পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] ললিতমোহনের চারতলায় দুটি শুইবার ঘর ও একটি রান্নাঘর। ছাতের সিড়িতে থাকিত, সেটি তাহারই এলাকাভুক্ত । বেশ দিন চলিতেছিল,—কাব্যে গল্পে গানে দুটিতে “কপোত-কপোতী যথা উচ্চ বৃক্ষচুড়ে বাধি’ নীড় থাকে তুখে মুখেই দিন কাটাইতেছিল । ইতিমধ্যে সিমলা হইতে হরিমতি আসিয়া গোল বাধাইল । তাহার চালচলন, পয়সার জাক, সাজের বাহার আর কমিসরিয়েটের বড় বাবু-কৰ্ত্তার খাতির সবশুদ্ধ সে একটা মূৰ্ত্তিমান বিদ্রোহের মত অশোকার সংসারে আসিয়া পড়িল । হরিমতির যখন কিশোর বয়স তখন রাজীববাবুর অবস্থা বিশেষ ভালে ছিল না ; বাড়ীতে স্ত্রী-শিক্ষারও বেশ রেওয়াজ হয় নাই ; হরিমতি পাড়া বেড়াইয়া প৷ চড়াইয়। মুমতির বর কিম্ব কাজলীর নেকলেশ ছড়া সম্বন্ধে আলোচনা করিয়া কাটাইয়াছে—এই অবস্থায় * শুড়ী-ও অভিভাবক-হীন ঘরে পড়িয়া সে একেবারে মন্তব্বর হইয়া পড়িল ও নিজের সখের মাত্র নিরাহ স্বামীর উপর দিয়া পুরাপুরি মিটাইয়া লইতে লাগিল। যাহার কথায় অতগুলি সরকারী কৰ্ম্মচারী ওঠে বসে সেই কfমসরিয়েটের বড়-বাবুই উঠিতে-বসিতে তাহার মুখ চাহিয়া থাকেন—ইহাতে তাহার গর্বের অস্ত নাই । স্বামীর জন্ত স্ত্রীদের আত্মোৎসর্গের কথা সে ভাবিতেই S চাবা পারে না । অশোক প্রথমটা বিরক্ত হইয়া স্বামীর প্রতি দিদির খোটাগুলির প্রতিবাদ করিত। হরিমতি ললিতের ঘরের সামান্ত অভাবগুলিকেই এত বড় করিয়া দেখাইতে লাগিল যে, প্রথমত অশোকার বিরক্তি ধরিয়া গেল ; একদিন হরিমতি মাকে সঙ্গে করিয়া অশোকার বাড়ী বেড়াইতে আসিয়া দেখিল সে তাহার একটা পুরাতন শাড়ী সেলাই করিতেছে। মায়ের দিকে অর্থপূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া হরিমতি বলিল, “ম, হামারও কি পয়সার অভাব ঘটেছে নাকি ? যখন জানই ললিতের ক্ষমতা নাই মাঝে মাঝে কাপড়ট . ব্লাউজট কিনে দিলেই পার!” মা বলিলেন, "আ কপাল, মেয়ের যে মোক ভারী, মুখ ফুটে কি কিছু বলে ? সেদিন গোয়াবাগানে নেমস্তন্ন খেতে গেল না—বললাম, কাপড় জমা আকাশ-বাসর Woe & তোর না থাকে বল, আমি আনিয়ে দিচ্ছি ; মেয়ের অভিমান হ’ল, বললে, কাপড়-চোপড় আছে। এখনি কি হয়েছে মা, যে-লোকের হাতে ও পড়েছে আরো কত না জানি ওর কপালে আছে।” অশোকা অভিমান-ক্ষুব্ধ ভাবে বসিয়া রহিল, বলিল, “সব্বাইকার অবস্থা কি সমান হয় মা, ক্ষমতা নেই দেবে কোত্থেকে ’’ মা ফোস করিয়া উঠিলেন, “কেন,চেষ্টা করেছে কোনো দিন—তোর জন্যে একটু কি ভাবে ? খালি লেখা আর পড়া ।” অশোকার ইচ্ছা হইল বলে—বড় জামাইবাবুর মত মদে ডুবিয়া থাকা অপেক্ষা সে অনেক ভাল—কিন্তু সে চুপ করিয়া রহিল । ঘা খাইয়া খাইয়া তার মনেও বিরক্তি ধরিয়াছে । দিনের পর দিন এই ভাবে স্বামীর নিন্দ শুনিতে শুনিতে সে অস্থির হইয়া উঠিয়াছে । তাহার সব রাগ গিয়; পড়িল ললিতমোহনের উপর, তাই ত, ও ত চেষ্টা করিলেই পারে—বিদ্যা বুদ্ধির ত অভাব নাই । তবে সে চেষ্টা করে না কেন ? অথচ ললিতকে কিছু বলিতে গেলে সে হাসে । শেষে সেও স্বামীর অপদার্থতা কল্পনা করিয়া তাহার প্রতি বিরূপ হইতে লাগিল । মা ও দিদি ইন্ধন জোগাইতে বসুর করিল না। আরো দুইচারিজন বন্ধু জুটিল ; তাহদের সহানুভূতিস্বচক হা-হুতাশে তাহার গৃহ মুখরিত হইয়া উঠিল। সে বুঝিল ও বিশ্বাস করিল তাহার এই অপরূপ রূপ ও গুণ একজন অপদার্থের হাতে পড়িয়া নষ্ট হইয়াছে । ললিত একেবারে তলাইয় গেল। একদিকে নিজের কাব্যজীবনের হতাশ্বাস অন্যদিকে স্ত্রীর বিমুখত ললিতমোহনকে নিত্যই পাড় দিতে লাগিল। সে জীবনে বীতশ্রদ্ধ হইয়া পড়িল । এখনও সে মাঝে মাঝে ভাবিতে বসে—হায়, যদি অশোক তাহার দুঃখ বোঝে তাহা হইলে জীবনে যশ ও অর্থে সামান্য যাহা কিছু জুটিতেছে তাহা দিয়াই তাহার স্বৰ্গ গড়িতে পারে । এত বিফলতার মধ্যেও তাহার ক্তদের নিকট হইতে যথেষ্ট আনন্দের খোরাক জুটিত । অশোকার প্রীতি তাহা নিবিড় ও দীর্ঘস্থায়ী করিয়া f |