পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

@r" o আজ যেদিকে চোখ পড়ে সেইদিক হইতেই যেন একট। বিরহের কান্ন। পানিয়া উঠিতেছে । পশ্চিমের পেস্থার গাছটার আড়াল হইতে চাদের অস্পষ্ট খালোয় শাশুড়ীর শয়নগুহ দেখা যাইতেছিল । রুগ্ন বৃদ্ধ মাতুম, দীর্ঘদিন সংসারের সহিত সংগ্রাম করিয়া আজ তাঙ্গাবই তাতে সংসারের সহিত আপনাকে ও সঁপিয়া দিয়া নিশ্চিপ সুখে বিশ্রাম লইতেছেন । তাহার বাৰ্দ্ধক্যজীর্ণ শ্রান্ত নিদ্রিত মুখের ছবিখন মনে পড়িতেই করুণায় তরঙ্গিণীর হৃদয় ভরিয়া উঠিল। শুধু আজিকার দিনটা বাকি ; তারপর কোথায় কত দিনের জন্য যাইতেছেন তাহার ঠিক নাই। এই শিশুর মতন নির্ভরশীল মানুষটির শেষ বয়সের অসংখ্য খামখেয়াল কে বুঝিয়। চলিবে ? বাড়ীতে আরো দশজন বেী-ঝি আছে, কিন্তু এ ভার তাহারত জানিয়া চিরকাল তাহাব। কেবল আপন আপন স্বামীপুত্র লইয়াই নিশ্চিম্ব ছিল ; সকাল হইতে রাত্ৰি পৰ্য্যন্ত পূজায় আহিকে মানে আহারে নিদ্রায় দানে ধ্যানে ব্রত পাৰ্ব্বণে তাহার কথন যে কেমন ছাচের কি ব্যবস্থাটি দরকার তাহার খোজ ত কেচষ্ট রাগে না । আর তিনি ও সে একরোখী কোলের সস্থানের মত এই বউটিকেই চিনিয়। রাখিয়ছেন । কেহ যদি বা কোনে কাজ করিয়া দিতে আসে ত তথনষ্ট তাহার খুটিনাটি দোষ ক্রটিতে বিরক্ত হইয়া “বড় বেীম কোথায় গেল ?” বলিয়া ঠাকডাক পড়িয়া যায় । কাল তাহাকে না দেখিয়া হয়ত “তোমাদের দায়সারা সেবায় আমার কাজ নেই’ বলিয়। অভিমান ভরে সারাদিন অনাহারেক্ট কাটাহঁয়া দিবেন । র্তাহার অভিমান ভাঙাইতে তিনি ছাড়া আর কাহার ও সাহস দেখা যায় ন! । হয়ত এমনি করিয়া কতদিন কত অযত্নেষ্ট বেচারীর দিন কাটিবে । তাহার অভিমান বুঝিয়া কে আর কাজ করিবে ? অভিমানট। যাহাকে স্মরণ করিয়া গর্জিয়া উঠিবে, সে তখন কতদূরে। তরঙ্গিণী জানিতেন অব কাহার ও কাছে সেবা চাহিয়া অভাব মিটাইবার মত দুর্জয় অভিমান সে নহে । পিছনের বাগানের ভোরের পার্থীর কলরবের সঙ্গে সঙ্গে তাঙ্গর ঘরের দক্ষিণ দিকের কুঠরি হইতে যে শিশুটির - মধুর কাকলি ফুটিয়া উঠে আজ অন্ধকার না ঘূচিতেই প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড সে তোতাপার্থীর মত তাহার নিত্য আবৃত্তির কৰ্ম্মে লাগিয়াছে, তরঙ্গিণী শুনিতে পাইতেছিলেন । লাবণ্যর শিশুপুত্রের প্রশ্নাবলী ধরাবাধা ছিল, “ম, দাদু কই ? মা থাম্ম কই ?” ম| নিদ্রায় অভিভূত, উত্তর দিবে কে ? কিন্তু তাহাতে খোকনের কোনো আপত্তি নাই । সে বলিয়া চলিয়াছে, “ম থাম্ম কি কচ্ছে ? থাম্ম। খোক। দাঙ্কুছে ?’ মা সাড় দিল না । কিন্তু তরঙ্গিণীর মনের ভিত্তিতল পৰ্য্যন্ত হর্ষ ও বেদনার একটা হিল্লোল থেলিয়! গেল । তিনি ঘর হইতে বাহির হইবার সঙ্গে সঙ্গেই পোকার ও বাহির হইবার ও ডি পড়িয়া যায় । ধুইয়। রাত্রের কাপড় চোপড় বদলাইয় গৃহকাজে লাগিবর আগে ঠাকুম। যদি পোকাকে কোলে করিয় তাহার প্রশ্নোত্তরসালার যথাযথ অংশগুলি সঙ্গে সঙ্গে আবৃত্তি ন' করেন তাই। হইলে রক্ষা নাই । যুথ হাত এ তাহার এক মই ! কঠিন মধুর কৰ্ত্তব্য। কাল সকালে ঘপন পোক “পৰ্ম্ম পোক। দার্কুছে ?” বলিয়। ব্যস্ত হইয়। উঠিবে অভাগিনী ঠাকুম' ত ছুটিয়া গিয়া থোকার ননীর মর দেহটি পুকে চাপিয় ধরিয়া চুম্বনে ছাইয় দিতে পারি? না। থোকা দুই দশদিন কাদিবে, তারপর ঠাকুমাকে ভুলিয়। যাইবে, আর কাছারও সহিত মধুর সথ্যের সম্বন্ধ পাতাইয় তাহার কোলে এমনি মিষ্টি হাসি হাসির আপনার ভাষার সমৃদ্ধি দেখাইবে । খোকার সেই ভবিষ্যং বন্ধুর প্রতি তরঙ্গিণীর মনে একটুখানি বেদনাময় ঈর্ষ। জাগিয়া উঠিল । ঐ কচি বাহু দুটির বন্ধন રાકાર્દિ এমন নিবিড় করিয়া বাধিয়াছে কে জানিত ? কাল হইতে মনে শাস্তি নাই, তাই শেষ রাত্রির শীতল বাযুর পশে হরিকেশবের ঘুমটা আজ আর পাকিয়া আসিল না । তিনি সহসা উঠিয়া বসিলেন ; F দেখিলেন তরঙ্গিণী বিছানায় পড়িয়া চোখ মেলিয়াই কিসের যেন স্বপ্ন দেখিতেছেন । সৰ্ব্বময়ী কত্রীকে এমন আলস্তভরে জাগ্ৰত স্বপ্নের নেশার মাতিয়া থাকিতে তিনি ইতিপূৰ্ব্বে কখনও দেখেন নাই । তিনি বুঝিলেন মনে বিচ্ছেদের ছায়া ঘনাইয়া আসিয়াছে তাই এ স্বপ্নালস । স্বামীকে জাগিয়া উঠিতে দেখিয়া তরঙ্গিণীর স্বপ্নঘোর এই বৃহৎ সংসারে: