পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যi"] , হয়ে বললে—“মোটের উপর দেখবেন গরীবের যেন -কোনো অনিষ্ট না হয়।” মোক্তার-বাবু পূর্ববং বললেন“মোকদ্দমার ডাক হ’লেই দেখতে পাবিখন। ঐ হাবা গঙ্গারাম, নাদাপেট ঘাটরাম ডেপুটীর কাছ থেকে তিন তুড়িতে যদি তোর ভাইকে ছুটিয়ে নিয়ে না আসতে পারি তবে আমি মধু মোক্তার মাছকোটা বঁটা দিয়ে নিজ হাতে নিজের কান কেটে ফেলব আর তিন সত্তে একুশ বার তোর দুই ঠ্যাংয়ের নীচ দিয়ে একবার যাব ওদিকে আবার আস্ব এদিকে। বুঝলি ? একথা শোনার পর ভাইয়ের মুক্তিলাভ সম্বন্ধে ফটিকের মনে আর কোনো সন্দেহই থাকুল না। মোক্তার-বাবুকে নমস্কার ক’রে সে বললে—“এখন তা হ’লে আমি কাছারীর সামনে বটগাছ-তলায় গিয়ে বসে থাকি। মোকদম উঠলেই আপনাকে ডেকে নিয়ে যাব।” “বেশ, খুব হুশিয়ার হয়ে বসে থাকৃবি” ব’লে মোক্তার-বাবু জান্‌লা থেকে গলা টান দিলেন। ૨ ফটিকের ভাইয়ের মামলা যথাসময়ে উঠল। প্রাণপণে বৈধ-অবৈধ সঙ্গত-অসঙ্গত প্রভৃতি নানা রকমের জেরা করেও মোক্তার-বাৰু পুলিশ-শেখান সাক্ষীদের একজনকেও বাগাতে পারলেন না। ইংরেজী-বাংলায় মিশিয়ে কাজ-কঁদে স্বরে বস্তৃতাও ঢের করলেন, কিন্তু ঘটরাম ডেপুটীর মন কিছুতেই ভিজল না। কাটাল চুরির অপরাধে ফটিকের ভাইয়ের পচিশ ঘা বেতের হুকুম হ’য়ে গেল। শুনে ফটিক হাহাকার ক’রে উঠল । ছ’ জন খোট্টা কনষ্ট্রেবল যখন দু হাত ধ’রে ফটিকের ভাইকে কাঠগড়া থেকে নামিয়ে নিয়ে গেল, মোক্তারবাবুও তখন ধীরে-ধীরে কাছারীর বারান্দায় এসে দাড়ালেন। তাকে দেখেই ফটিক কেঁদে বললে—“মোক্তারবাবু, আপনার মনে এই ছিল—আমাকে একেবারে ধনেপ্রাণে মারলেন ? এতগুলো টাকা খেয়ে শেষে কিনা দেওয়ালেন পচিশ ঘা বেতের হুকুম ! দুধের ছেলে পচিশ ঘা বেত খেলে কি আর বঁাচবে ?" ফটিক আর কথা বলতে পারলে না, তার চোখ দিয়ে ঝরঝর ক’রে জল পড়তে লাগল। মোক্তার-বাবু গম্ভীরভাবে বললেন—“দ্যাথ ফটুকে, এটা রাজ-কাছারী—তোর ভেউ ভেউ ক’রে কঁদিবার জায়গা নয়। বেশী শোক উথলে উঠে থাকে ত বাড়ী গিয়ে ঘরে দরজা বন্ধ ক’রে যত ইচ্ছা কাদ– কেউ বাধা দেবে না। আচ্ছা, বেতের হুকুম হওয়াতে তোর ক্ষতিটা কি হ’ল শুনি ? বেত না হ’য়ে যদি জেল হ’ত, তা হ’লেও নিদেন পক্ষে ছ মাসের ধাক্কা । জেলের খাটুনি-জানিসইত হাড় জল হয়ে যায় একেবারে। হাড় খড়িবাঞ্জ । ভাঙ্গা খাটুনির কথা ছেড়ে দিলেও জেলেই কি বিপদ কম । আজ ময়দা ভাঙা, কাল ঘানি টানা, পরশু সুরকী কোটা-- এই ভাবের রকম-বেরকমের খাটুনি নিত্যি তিরিশ দিন লেগেই আছে। তার পরে বেত ত সেখানে কথায় কথায় । তাই আমি বলি, এসবের সঙ্গে তুলনায় বেত ঢের ভাল। নগদ কারবার-কোনো বন্ধটি নেই, যখনকার কাজ তখন হ’য়ে গেল, ব্যাস। শাস্তিটা হ’য়ে গেলে ভাইকে সঙ্গে ক’রে বাড়ী নিয়ে যা—তখন কেউ তোকে আটকাবে না। তার পরে, এমন যদি অমুখ-বিসুখই হয়, ডাক্তার দেখালেই পারবি।” ফটিক কেঁদে বললে--"পচিশ ঘা বেত খাওয়ার পর ওকে কি আর জীয়ন্ত বাড়ী নিয়ে যেতে পারব, মোক্তারবাবু ?” মোক্তার-বাবু বললেন—“তোর আধিখ্যেতা দেখে গায়ে জাল ধরে একেবারে। বাইশ বছরের ডবকা ছেলে সামান্ত কয়েক ঘা বেত খেলেই একেবারে মারে - ভেসে যাবে ! যত সব অনাছিষ্টির কথা ! বেত ধেন আর কারো হয় না—তোর ভাইয়েরই এই নতুন হচ্ছে ! আরে মুখখু, বেত খেলেই যদি মানুষ ম’রে যেত, তাহলে সরকার বাহাদুর আর খুনী আসামীর জন্তে আলাদা ক’রে ফাসীর ব্যবস্থা করতেন না -বেত মেরেই তাদের দফা নিকেশ করিয়ে দিতেন। এরকম হ’লে ফাসীটা উঠেই যেত। কিন্তু বুঝলি, আদতে তা নয়, ফাসীও রয়েছে—তার পাশাপাশি বেতও চলছে। “ কাজেণ কাজেই এথেকে বুঝতে হবে যে, বেত মারলে মানুষ কথখনে মরে না। মানুষকে সত্যি-সত্যি মারতে হ’লে ফাসী দেওয়াই দরকার। কথাটা বুঝতে পারলি ?” ফটিক একটা কথা বললে না। মোক্তার-বাবু জাবার বললেন, “আর শোন—এখানে দাড়িয়ে অমন ক’রে চেচাসনে। আজকালকার আইন খারাপ। ডেপুটীযদি তোকে চোরের ভাই ব’লে চিনতে পারে,তাহ’লে তোরও যে বেতের হুকুম না দেবে তাই বা কেমন ক’রে বলব ? তার পরে, এ ডেপুটি বেটাও তেমন স্থবিধের লোক নয়।” শেষের কথা কয়েকটি শুনে ফটকের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল। তার গলার স্বর একেবারে নরম হ’য়ে গেল। ফিসফিস্ ক’রে বললে—“আমি না হয় এখান থেকে স’রেই যাচ্ছি, কিন্তু মোক্তার-বাবু এর কি কোনো প্রতিকার নেই ? বেতের হুকুমটা কি কোনো রকমেই রদ করিয়ে দেওয়াতে পারেন না ?” মোক্তার-বাবু বললেন—“ত খুব পারি। তাহ’লে কিন্তু জেলের হুকুম হ’য়ে যাবে।” গলার আওয়াঙ্গ আরও একটু নামিয়ে ফটিক বললে—“জারে সর্বনাশ ! তা বলছি না আমি। একেবারেই কিছু না হয় এমন কি করা যায় না ?” সগৰ্ব্বে মোক্তার-বাৰু বললেন—“তাও যায়। আমি