পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

س٩bوك\ মধু মোক্তার না পারি কি ? কিন্তু সে করার রুধির জোগায় কে ? নগদ দু’শখানি টাকা ঝাড়, দ্যাখ এখনই বেকসুর খালাসের হুকুম দিইয়ে দিচ্ছি।” শুনে ফটিকের চোখে আশা আর কাকুতি দুই-ই একসঙ্গে ফুটে উঠল। বিনীতস্বরে সে বললে—“কিছু কম নেন, মোক্তার-বাবু-দ্যান আমার এই উপকারটুকু ক’রে, চিরকাল আপনার কেনা হ’য়ে রইব ।” মোক্তার-বাবু বললেন, “আচ্ছা, তুমি আমার পুরাণে মক্কেল। ন দিলে দুশ–দেড়শ টাকা দাও, আন টাকা ।” কাতরভাবে ফটিক বললে—“কাজটা ক’রে দিন–টাকায় আটকাবে না। যত শিগগির পারি টাকাট। আমি দিয়ে দেব।” - মোক্তার-বাবু বললেন—“সে হ’বে না বাবা—আমার কাছে ‘নগদ কড়ি চাক দ’বাড়ী’ । এখন একটা বেজেছে । বেত হবে ৪টার পরে। এখনও যদি হাওলাত বরাত করে’ টাকা সংগ্রহ ক’রে এনে দিতে পার, তবে একবার শেষ চেষ্টা ক’রে দেখতে পারি।” -

  • আচ্ছ, দেখি চেষ্টা করে”, ব’লে ফটিক মাথা চুলকাতেচুলকাতে টাকার সন্ধানে চলে গেল।

\> ক্লাস্ত দেহে, আশান্বিত হৃদয়ে ফটিক যখন টাকা নিয়ে ফিরে আসল বেলা তখন তিনটে । টাকা পেয়ে মহাখুলী হয়ে মোক্তার-বাবু বললেন—“তুই এখন নিশ্চিন্ত হয়ে বাড়ী চলে যা । আধঘণ্টার মধ্যেই আসামী বেকুসর খালাস পেয়ে যাবে।” এর পরে ব্যাপার গিয়ে কি দাড়ায় তা না দেখে ফটিকের বাড়ী চলে যাবার ইচ্ছা আদেী ছিল না। তাই সে বললে—“এক বাড়ী যেতে মন সৰ্বছে না। ভাইটাকে নিয়ে একেবারে এক সঙ্গেই যা’ব । ততক্ষণ আমি মহাফেজ-খানার বারান্দায় ব’সে বিশ্রাম করিগে।” “তবে তাই যা” বলে মোক্তার-বাবু যেখানে বটগাছতলায় খোট্ট কনষ্টেবল দু’জন ফটকের ভাইকে নিয়ে বসেছিল, ধীরে ধীরে সেখানে গিয়ে হাজির হলেন । কনষ্ট্রেবলদের একজন গুন গুন ক’রে তুলসীদাসের দোহা আওড়াচ্ছিল, অন্ত জন আসামীর হাতকড়ার মধ্য দিয়া দেওয়া একগাছা মোট দড়ি ধ’রে বসে ব’সে ঝিমাচ্ছিল। যে-লোকটা দোহা আওড়াচ্ছিল মোক্তার-বাৰু আস্তেঅস্তে গিয়ে তারি পাশে একখানা ইটের উপর ব’সে মৃদুস্বরে বললেন—“পাড়েজী, আপনার কাছে একটা আবৃজী পেশ করতে এলুম।" চোখ রাঙ্গা ক’রে কনষ্টেবল রুক্ষস্বরে বললে—“হম পাড়ে হ্যায় নেই—হাম মিশির অাছে।” তিলমাত্রও অপ্রতিভ না হ’য়ে মোক্তারবাবু বললেন—“আর চটেন কেন ? একটা হ’লেই হ’ল— প্রবাসী— শ্রোবণ, OOHO [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড মিশিরও বামন, পাড়েও তাই। এখন কথাটা হ’ল কি, যদি ইচ্ছা করেন তবে মোটা কিছু পাইয়ে দিত্তে পারি কিন্তু ।” টাকার কথা শুনে মিশিরের পুরু ঠোঁট দু’খানা ফুড়ে খইনি-টেপা তিনটে সাদা দাত এক মুহুর্তের জন্যে ফুটে উঠে আবার অদৃপ্ত হয়ে গেল। কোনো জবাব না দিয়ে সে অর্থপূর্ণদৃষ্টিতে একবার তার সঙ্গীটির পানে তাকাল মাত্র । মোক্তার-বাবু বললেন—“পাওনাট দুজনের সমানই হবে। এই মুহূৰ্বেই দু’খানা দশটাকার নোট আমি দু’জনকে দিয়ে দেব।” আটটাকা মাইনের কনেষ্টবল একসঙ্গে দশ টাকা পাওয়ার লোভ সাম্লাতে পারলে না—কান খাড়া করে। জিজ্ঞাসা করলে, “কেয়া বাবু সাব-আপ কেয়া বোলতা হ্যায় ?” যথাসম্ভব মোলায়েম স্বরে মোক্তার-বাৰু বললেন—“আপনাদের এই আসামী ছোকৃরা সারাদিন আজ কিছু খায়নি। দেখুন ওর মুখখান একেবারে শুকিয়ে এতটুকু হয়ে গ্যাছে। এর পরেও আবার ওর হবে বেত । সারা দিন উপোষের পর পচিশ ঘা বেত খেলে ছোকুর বঁাচে কি না বঁাচে তারও ঠিক নেই। মায়ের মাত্র ঐ একই ছেলে । দয়া ক’রে আধ ঘণ্টার জন্যে যদি ওকে আপনার ছেড়ে দেন তবে কিছু খাবার খেয়ে আসতে ওকে আমি বাজারে পাঠিয়ে দিই। অবিপ্তি আমি নিজে ওর জন্যে আপনাদের কাছে জামিন থাকুব ।” শুনে একজন কনষ্ট্রেবল বললে –“সে নাই হোবে বাবু সাব-আসামী ভাগেগা। হামলোক্কাভী ফ্যাসাদ হোনে শকৃত ।” মোক্তার-বাৰু হাত নেড়ে বললেন— “ভাগা অম্নি মুখের কথা ? ভেগে যাবেন কোথায় ? আজ ভাগেন কাল ধরা পড়বেন । এর নাম বাব ইংরেজের আমল। একেবারে যমের বাড়ী গিয়ে না ভাগ লে আর এর হাত থেকে রক্ষণ নেই। যদি ভালোয়ভালোয় ফিরে আসেন তবে বেত খেয়েই নিষ্কৃতি পাবেন, আর তা না হ’লে বুঝতেই ত পারছেন—বেত আর জেল দুই-ই অনিবাৰ্য্য। সে যাই হোক্—আমি বলছি ও কখখনো পালাতে পারবে না। আমি নিজে জামিন রইলুম। পালায় খুঁজে এনে দেব। খুনী আসামীর পর্য্যস্ত আমি জামিন হ’য়ে থাকি । আর এ-ত সাধারণ চোর।" কনষ্টেবলেরা ইতস্ততঃ কবৃতে লাগল। তাদের দ্বিধা দেখে মোক্তার-বাবু পকেট থেকে দুখানা চকচকে নতুন দশটাকার নোট বের ক’রে তাদের চোখের কাছে নাড়ী চাড়া করতে কবৃতে বললেন—“দেখুন বিবেচনা করে’— টাকার পরিমাণও একেবারে কম নয় আর পাচ্ছেনও অতি নিরাপদে । আধ ঘণ্টায় দশ টাকা পাওয়া বড় সোজা কথা নয়। অনেক বড়-বড় হাকিমেও পারে না ।"