পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] সাধকের সাধনা চলিতে লাগিল। কচিৎ কখনো দেখাসাক্ষাৎ হয়—এস্রাজের ঝঙ্কারে তাহার আভাস পাওয়া যায় ; কথাবাৰ্ত্ত বড়-একটা হয় না। ললিত যখন উচ্ছসিত মন লইয়া কথা বলিতে আসে মেয়েটি তখন প্রায়ই নীচে নামিয়া যায়। একদিন মেয়েটি জিজ্ঞাসা করিল, “কই আপনার স্বী ত কোনো দিন ওপরে আসেন না।” ললিতের মুখের উপর হাসি ও অশ্রু এক সঙ্গে থেলিয়া গেল। সে বলিল, “না ও জানে না, আমি এখানে আসি ।” “আপনি লুকিয়ে আসেন বুঝি ; ভারী অন্যায় আপনার । আচ্ছা, আপনার স্বা, অন্ধ বোবা কালা— সত্যি তো ? ললিত চুপ করিয়া রহিল। কি বলিবে সে ? “বলুন না।” “আমার সম্বন্ধে ও তিনই—অামি তার অপদার্থ স্বামী ; অনেক আশায় ও আমায় বিয়ে করেছিল ; আমি সব আশায় ছাই দিয়েছি—” " ও বুঝেছি, আমি কিন্তু অপদার্থ লোককে বিয়ে করলে স্বর্থী হ’তে পাবৃতুম । জীবন-যুদ্ধে জয়ী যারা তাদের কথা আপনার স্ত্রী যদি জানতেন ! আচ্ছা আপনার এ বইটার যদি খুব কাটুতি হয় ;–তা হ’লে—” ললিতকে সে যেন ক্যাঘাত করিল ; সে মুখ ফিরাইয়। দূরে চাহিয়া রহিল। মেয়েটি বলিল, “বুঝেছি—আপনি এত দাম দিয়ে কেন। মফিল্যের বিনিময়ে তাকে আর ফিরে পেতে চান না। ছি ! আপনি কি নিষ্ঠুর ” দুই জনে বিষণ্ণ মনে স্ব স্ব স্থানে ফিরিয়া গেল । ললিতের উপন্যাসখানি শেষ হইল। কিন্তু যতটা আনন্দ সে পাইবে কল্পনা করিয়াছিল তার সামান্ত অংশও পাইল না। স্বষ্টির মধ্যে হয়ত পরশ-পাথরের • সন্ধান ছিল, কিন্তু সমাপ্তিতে তাহ যেন কুড়ি-মাত্রে পৰ্য্যবসিত হইয়াছে। কেন এমন হইল—ভাবিতে গিয়া অশোকাকেই মনে পড়িয়া গেল । - সে আর-একখানি উপন্যাস লিখিতে স্বরু করিল। প্রথম উপন্যাসখানি শেষ হইবার পর রাত্রে খাইবার আকাশ-বাসর ○○● সময় সে অশোকাকে তাহা জানাইল । অশোক ক্ষুঞ্জ হইল ; তাহার দাবী কি শুধু এইটুকু ? বলিল, “এ ক’মাস তুমি খুবই খেটেছ দেখছি।” তাহাকে আরো আঘাত দিবার জন্য ললিত বলিল, “হ্যা, খুবই খাটুনী হয়েছে বটে।” অশোকা ও খোটা দিয়া বলিল, “লাইব্রেরীতে খুব শাস্তিতে কাজ করতে পাও বুঝি ?” “হ্যা, সেখানে ভারী নিরিবিলি।” অশোক গম্ভীরভাবে বলিল, “বাড়ীতেও তুমি খুব নিরিবিলিতে কাজ করতে পারতে —আর কেউ এখানে আসে না ।” “সে কি ? মা, দিদি এরা ?” ‘কেউ না, তাদের সঙ্গে ঝগড়া করেছি।” “ঝগড় ? কেন ?” “ঝগড় তোমাকে নিয়েই” বলিয়াই অশোকা অন্য কথা পাড়িল । সেই অভিমান । ললিত জিজ্ঞাসা করিল, “ব্যাপার কি অশোক ?” নিলিপ্তভাবে অশোক বলিল, “সেকথা থাক—যা হ’বার তা ত হ’য়েই গেছে ।—হঁ্যা— তোমার এই বইট। যদি ভালো চলে আমাকে দাজ্জিলিং নিয়ে যেতে হবে। এবার গৌরীদিরা যাবে।” ললিতের মন ভিজিয়। আসিয়াছিল ; শেযের কথা শুনিয়া আবার সে কঠিন হইল। বুঝিল মিলনের চেষ্টা বৃথা ; কোথায় যেন কি গোলমাল হইয়া গেছে। স্বামীর এই ভাবাস্তর লক্ষ্য করিয়া অশোকাও বাকিয়া বসিল। পরস্পর আবার বহুদূর বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়িল । দ্বিতীয় উপন্যাসের জন্য অতিরিক্ত পরিশ্রমে ও অজানিত মানসিক অস্বচ্ছন্দ্যে ললিতের শরীর আবার ভাঙিতে সুরু হইয়াছে । সে প্রথম বইখানি লইয়া কোথায়ও গেল না । যে যশকে সে এত কাম্য ভাবিয়াছিল হাতের কাছে তাহাকে পাইয়াও সে ছাড়িয়া দিতে দ্বিধা করিল না। কাজের জন্য প্রচুর নিভৃত অবকাশ, আলো ও হাওয়া ছাড়া আরো কিছু সে চায়, কিন্তু সে যাহা চায় তাহ। তাহাকে কে দিবে ? যে দিতে পারে, সে নিজের দোষে ও ললিতের হতাদরে বহুদূরে চলিয়া গিয়াছে। ললিতের এমন দুৰ্ব্বল শরীর সে দেখিয়াও দেখিল না। সেদিন ললিতের শরীর খুবই খারাপ ছিল, মনও