পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Q38b ভেবেছি তা বলছি। তুমি সেই দর্জিমেয়েটির কথা জান—সে যক্ষ্মারোগে কষ্ট পাচ্ছিল। এই ব্যারামের বিরুদ্ধে সে লড়তে ক্রটি করেনি—পাছে আর কেউ তার ছোয়াচ লেগে এই ব্যারাম ধরিয়ে বসে এই ভয়ে সে সৰ্ব্বদা ভয়ানক সাবধানে থাকৃত । তার একমাত্র ছেলেকে সে এই ব্যারাম থেকে বাচাতে কত চেষ্টা করেছে। সে আমাদের একদিন বললে যে, একদিন রাস্তায় হঠাৎ তার বিষম কাশি পায় ; সে সস্তপণে রাস্তার একপাশে দাড়িয়েছিল এমন সময় একটা গুণ্ডাগোছের লোক তার কাছে গিয়ে তাকে গাল দিয়ে বললে যে, তার অত সাবধানে থাকার দরকার কি ? সে বলেছিল, ‘আমারও যক্ষ্মী আছে। ডাক্তার আমাকে সাবধান হ’তে বলে, কিন্তু আমি সাবধান হ’ব কেন ? আমি স্ববিধা পেলেই লোকের মুখের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে কাশি, যেন তারাও ব্যারামে পড়ে শীগিগর স্বৰ্গরাজ্য দেখতে পায়। অন্তলোকে আমাদের চাইতে মুখে থাকবে কেন ? সে আর কিছু না ব’লে চলে যায়। কিন্তু দুর্ভাগ মেয়েটি এত ভয় পেয়েছিল যে, সমস্ত দিন সে জরে ভুগতে থাকে। মেয়েটি বলেছিল, যে, লোকট শতচ্ছিন্ন বস্ত্র প’রে থাকলেও দেখতে লম্বা ও স্বন্দর। তার মুখটা ঠিক স্পষ্ট মনে পড়ছিল না বটে, কিন্তু সমস্ত দিন ধরে সে দেখেছিল দুটো ভীষণ জলঙ্গলে হলদে চোখ তার দিকে চেয়ে আছে। তার ভয়ের সবচাইতে বেশী কারণ ছিল যে, লোকটা মাজুল ছিল না, আর তাকে পাগল ব’লেও বোধ হয়নি। তার কথায় বার্তায় বোধ হয়েছিল যেন সমস্ত মানুষজাতটার ওপর তার ভীষণ ঘৃণা ! “লোকটার বর্ণনা শুনে সিস্টার ঈডিথ তাকে তৎক্ষণাৎ ডেভিড হলম্ ব'লে চিনে নিলে, কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে, সে তার হয়ে তার নিৰ্দ্দোষিত প্রমাণ করতে লাগল। সে মেয়েটিকে বোঝাতে চেষ্টা করলে যে, সে শুধু ভয় দেথিয়েছে, আসলে তার মতলব খারাপ নয়। সে বললে, “ত ছাড়। অমন একজন সবল স্বস্থ লোকের যক্ষ্মা আছে এ কখনই সম্ভব নয়। তোমাকে এমন ক’রে ভয় দেখিয়ে আমোদ করাটা তার খুবই অন্যায় হয়েছে, কিন্তু তার যক্ষ্মা প্রবাসী—শ্রোবণ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড থাকৃলেও লোককে অকারণে ব্যারামের ছোয়াচ লাগিয়ে দেবার মত রাক্ষস সে নিশ্চয়ই নয়। “আমরা প্রতিবাদ ক’রে বলেছিলাম আমরা বিশ্বাস করি যে, লোকটা এত ভয়ানক যে সে যা বলেছে তা করতে একটুও দ্বিধা করবে না। সিস্টার ঈডিথ আরো বেশী জোর দিয়ে তার পক্ষে কথা বলতে লাগল এবং আমরা তাকে এত জঘন্য চরিত্রের লোক ভাবছি দেখে আমাদের ওপর একটু বিরক্তও হ’ল।” নিশ্চল জর্জের ভাব দেখিয়া বুঝা গেল যে, সে আশেপাশের সমস্ত ঘটনাই দেখিতেছে। সে নত হইয় তাহার সঙ্গীর মুখের দিকে চাহিয়া বলিল, “ডেভিড, আমার মনে হয় এই মেয়েটির কথাই ঠিক, যে মেয়েটি তোমার বিরুদ্ধে এই অপবাদ অবিশ্বাস ক’রে তর্ক করেছে সে নিশ্চয়ই তোমাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে।” সিস্টার মেরী বলিলেন, “গুস্তাভসন, হয়ত সিস্টার ঈ ডথের এ ব্যবহার শুদ্ধমাত্র দয়া-প্রণোদিত এবং তার ছুদিন পরের ঘটনাটাও হয়ত তাই। সে-দিন সন্ধ্যাবেলায় সিস্টার ঈডিথ নিতান্ত বিমৰ্ষভাবে বাড়ী ফিরে এল— তার কৰ্ত্তব্যের পথে অজস্র বিঘ্ন দেখে সে হতাশ হ’য়ে পড়েছিল এমন সময় ডেভিড হলম এসে তার সঙ্গে কথা বলতে লাগল। সে নানারকমের ঠাট্টা ক’রে বললে যে, এবার থেকে সিস্টার ঈডিথ শাস্তিতে নিরুপদ্রবে থাকৃতে পারবে কারণ এই সহর ছেড়ে সে চলে যাচ্ছে । “আমি ভেবেছিলাম, এই সংবাদে সিস্টার ঈডিথ স্বর্থী হবে, কিন্তু তার উত্তর শুনে বুঝলাম যে সে ভারী দুঃখিত হয়েছে। সে সহজ ভাবে বললে, ডেভিড সহরে থাকৃলে সে স্বধীই হবে; তাতে ক’রে তাকে সৎপথে আনবার জন্তে সে আরো কিছুদিন চেষ্টা করতে পারবে । “ডেভিড হল বললে যে, সে এজন্যে দুঃখিত ; কিন্তু এখানে আর সে কোনো রকমে থাকৃতে পারে ন—সে একটা লোকের খোজে-স্কুইডেন যাচ্ছে ; লোকটাকে তার চাই-ই ; তাকে না পেলে তার শান্তি নেই।” “সিস্টার ঈডিথ এমন আগ্রহের সঙ্গে এই লোকটার খবর জিজ্ঞেস করলে যে, আমি সিস্টার ঈডিথের কানে কানে বলতে গেলাম যে ওই জঘন্য পশুটার কথায় আমন