পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Wo e আর্টিষ্টের ঘরের ছাদে একটি মেয়ে স্থির ছবির মত দাড়াইয়া আছে ; যেন বিষাদের প্রতিমূৰ্ত্তি ! মেয়েটির পরণে একটি নীলসাড়ী ; যেন সে বাহিরে যাইবার জন্য সজ্জিত ; ত:হার চেহারাটি ভারী মধুর—বিযাদ-করুণ। ললিভের অস্তিত্ব মেয়েটি একেবারেই টের পায় নাই— সে একদৃষ্টি নীচে পথের জনতার দিকে চাহিয়াছিল। পাছে তাহাকে দেখিয়া মেয়েটি কিছু মনে করে, ভাবিয়া ললিত অন্তরালে থাকিয় তাহাকে লক্ষ্য করিতে লাগিল । কিছুক্ষণ পরে মেয়েটি সহসা আলিসার ধার হইতে সরিয়া আসিয়া অশাস্তভাবে ছাদে পায়চারী করিতে লাগিল । ললিত গোপনে থাকিয় তাহাকে দেপাট। অন্যায় মনে করিল না ; কে যেন তাহাকে বলিয়া দিল তাহার উপস্থিতি প্রয়োজন ; মেয়েটি ঠিক প্রকৃতিস্থ নহে। সে ছাদে হাওয়া থাইতে আসিয়াছে বলিয়া বোধ হইল ন। মানুষের বিয়োগান্ত নাটকের অপরাদ্ধ—অর্থাৎ নিৰ্য্যাতিত নারীর দিকটি সে যেন সম্মুখে দেখিতে পাইল । থে বেদন সে অশোকার কাছে পাইয়াছে, সেই বেদনাই বুঝি ইহাকে এই ছাদে শান্তির খোজে টানিয়া আনিয়াছে। এই অসীম আকাশের নীরবতার মধ্যে সে বুঝি তাহারই মত ডুবিতে চায় । ললিত অবিলম্বে বুঝিতে পারিল, মেয়েটির ব্যথা একটু ভিন্ন ধরণের ; সে আরো বেশী নিঃসঙ্গতা চায় ; সেন তাহার অবসাদ কিছু করিবার অভাবে নহে—স্থষ্টি-শক্তির প্রেরণায় নহে ; জীবনের সহিত দ্বন্দ্বে সে ধ্বংসকেই যেন বরণ করিতে চায় । তাহার চক্ষু অস্বাভাবিক দীপ্তিসম্পন্ন ; কানের দুলদুটি পর্য্যন্ত যেন ঠিক স্বাভাবিক ভাবে দুলিতেছে না ; তাহার মুখাবয়বে ও অঙ্গুলি-সঞ্চালনে একটা উগ্রতা ফুটিয়া উঠিতেছিল। মেয়েটি চকিতে একবার চারিদিকে চাহিয়া লইয়া হঠাৎ আলিসার উপর উঠিয়া দাড়াইল। সে কি করিবে ললিত ইতিপূৰ্ব্বেই স্পষ্ট অমুভব করিয়াছিল ; সে বিদ্যুৎগতিতে ছুটিয়া আসিয়া পাশের বাড়ীর ছাদে নামিয়া পড়িল ও মেয়েটি কিছু বুঝিবার পূৰ্ব্বে অতর্কিতে তাহাকে ধরিয়া ফেলিল । তাহাকে ধরিয়া টানিয়া নামাইতেই সে উন্মত্তের মত প্রবাসী – শ্রাবণ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড ললিতকে মারিতে লাগিল ; আঁচড়-কামড় সত্ত্বেও ললিত তাহাকে সবলে ধরিয়া রহিল । এই ধস্তাধস্তির পরে দুজনেই আলিসার পাশে দাড়াইয়া হাপাইতে লাগিল ; মেয়েটি থরথর করিয়া কাপিতেছিল। বিযম উত্তেজনায় তাহার অধরোষ্ট কম্পমান । নীচের রুদ্ধ-দ্বার ষ্টুডিওতে বঁাশী তেমনি বাজিতেছিল ; সশব্দ তালের শব্দ তেমনি চলিতেছিল । উচ্ছসিত ক্ৰন্দনাবেগে ললিতের হাত ধরিয়া মেয়েটি বলিল,—“আপনি কেন আমায় ব:ধা দিলেন ; আপনি কতবড় নিষ্ঠুরের কাজ করলেন ত! জানেন না ; আপনি কেন আমার এমন শত্রু হলেন ?” মেয়েটি কাদিতে লাগিল। ললিতের মনে পড়িল— বিবাহের কিছু দিন পরে তাহার সহিত ঝগড়া করিয়া একদিন অশোক শাস্থির প্রত্যাশায় তাহারই বুকে মাথ৷ রাগিয়া এমনি কাদিয়াছিল। বেদনার সেই মূৰ্ত্তি। কি অল্প আধাতেই ইহার এমন ভাঙিয়া পড়ে ! সে বলল, “কি হ’য়েছে আপনার ? জীবনটাকে নষ্ট করতে চাইছেন কেন ? কিছুদিন অপেক্ষা ক’রে দেখুন— হয়ত আজকের এই অসহ দুঃখ আপনার আর থাকবে ন ; মিছিমিছি আত্মহত্য ক’রে দুঃখের হাত থেকে রেহাই পেতে চাওয়া দুৰ্ব্বলের লক্ষণ ; দুঃখ-কষ্টকে এত ভয় কেন ?” মেয়েটি কথা বলিল না, চুপ করিয়া দাড়াইয়৷ রহিল। ললিত বলিল, “দুঃখ জিনিষটা বরাবর থাকে না, ওট। আসে আবার চলে যায়। একটু সহ ক’রে থাকুন, অামার বিশ্বাস আপনার যতবড় দুঃখই হোক—বেশী দিন থাক্বে না ।” মেয়েটি ব্যথিত দৃষ্টি লইয়া ললিতের দিকে চাহিল ; তাহার মুখের অস্বাভাবিক ভাবটা কাটিয়া গিয়াছে ; কিন্তু মুখ ছাইয়ের মত সাদা ! সে ধীরে ধীরে বলিল, “আমি জানি আমি ভীরু, কিন্তু যন্ত্রণাও বড় কম পাইনি।” “শারীরিক যন্ত্রণ, ন মানসিক ? আপনার স্বামী আপনাকে ভালোবাসেন না এই ত কষ্ট ? মেয়েটি প্রায় আত্মগত ভাবেই বলিল, “ভালোবাসেন, খুবই ভালোবাসেন, কিন্তু সে আমাকে ছিন্নভিন্ন ক’রে—