পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] মহিলা-মজলিস—এলেন কেই や2"。 মানসিক পটভূমিকাটি আমার নিকট সত্য হইয়৷ छेळेिल । ষ্টকহলমের ঐতিহাসিক চিত্রশালায় বক্ততা দিবার জন্য প্রস্তুত হইতেছিলাম এমন সময় ডাকে একটি পরিচিত ছাদের হস্তাক্ষরের চিঠি পাইলাম। এলেন কেই, ট্রেন, গাড়ী বদলানো প্রভৃতি বিষয়ে সবিশেষ জ্ঞাতব্য তথ্য দিয়া আমাকে তাহার আলভাষ্ট্রার গৃহে নিমন্ত্ৰণ করিয়া একটি সুন্দর চিঠি লিখিয়াছেন। স্থানটি বিশেষ স্থপরিচিত নয়, সুতরাং গন্তব্য স্থান পার হইয়া চলিয়া যাওয়া কিম্বা ভুল পথে গিয়া পড়া সম্বন্ধে আমাকে বিশেষ সতর্ক থাকিতে হইবে । আমি ভোরবেলা ষ্টকহলম ছাড়িয়া বাহির হইলাম এবং কাটেনহলম জংশনে ট্রেন বদলাইয়৷ বিকালে আলভাষ্ট্রায় পৌছিলাম। কিন্তু পৌছিবার পূর্বেই আগের ষ্টেশনে এক ভদ্রলোক গাড়ীতে উঠিয়া আমার নিকট আসিয়া উপস্থিত হইলেন । তিনি ভদ্রভাবে জিজ্ঞাসা করিলেন যে, এলেন কেইর সহিত সাক্ষাৎ করিতে যে হিন্দু ভদ্রলোক আসিতেছেন আমিই তিনি কি না । এইভাবে আমাকে চিনিয়া লইয়া তিনি বলিলেন যে, আমি পাছে ষ্টেশন না চিনিতে পারি এই ভয়ে ভদ্র মহিলা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হইয়াছেন এবং আমাকে আমার ভারতীয় ধ্যান-প্রবণতা হইতে জাগাইয়া তুলিবার জন্ত ভদ্রলোকটিকে পাঠাইয়া দিয়াছেন । আমরা দুইজনেই খুব হাসিলাম, কারণ আমাকে ঠিক তাহার কল্পিত আত্মসমাহিত যোগীর মত দেখাইতেছিল না। আলভাষ্ট্রায় ট্রেন থামিল ; আমি আমার নাতিক্ষুদ্র বাক্সটি লইয় গাড়ী হইতে নামিতেছি এমন সময় আশ্চৰ্য্য হইয়া দেখি একজন বৃদ্ধ ভদ্রমহিলা হাত বাড়াইয়া আমার ব্যাগ নামাইতে সাহায্য করিতে আসিতেছেন। আমি ব্যাগট ফেলিয়া একটু ইতস্তত করিতে লাগিলাম। তিনি তৎক্ষণাৎ আমার হাত ধরিয়া হাসিয়া বলিলেন, “আসুন, নাগ মহাশয় । আমিই এলেন কেই। আপনি ষ্টকূহলমে আমার চিঠি পাইয়াছিলেন কি ?” আমি ধন্যবাদ ও কথার উত্তর দিবার চেষ্টা করিয়া দুই চারিটা কথা বলিলাম, কিন্তু আমার সমস্ত মন তখন সেই মূৰ্ত্তি দর্শনে নিবিষ্ট হইয়া পড়িয়াছে ; মাঝারি রকম লম্বা একটি মহিলা, সমস্ত চুল সাদা ( বয়স ৭৩ বৎসর ) কিন্তু মাস্থ্যটি একেবারে খাড়া ; কৃষকরমণীর মত সাদাসিধা পোষাকের সরল মহিমায় মণ্ডিত, কিন্তু চক্ষু দুটি বুদ্ধি ও করুণার দুল্লভ প্রভায় উদ্ভাসিত—ইনি এলেন কেই ! এ যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ, চিন্তাশীলা রমণী ?... "নাগ মহাশয়, এই মাঠটা পার হইয়। তবে আমরা আমার কুটিরে পৌছিব।” এই বলিয়া স্মিতহাস্যে তিনি আমার ধ্যান ভঙ্গ করিয়া দিলেন ; আমরা পাশাপাশি চলিলাম। র্তাহার পদক্ষেপ কি আশ্চৰ্য্য জোরালো ! যেন ৭৩ বৎসর বয়সটা তাহার । কাছে বয়সই নয়। তিনি আমাকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন: করিয়া চলিয়াছেন,—স্কাণ্ডিনেভিয়া আমার কেমন লাগিল,. ফ্রান্সস্থ আমাদের উভয়ের বন্ধু র লা মহোদয়, মাদাম কুপি এবং আর সকলের খবরাখবর কি। আমরা ভ্যাটার্ণ হ্রদের তীরে আসিয়া পৌছিলাম, তীরের উপরেই একটি সাদাসিধা সুরম্য দুতলা সাদা বাড়ী—তাহার ছোট সদর, W3|5II{ ^jtC{I (al-qi Memento Wewore | বাড়ীতে ঢুকিয়াই তিনি আমাকে খানিক বিশ্রাম, লইতে বাধা করিলেন ; নিজে এদিকে আমাদের বৈকালিক চায়ের আয়োজনে লাগিয়া গেলেন। তিনি যেন কৰ্ম্মনিষ্ঠার প্রতিমূৰ্ত্তি। তাহার ঘরে দাস-দাগী নাই। একটি দরিদ্র অনাথ বালিকাকে তিনি পোষ্য লইয়াছিলেন। সে তাহারই সঙ্গে থাকে এবং অতিথি অভ্যাগত আসিলে ঘরকরণার কাজে তাহার সাহায্য করে। গুহকত্রী এলেন কেই অতিথি-সেবায় একেবারে মগ্ন। কয়েক । মুহূৰ্ত্তের মধ্যেই তিনি আমার প্রতি এমন ব্যবহার করিতে লাগিলেন যেন আমি শিশু । মনে হইল তিনি যেন একেবারে ঠাকুরমা হইয়াই জন্মিয়াছিলেন, তাই বোধ হয় তিনি মধ্যপথের মাতৃত্বের পরীক্ষাটা বাদ দিয়া একেবারে দুই ধাপ ডিঙ্গাইয়া নারী-জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ পদবীতে আরোহণ করিয়াছেন ! কি সহজেই তিনি মানুষকে কাছে টানিয়া লন ! তাহার কণ্ঠস্বরে যেন যাদুমন্ত্র আছে।. বক্তারূপে হাজার হাজার মানুষকে তিনি মন্ত্রমুগ্ধ করিয়া, রাখিতেন। বিশ্রস্তালাপে তাহার দোসর মেলা শক্ত । তিনি আমাকে তাহার পাঠাগারে লইয়া গেলেন।.