিধ সৰ্ব্বপ্রকার অনাচার দুবৃত্তত দমনের একটা উপায় তাহার খবর প্রকাশ করা। স্বৰ্য্যালোকে মুক্ত বাতাসে যেমন দুর্গন্ধ ও রোগবিয নষ্ট হয়, তদ্রুপ দুবৃত্ততাও প্রকাশ দ্বারা কতকটা নিবারিত হয়। গবন্মেণ্টের নির্দিষ্ট পস্থা তাহার প্রতিবন্ধকতা করিবে । যে-সকল লেখক ও সংবাদদাতা নিজেদের নাম প্রকাশ করিতে অনিচ্ছক, তাহাদের নাম গোপন রাখা সংবাদপত্রের শিষ্টাচারসম্মত নিয়ম । এই নিয়ম ভঙ্গ করিতে কয়জন সম্পাদক রাজী হইবেন, জানি না। র্যাহারা ভঙ্গ করিবেন, র্তাহারা সহজে সংবাদদাতা পাইবেন না, সুতরাং সংবাদও পাইবেন না। র্যাহারা নিয়ম ভঙ্গ করিবেন না, তাহারা ম্যাজিষ্ট্রেট দ্বার সংবাদ যাচাই করাইতে পারিবেন না, সুতরাং সংবাদ প্রকাশেও তাহাদের ব্যাঘাত ও বিঘ্ন জন্মিবে। ম্যাজিষ্ট্রেট সংবাদ যাচাই করাইবেন পুলিসের দ্বারা। ঘটনা মিথ্যা বা গুরুতর নহে, ইহা প্রতিপন্ন করিবার প্রবৃত্তি পুলিসের থাকিবার সম্ভাবনা আছে। তদ্ভিন্ন, সংবাদদাতাকে সাক্ষাৎ বা পরোক্ষভাবে পুলিস হায়রান পরেশান নিশ্চয়ই করিবে না, বলা যায় না। ংবাদপত্রের সংবাদদাতারা সাধারণতঃ সরকারী কর্তৃপক্ষের সুনজরে থাকে না । তাহার উপর এই প্রকারে ত্যক্ত বিরক্ত হইবার দায় ঝুকি লোকে কেন লইবে ? সংবাদ জোগান কাজটাও আমাদের দেশে এখনও রোজগারের একটা উপায় হয় নাই। এইসব কারণে সম্পাদকদের সংবাদদাতা ও সংবাদ পাওয়া কঠিন হইবে। ংবাদ ও প্রবন্ধাদি ছাপিবার আগে তাহা সৰ্বকারী কৰ্ম্মচারী দ্বারা পরীক্ষিত হইবার ব্যবস্থাকে সেন্সরশিপ এবং পরীক্ষককে সেন্সর বলে। এই প্রথা মুদ্রণযন্ত্রের স্বাধীনতার বিরোধী। গবন্মেণ্টের এই প্রথা অবলম্বন আমরা অত্যন্ত দূষণীয় মনে করি। এক দিকে সরকার দেবমন্দির ও মুৰ্ত্তিংস ব্যাপারটাকে কতকটা তুচ্ছ মনে করিতেছেন, অন্য