পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\)'R יין וj}* “আচ্ছা,বেঁচে থাকৃতে আপনার বেশ ভালো লাগছে ?” “খুব, মৰ্বতে চাইব কোন দুঃখে ?” "আমি যখন গান শিখতুম, আমারও তাই মনে হ’ত, আমি বেশ ভালো গাইতে পার্তুম—এস্রাজও বাজাতে পাৰ্বতুম।” মেয়েটি কপালে হাত রাখিল, বলিল, “আমি নীচে যাই ; আমার ভারী লজ্জা করছে।" “ভালো লক্ষণ বটে,” বলিয়া ললিত সিড়ির দরজা পৰ্য্যস্থ মেয়েটিকে আগাইয়া দিল । “আর কখনও ওপরে আসবেন না। যদি কখনো এস্রাজটিকে সঙ্গে আনতে পারেন, আসবেন । আমার এই নিভৃত আকাশ-বাসরে আজকের মত কোনো অনাচার আমি সহ করব না।” মেয়েটি ললিতের এত সব রুদ্ধ মনের কথা শুনিয়া কি বুঝিল জানি না। বিবর্ণ মুখের কোণে তাহার একটু মৃদ্ধ হাসি ফুটিয়া উঠিল—বুঝি তাহা প্রাণ ফিরিয়া পাইবার আনন্দের বিকাশ । সে নীচে চলিয়া গেল। ললিত নিজের উচ্ছ্বাসে লজ্জিত হইল ; ভাবিল— যাই হোক মেযেটি আমাকে আর মুখ দেখাইবে না। কিন্তু সে ইহা ভাবিয়া মুখী হইল না। সেও ক্লান্ত মনে শ্রান্তদেহে আপনার নীড়ে ফিরিয়া আসিল । সে অনেকক্ষণ ঠাও বাতাসে পায়চারি করিল। ধোয়ার ভিতর দিয়া পথের আলোগুলি মিটমিটি জলিতেছে—হতাশার মুধ্যে ক্ষীণ আশার মত। বাশীর মুর তখনও থামে নাই। কাগজপত্রগুলি গুছাইয়া লইয়৷ সে মনে মনে বলিল—সব বুটা হায়’—সে শুধু শান্তিতে থাকিতে চায়। কিন্তু যাহার উপর এই অভিমান সেও তখন অভিমানে মনের কপাট রুদ্ধ করিয়াছে ; ভুল দিয়া ভুলের প্রায়শ্চিত্ত হইতেছে। ললিত সস্তপণে নামিয়া আসিল । দিন পনের পরে সন্ধ্যার খানিক আগে ললিত তাহার উপন্যাসের উপসংহার লিখিতে ব্যস্ত ছিল ; হঠাৎ এস্রাজের মৃদুগুঞ্জন-ধ্বনি শুনিয়া সে চমকিয়া উঠিল । নিশ্চয়ই সে । লেখা বন্ধ করিয়া ললিত উঠিয়া পড়িল । কিনারায় আসিয়া দেখিল—সেই বটে। ছাদের এক প্রবাসী—শ্রোবণ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড কোণে বসিয়া আপন মনে এস্রাজের তারে ঝঙ্কার : দিতেছে। ললিতের মন খুলীতে ভরিয়া উঠিল। সে নিঃশব্দে শুনিতে লাগিল । তরলধারার মত স্বর যেন গলিয়া পড়িতেছে। রাগিণীটি শেষ হইতেই মেয়েটি উপরের দিকে চাহিয়াই লজ্জায় মুখ নামাইল। এস্রাজটি ছাদের উপর রাখিয়া আলিসার ধারে আসিয়া ললিতকে ছোট একটি নমস্কার করিয়া বলিল, “আমি আবাব বাজাতে চেষ্টা করছি, কিন্তু হাত চলে না। অনেক দিনের অনভ্যাস ।” ললিত বলিল, বাজাচ্ছিলেন।” “চমৎকার না ছাই ! বা রে, আপনি এখানে দাড়ি:ে সময় নষ্ট করলে ত চলবে না। লিখুন গিয়ে ; আমি আপনার কাজে বাধা দিচ্ছি দেখছি।” অপরিচিতার এই আগ্রহ দেখিয়া ললিত একটু হাসিল, কিন্তু তাহার চোখ ছলছল করিয়া উঠিল । অশোকার স্মৃতি ? সে বলিল, “না, না, আপনার ভারী ক্ষমতা, আপনি বাধা দেবেন আমাকে ? এ ত আর ঘরের অন্ধকার নয়—এখানে অসীম বিস্তার, প্রচুর অবকাশ। আজকের দিনটি ভারী স্বন্দর, না ? তেমন শীত নেই ।” “ত হোক, আমি নীচে যাচ্ছি, আপনার কাজের ক্ষতি হ’তে দেব না। আপনার লেখা কেমন চলছে ?” "চমৎকার –বইখানা ভালো ওৎরাবে বোধ হয়।” “নিশ্চয়ই, ভালো হ’তেই হবে”—বলিয়া মেয়েটি এস্রাজের কাছে গিয়া সেটি কোলে লইয়া বসিল । ললিত ফিরিয়া আসিয়া আবার লিখিতে বসিল । কিন্তু, তখন সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনাইয়া আসিতেছে। ফিরিয়৷ ফিরিয়া এস্রাজের ঝঙ্কার আর মেয়েটির শান্ত চোখ দুটি ললিতের মনে পড়িতে লাগিল।—‘অশোকার চাইতে বড় না ছোট ?—বড়ই হবে ; সংসারের দুঃখ-যন্ত্রণাতেই ত ওর বয়স ঢের বেড়ে গেছে। অশোক ত দুঃখ কাকে বলে এখনো জানে না। সে যে কিশোরী মেয়েটির মতই “কেন, আপনি তো চমৎকার . চঞ্চল । যাকুগে ছাই, এসব ভাবি কেন ?—ললিত বেড়াইতে লাগিল। এমনি করিয়া অনন্ত আকাশের কোলে দুটি নীরব