পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఆశి& বিষ্ঠীধিকার তাদের সঙ্কোচ নেই । জেলখানায় যাওয়ার মধ্য দিয়ে তাদের শিক্ষা পাক হ’য়ে উঠতে থাকে। আমেরিকায় যেমন শুনতে পাই ছোটো ছোটো ব্যবসাকে গিলে ফেলে বড় বড় ব্যবসা দানবাকার ক’য়ে ওঠে, তেমূনি করে’ই দুৰ্ব্বল রায়তের ছোটে। ছোটো জমি ছলে বলে কৌশলে আত্মসাৎ করে” প্রবল রায়ৎ ক্রমেই জমিদার হয়ে উঠতে থাকে। এরা প্রথম অবস্থায় নিজে জমি চাষ করেছে, নিজের গোরুর গাড়ীতে মাল তুলে হাটে বেচে এসেছে, স্বাভাবিক চতুরতা ছাড়া অস্ত চাষীর সঙ্গে এদের কোনো প্রভেদ ছিল না। কিন্তু যেমূনি জমির পরিপি বাড়তে থাকে, অমুনি হাতের লাঙল থলে গিয়ে গদার আবির্ভাব হয় । পেটের প্রতাস্ত-সীমা প্রসারিত হতে থাকে, পিঠের দিকে লাগে তাকিয়া, মুলুকের মিথ্যা মকদ্দমা পরিচালনার কাজে পসার জমে, আর তার দাবরাব-তর্জন-গর্জন-শাসন শোষণের সীমা থাকে না । বড়ো বড়ো জালের ফাক বড়ো, ছোট মাছ তার ভিতর দিয়ে পালাবার পথ . পায় ; কিন্তু ছোটো ছোটো জালে চুনোপুটি সমস্তই কাক পড়ে—এই চুনোপুটির ঝণক নিয়েই রায়ৎ । একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, প্রতিকূল আইনটাকেই নিজের করে নেওয়াই মকদ্দমার জুজুৎস্ব খেলা। আইনের যে-আঘাত মারতে আসে, সেই আঘাতের দ্বারাই উলুটিয়ে মারা ওকালতী-কুস্তির মারাত্মক প্যাচ। এই কাজে বড় বড় পালোয়ান নিযুক্ত আছে। অতএব রায়ত যতদিন বুদ্ধি ও অর্থের তহবিলে সম্পন্ন হয়ে না ওঠে, ততদিক "উচল’ আইনও তাঁর পক্ষে “অগাধ জলে পড়বার উপায় হবে। একথা বলতে ইচ্ছা করে না, শুনতেও ভালো লাগে না যে, জমি সম্বন্ধে রায়তের স্বাধীন ব্যবহারে বাধা দেওয়া কৰ্ত্তব্য । একদিক থেকে দেখতে গেলে ষোলো আন স্বাধীনতার মধ্যে আত্ম অপকারের স্বাধীনতাও আছে। কিন্তু তত বড় স্বাধীনতার অধিকার তারই, যার শিশু-বুদ্ধি নয়। যে-রাস্তায় সৰ্ব্বদা মোটর-চলাচল হয়, সে-রাস্তায় সাবালক মানুষকে চলুতে বাধা দিলে সেটাকে বলা যায় জুলুম-কিন্তু অত:স্ত নাবালককে যদি কোনো বাধা না দিই, তবে তাকে বলে অবিবেচনা । আমার যেটুকু অভিজ্ঞতা তাতে বলতে পারি, আমাদের দেশে মূঢ় রায়তদের জমি অবাধে হস্তান্তর কবৃবীর অধিকার দেওরা আত্মহত্যার অধিকার দেওয়া। এক সময়ে সেই অধিকার তাদের দিতেই হবে, কিন্তু এখন দিলে কি সেই অধিকারের কিছু বাকী থাকবে ? আমি জানি, জমিদার নিৰ্ব্বোধ নয়। তাই রায়তের যেখানে কিছু বাধা আছে, জমিদারের আয়ের জলে সেখানে মাছ বেশী আটক পড়ে। আমাদের দেশে মেয়ের বিবাহের সীমা সঙ্কীর্ণ, সেই বাধাটাই বরপক্ষের আয়ের উপায় । এও তেমনি, কিন্তু দেখতে দেখতে চাষীর জমি সরে সরে মহাজনের হাতে পড়লে আখেরে জমিদারের লোক্সান আছে বলে’ আনন্দ করবার কোনো হেতু নেই । চাষীর পক্ষে জমিদারের মুষ্টির চেয়ে মহাজনের মুষ্টি অনেক যেশী কড়া,—যদি তাও ন মানে এটা মানতে হযে, সেটা আরেকটা উপরি মুষ্টি । রায়তের জমিতে জমাবৃদ্ধি হওয়া উচিত নয়, একথা খুব সত্য। রাজসরকারের সঙ্গে দেনা-পাওনায় জমিদারের রাজস্ব বৃদ্ধি নেই, অথচ রায়তের স্থিতিস্থাপক জমায় কম সেমিকোলন চলবে, কোথাও বাড়ি পড়বে না, এটা স্যায়বিরুদ্ধ। তা ছাড়া এই ব্যবস্থাটা স্বাভাবিক উৎসাহে জমির উন্নতি-সাধন সম্বন্ধে একটা মস্ত বাধা ; স্বতরাং কেবল চাঘী নয়, সমস্ত দেশের পক্ষে এটাতে অকল্যাণ। তা ছাড়া গাছকাট, বাসস্থান পাক করা, পুষ্করিণী খনন প্রভৃতি অন্তরায়গুলো কোনো মতেই সমর্থন করা চলে না। কিন্তু এসব গেল খুচরো কথা। আসল কথা, যে-মানুষ নিজেকে প্রবাসী-শ্রাবণ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড বঁাচাতে জানে না, কোনো আইন তাকে বাচাতে পারে না। নিজেকে এই যে বাচাবার শক্তি, তা জীবন-যাত্রার সমগ্রতার মধ্যে, কোনো একটা খাপছাড়া প্রণালীতে নয় । তা বিশেষ আইনে নয়, চরকায় নয়, খন্দরে নয়, কন্‌গ্রেসে ভোট দেবার চার-কানা-ক্ৰীত অধিকারে নয়। পল্লীর মধ্যে সমগ্রভাবে প্রাণ সঞ্চার হলে তবেই সেই প্রাণের সম্পূর্ণত নিজেকে প্রতিনিয়ত রক্ষা করবার শক্তি নিজের ভিতর থেকেই উদ্ভাবন করতে পারবে। কেমন করে সেটা হবে ? নেই তত্ত্বটাই কাজে ও কথায় কিছুকাল থেকে ভাবছি। ভাল জবাব দিয়ে যেতে পারব কি না জানিনে—জবাব তৈরী হ’য়ে উঠতে সময় লাগে। তবু আমি পারি বা না পারি এই মোট জবাবটাই খুঁজে বের করতে হবে। সমস্ত খুচরো প্রশ্নের সমাধান এরই মধ্যে, নইলে তালি দিতে দিতে দিন বয়ে যাবে ; যার জন্তে এত জোড়াতাড়া, সে তত কাল পর্য্যস্ত টিক বে কি না সন্দেহ । ( সবুজপত্র, আযাঢ় ১৩৩৩ ) শ্ৰী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর “ভিক্ষা” বাংলা দেশের পল্লীগ্রামে যখন ছিলাম সেখানে এক সপ্ল্যাসিনী আমাকে শ্রদ্ধ করতেন । তিনি কুটার-নিৰ্ম্মাণের জন্য আমার কাছে ভূমি ভিক্ষ নিয়েছিলেনু—সেই ভূমি থেকে যে-ফসল উৎপন্ন হত তাই দিয়ে তার আহার চল ত—এবং দুই-চারিটি অনাথ শিশুদের পালন করতেন । তার মাতা ছিলেন সংসারে—র্তার মাতার অবস্থাও ছিল সচ্ছল-কথাকে ঘরে ফিরিয়ে নেবার জন্তে তিনি অনেক চেষ্টা কবৃছিলেন, কিন্তু কথা সম্মত হননি । তিনি আমাকে বলেছিলেন. নিজের ঘরের অন্নে আত্মাভিমান জন্মে—মন থেকে এই ভ্রম কিছুতে যুচতে চায় না যে, এই অল্পের মালেক আমিই, আমাকে আমিই খাওয়াচ্ছি। কিন্তু দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে যে-অন্ন পাই সে-অম্ল ভগবানের—তিনি সকল মানুষের হাত দিয়ে সেই অল্প আমাকে দেন, তার উপরে আমার নিজের দাবী নেই, র্তার দয়ার উপর ভরসা । বাংলা দেশকে বাংলা ভাষার তিতর চিরজীবন আমি সেবা করেচি, আমার পয়ষট্টি বৎসর বয়সের মধ্যে অস্তুতঃ ৫৫ বৎসর আমি সাহিত্যের সাধন করে সরস্বতীর কাছ থেকে যা-কিছু বর লাভ করেচি সমস্তই বাংলা দেশের ভাণ্ডারে জমা করে দিয়েচি । এইজন্য বাংলা দেশের কাছ থেকে আমি যতটুকৃ স্নেহ ও সন্মান লাভ করেচি তার উপরে আমার নিজের দাবী আছে—বাংলা দেশ যদি কৃপণতা করে, যদি আমাকে আমার প্রাপ্য না দেয় তাহলে অভিমান করে আমি বলতে পারি যে, আমার কাছে বাংলা দেশ ঋণ রয়ে গেল । কিন্তু বাংলার বাইরে বা বিদেশে বে-সমাদর বে-ঐতি লাভ করি, তার উপরে আমার আল্লাভিমানের দাবী নেই। এইজন্য এই দানকেই ভগবানের দান বলে’ আমি গ্রহণ করি । তিনি আমাকে দয়া করেন, নতুবা অপরের আমাকে দয়া করেন এমন কোনো হেতু নেই। ভগবানের এই দানে মন নম্র হয়, এতে অহঙ্কার জন্মে না। আমরা নিজের পকেটের চার আনার পয়সা নিয়েও গৰ্ব্ব করতে পারি, কিন্তু ভগবান আকাশ ভরে যে সোনার আলো ঢেলে দিয়েচেন,কোনকালেই যার মূল্য শোধ করতে পারব না সেই আলোর অধিকার নিয়ে কেবল আনন্দই করতে পারি কিন্তু গৰ্ব্ব করতে পারিনে। পরের দত্ত সমাদরও সেইরকম অমূল্য—সেই দান আমি নম্র শিরেই গ্রহণ করি, উদ্ধত শিরে নয় । এই সমাদরে জামি বাংলা দেশের সপ্তান বলে’ উপলব্ধি করুবার স্থযোগ