পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা } বোঝা গেল না। একি জমিদারী চাল ? একবার মুনে হইল, হয়ত দাদার জন্যই তাহার চটিয়া গেল, তাই বিবাহ দিবার আর ইচ্ছা নাই ; নিতান্ত সামনে কথাটা বল ভাল শোনায় না বলিয়| এখনকার মত এড়াইয়া গেল । দাদার উপর রাগ হইল ; গেীরীর ছিচৰ্কাদুলী-বৃত্তির জন্য আজকের দিনে কি তাহাকে ক’নে না সজাইলে চলিত না ? কিন্তু বেশীক্ষণ র্তাহার উপর রাগ করা যে যায় না । যে মানুষ অর্থ-সামর্থ্যের যথাসাধ্য তাঁহারই কন্যার বিবাহের জন্য দিতে প্রস্তুত, যে সমাজে পতিত হইয়াও তাহাকে বঁ;চাঈয়। চলিতে চায়, তাহার উপর রাগ করা যায় কি করিয়া ? ভাই ও ভাইঝির জন্য যে এতখানি ত্যাগ এক কথায় করিতে পারে, সে যে আপনার কন্যার চোখের জলে বিচলিত হইয়া লৌকিক বিধি-ব্যবস্থা লঙ্ঘন করিবে tহাতে আর বিচিত্র কি ? মৃণালিনী ত সেইদিন হইতেই গেীরীর উপর হাড়ে গড়ে চটিয়া গিয়াছেন । স্বামীর কথায় ভাস্থর যে লোক ভাল ইহা না মানিয়া পারিলেন না ; কিন্তু ওই মেয়েট যে ময়নার কপালে স্বথ ঘটিতে দিবে না ইহ, তাহার দৃঢ়বিশ্বাস দাড়াইয়। গিয়াছে। তাহারা তীর্থ-ভ্রমণের জন্য অকস্মাৎ কেন যে চলিয়া যাইতেছে তাহার একটা কারণ অনুমান করিয়াও র্তাহার মন গৌরীর প্রতি সদয় হইল না । ) তরঙ্গিণীর মনে এত দুঃখের পরও যেটুকু স্বখশান্তি ছিল তাহ, ধেন একটা দম্কা হাওয়ার ঘায়ে এক নিমেষে কোথায় অন্তৰ্হিত হইয়া গিয়াছে । এই পাগল স্বামীকে ণইয়। তিনি আর পারেন না ! না হয় মেয়েট কাশ্লাকাটি করিয়াই ছিল, না হয় অবুঝ লোকে তাহাকে দুইটা রূঢ় কথা বলিয়াই ছিল ! অভিশাপ যাহার কপালে লাগিয়াছে তাহাকে কি সকল বেদন হইতে আড়াল করা যায় ? ধামুষের মনের মত তাহার বাহিক শক্তি ত স্নেহাস্পদকে সৰ্ব্বাঙ্গে বৰ্ম্মের মত ঘিরিয়া থাকিতে পারে না । তাই বলিয়া কি অবোধ শিশুর সকল খেয়াল মানিয়া চলিতে ইবে ? আবার তাহাকেই বিশ্বের ব্যথার হাত হইতে লুকাইয়া ফেলিবার জন্য দেশত্যাগী হইতে হইবে ? কস্তাকে তিনি মা হইয়া পিতার চেয়ে কিছু কম ভালবাসেন জীবনদোলা (t\ు:S ন ; কিন্তু তাহার জন্য র্তাহার এই আশৈশবের সংসার এক মুহূৰ্বে বোঝার মত ঘাড় ইভে ফেলিয়া দিয় এখনই পথে বাহির হইয়। পড়া কি সহজ কথা ? কিশোর বয়সে বীপের বা ড্রী যাওয়ার একটা নেশা ছিল বটে ; কিন্তু প্রথম সস্তানের জননী হইবার পর আজ এই আটাশ বৎসরের ভিতর আর কখনও তিনি এক মাসের কি পনর দিনের জন্য ও বাড়ী ছাড়িয়া বাহিরে থাকেন নাই । দিন যতই গিয়াছে ততই বটবৃক্ষের মত এই বদ্ধিষ্ণু সংসারের এক একটি নূতন শিকড় তাহাকে আরও দৃঢ়ৰূপে আঁকড়াইয়া ধরিয়াছে। সৰ্ব্বংসহ ধরিত্রীর মত তিনি নী:বে আপনার অস্তিত্বকে গোপন করিয়া আসিয়াছেন বটে, কিন্তু ক্ষুদ্র তৃণ হইতে বিশাল বৃক্ষ পর্য্যন্তকে স্নেহ রসসিঞ্চনে ধে মানুষ জিয়াইয়া রাখিয়াছেন, আজ তিনি যদি সরিয়া যান তাহা হইলে কোন অতল শূন্তের ভিত্তির উপর এ সংসার দাড়াইয়া থাকিবে ? কুষ্ণপক্ষের শেষ রাত্রের চাদের আলো ঘরের জানালা" বাহিয়া বিছানায় আসিয়া পড়িয়াছিল । মনট কাল হইতেই চঞ্চল ছিল, সারারাত ঘুমের ভিতরও তাহ। বিশ্রাম পায় নাই ; তাই চোখে আলো লাগিতেই তরঙ্গিণীর ঘুম ভাঙ্গিয়া গিয়াছিল। উঠিয়া বাহিরে যাইবার মত সময় তখনও হয় নাই, শুইয়া পড়িয়াই তিনি আকাশ পাতাল ভাবিতেছিলেন । সংসারে যাহানের প্রাণ ঢালিয়া ভালবাসিয়াছেন তাহীদের ফেলিয়া যাইতে ত মন কঁদিতেই ছিল ; কিন্তু খাহীদের বিষয় অন্তর উদাসীন ছিল, শুধু বাহিরের কৰ্ত্তব্যটুকু মাত্র এতদিন করা হইয়াছে আজ যেন তাহদের বিরহেও মনটা টাটাইয়া উঠিতেছিল । কত ছোট বড় ব্যবহারে তাহীদের অবহেলা করা হইয়াছে, সেইসব ঔদাসীন্তের দোষ ক্রটি সারিয়া লইবার জন্য মনটা উদ্‌গ্ৰীব হইয় উঠিতেছে। সংসারের নানা জনের প্রতি স্থদুর ভবিষ্যতের কৰ্ত্তব্য গুণ পৰ্য্যন্ত যেন এক মুহূর্তেই আজ ভিড় করিয়া তাহার চোখের সম্মুখে আসিয়া দাড়াইতেছে । এত কাজ যে তাহার বাকি পড়িয়া আছে, এত বন্ধনে যে তিনি দেহ-মনের শিরায় শিরায় এই গৃহতলের ধূলামাটির সঙ্গে পৰ্য্যস্ত বাধা পড়িয়াছেন, তাহা ত জীবনে আগে কোনো দিন কল্পনা করেন নাই ।