পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা] আসিয়া দাড়াইল। স্ত্রীর বন্ধুদের হাসি তাহার বুকে তীরের মত বিধিতে লাগিল, সঙ্কীর্ণ বারান্দা ধরিয়া সে সিঁড়ির সাম্নে আসিল ; ভাবিল, নীচে রাস্তায় জনতার মধ্যে বাহির হইয়া পড়িবে, কিন্তু তাহার আহত মন একটু নিরিবিলি থাকিতে চায় । হঠাৎ ছাদের সিড়ির দিকে নজর পড়াতে সে আশ্বস্ত হইল। সঙ্গে চাবী ছিল— নিঃশব্দে বাড়ীর ছাদে গিয়া উপস্থিত হইল। ছাদে উঠিতেই একটি দূরের বাড়ীর ছাদের দিকে তাহার নজর পড়িল ; বাড়ীর ছেলের ছাদে ব্যায়াম করিতেছে । আকাশের গায়ে মুগুর ভাম্বেল সহ তাহাদের শরীর-সঞ্চালন, ললিতের মনে হাস্য-রসের স্মৃষ্টি করিল। তাহার বিরক্তি-ভাব কাটিয় গেল,—দুৰ্ব্বল শরীর চাঙ্গ হইয়া উঠিল। আগে সে দুই-একবার এই ছাদে উঠিয়াছে । কিন্তু তখন ইহা বিশেষ লক্ষ্যের বিষয় ছিল না। চারিদিক দেখিয় তাহার মনে হইল,যেন সে একটি সম্পূর্ণ নূতন রাজ্য আবিষ্কার করিয়াছে এবং সে সেন পরীর রাজ্য । কলিকাত সহর যে কত সুন্দর সে এই প্রথম তাঙ্গা দেখিল । প্রাসাদ ও অট্টালিকার চড়া, কলের চিম্নী, নারিকেল-গাছের মাথা, সব-সমেত কলিকাতা অপরূপ সৌন্দর্ঘ্যে শোভা পাইতেছে ; গীর্জার চূড়ায়ও দুই-একটি বাড়ীর চিলেকোঠায় নানা রঙের পতাকা উড়িতেছে । দূরে থালের জল ইস্পাতের পাতের মত ঝলক দিয়া উঠিতেছে। রাস্তার গাড়ী ঘোড়া ও মানুষের ভিড় যেন পি পিড়ার সারি বলিয়া মনে হইল । পশ্চিমাকাশে সন্ধ্যার মেঘে অপূৰ্ব্ব বর্ণ বৈচিত্র্য । বাতাস মৃদু বঠিতেছে । ললিতের উত্তপ্ত ললাট কাহার মেম স্নেহ-করস্পশে শীতল হইয়া গেল। চিমনীর ধোয়ার গন্ধই তাহার মনে পুলকসঞ্চার কবিল। শব্দ, গন্ধ, আকাশ, মেঘ, ধোয়, দূরের বাড়ীর ছেলেদের কসরৎ—সবশুদ্ধ তাহাকে তাহার চারতলার ঘরের বিরক্তিকর বাস্তবতা হইতে বহুদূরে লইয়া গেল । 姆 ললিত বিপুল আরামে নিশ্বাস লক্টতে লাগিল যেন এতকাল কেহ তাহাকে অন্ধকার গুহায় আটক করিয়া রাখিয়াছিল। ছাদের আলিসায় ভর দিয়া উদাস-আগ্রহে আকাশ-বাসর ♥መፃ একবার সহরের উপর চোখ বুলাইয়া লইল । পাশেই একটু নীচে একটি পাশের বাড়ীর ছাদ। চেতলার ঘরটির স্বাই-লাইটের ভিতর দিয়া ভিতরের খানিকটা দেখা যাইতেছিল। ছবি, ছবি আঁকিবার সরঞ্জাম, ইত্যাদিতে ঘরখানি ভৰ্ত্তি । কোনো চিত্রকরের ষ্টুডিওঁ, হইবে। চিত্রকর একটি রঙীন রেশমী লুঙ্গীর উপর পাঞ্জাবী পরিয়া আছে, গভীর মনোযোগের সহিত সম্মুখে দেখিতেছে, আনন্দে শীষ দিতেছে ও কাগজে অঁাচড় ; কাটিতেছে। সম্ভবতঃ সে কোনো মডেলকে দেখিয়া ছবি আঁকিতেছিল। মডেলটিকে দেখা যাইতেছিল' भः । আর্টিষ্টের অর্থ গু মনোযোগ, শীর্ষের শব্দ ও কাজের তৃপি দেখিয়া ললিতের সুক জলিয়া উঠিল ; কে যেন তাহাকে বাস্তবজগতের মধ্যে ঠেলিয়া ফেলিয়া দিল । নিজের বিফলতার চিস্তায় তাহার মুষ্টি দৃঢ়বদ্ধ হইতে লাগিল । সে সেদিক হইতে দৃষ্টি ফিরাইয়া লইল । ইহাই ত তাহারও কাম্য ! কাজের মধ্যে মগ্ন হইয়া যাওয়া ; নিজের স্বষ্টিকে মনের আনন্দে উপভোগ করা ; স্ষ্টির মত্ততায় আত্মহারা হওয়া ! স্বাস্থ্য আপনিই আসিবে। ডাক্তারের কথা তাহার মনে পড়িল—গোলা জায়গা, নিরিবিলি, বিশুদ্ধ বায়ু । অনন্ত আকাশের দিকে মাথা তুলিয়। ললিতমোহন । আর-একবার চারিদিক দেখিয়া লইল । আকাশে তারা ফুটিতে শুরু হইয়াছে। বাতাসের গতি মৃদুমন্দ। ঠিক এখানেই ত সব মিলিবে—অপৰ্য্যাপ্ত বায়ু, বিপুল আলে, নীরব শান্থি । ডাক্তারের নির্দেশ-মত ললিত হাওয়া পরিবর্তন করিবে, কিন্তু পাড়াগায়ে নয় এই ছাদের উপরে ৷ সন্ধ্য-সঙ্গীতের কয়েকটা লাইন ললিতমোহনের মনে পড়িয়া গেল— অনন্ত এ আকাশের কোলে টলমল মেঘের মাঝার, তোর তরে বাধিয়াছি ঘর হে মানসী কবিতা আমার ! সেও এখানে ঘর বঁধিবে । এই আকাশ-বাসরের কথা মনে হইতেই সে আরাম