পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

9 е е বলা বৃথা। আমাদের রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা লাভের প্রচেষ্টা যে ব্যাপকতর হয় না, তাহাতে যে নিম্নশ্রেণীর লোকেরাও যোগ দিয়া তাহাকে শক্তিশালী করিতে পারে না, তাহার একটা কারণ এই, যে, যাহাদিগকে সামাজিক ব্যবস্থা অবনত দলিত হীন সম্মানশূন্ত করিয়া রাখিয়াছে, তাহারা হঠাৎ মাতুসের মত ব্যবহার করিতে পারে না। যে-সকল কারণে মহাত্মা গান্ধী অস্পৃশ্বতা দূরীকরণকে অসহযোগ আন্দোলনের গঠনমূলক কাৰ্য্যাবলীর অঙ্গীভূত করিয়াছিলেন, তাহার মধ্যে ইহা একটি, তাহাতে সন্দেহ নাই । তিনি সমগ্র হিন্দু-সমাজকে ম্যুত্বের সামাজিক সম্মান ও মৰ্য্যাদা দিয়া সমগ্র সমাজকে রাজনৈতিক সম্মান ও মর্য্যাদা লাভে উদ্বোধিত করিতে চাহিয়াছিলেন । কুষ্ঠিয়াতে দেখ। গিয়াছে, কতকগুলি ধীবর তাহাদের সঙ্গের নারীরা দুৰ্ব্বত্তদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ায় তাহাদের রক্ষার জন্য না লড়িয়া পলায়ন করিসূছিল । তাহাদিগকে বা তদ্রুপ অবস্থায় অন্য কোনও পলায়নপর লোকদিগকে কাপুরুষ বলিয়। গালি দিয়া কোন লাভ নাই । তাহাদের কাপুরুষতার লঙ্গ আমাদেরই লজ। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থায় অধিকাংশ জাতির লোক মামুযের সম্মান পায় না, সুতরাং তাহার। পুরুষোচিত আচরণ না করিলে তাহদিগকে দোষ না দিয়া তাহীদের সামাজিক মঙ্গুষ্যোচিত মৰ্য্যাদা তাহাদিগকে প্রত্যপণ করিয়া তাহাদিগকে মানুষ হইবার সুযোগ দিতে হইবে । সামাজিক বা রাষ্ট্ৰীয় যেকোন কারণেই মাচুযের মাথা ষ্টেট ও শিরদাঁড়া বাকী হউক, সব স্থলেই তাহাদের ঐ নত অবস্থাটাই প্রায় স্বাভাবিক হইয়া দাড়ায়। যাহারা সমাজের উচ্চস্তরে প্রতিষ্ঠিত, তাহদের পৌরুষ ও সাহস কতটা আছে, তাহার বিচার করিব না। কিন্তু ইহা বুঝা কঠিন নহে, ধে, উন্নত ও অবনত, দণ্ডায়মান ও পদানত, উভয় প্রকার জাতিদের নিকট একই প্রকার পুরুষোচিত আচরণ অাশা করা অনুচিত । অতএব, হিন্দু মহাসভার কৰ্ত্তব্য, সমগ্র হিন্দুসমাজের সকল জাতিকে সামাজিক অসম্মান ও হীনতা হইতে মুক্ত করা এবং সকলকেই মামুয়ের মত মাকুম বলিয় গণ্য করা । সমগ্ৰ ভারতবর্যের হিসাবে মুসলমানের হিন্দুদের চেয়ে ংখ্যায় অনেক কম। অথচ তাহারা যে টিকিয়া আছে, তাঙ্গ কিসের জোরে ? সব কারণের উল্লেখ এখানে না করিয়৷ দু একটার উল্লেখ করিতেছি। হিন্দুদের চেয়ে মুসলমানদের মধ্যে সামাজিক সাম্য বেশী, সুতরাং ঐক্যও বেশী। অজ্ঞতম দরিদ্রতম মুসলমানের মাথাও সামাজিক ব্যবস্থায় হেঁট হয় না । মুসলমানরা যে র্তাহাদের মসজিদে একত্র অfরাধনা ও প্রার্থনা করেন, তাহাতে শৈশব হইতে অজ্ঞাতসারে তাহাদের মনে এই বিশ্বাস প্রবাসী—শ্ৰাবণ, ১৩৩৩ { ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড দৃঢ় হইতে থাকে, যে, তাহারা সবাই ঈশ্বরের কাছে সমান এবং তাহার দলবদ্ধ সেবক। অর্থাৎ এক-একা তাহার প্রত্যেকে যেমন ঈশ্বরের দাস, তেমনই সম্মিলিতভাবে ৪ তাহারা ঈশ্বরের দাস। হিন্দু সমাজেও এইরূপ সামাজিক সাম্য ও ঐক্য স্থাপন করা হিন্দু মহাসভার কৰ্ত্তব্য, যাহাতে কাহারও মাথা হেঁট হয় না, এবং কেহ দলিত হয় না। এবং ভগবানের সম্মিলিত আরাধনা প্রচলিত করাও কর্তব্য । প্রত্যেক জেলার সহর ও গ্রাম সকলে পূজা পাৰ্ব্বণ তিথি যোগ স্নান আদি উপলক্ষ্যে ধত মেলা ও মিছিল প্রভৃতি হয়, হিন্দু মহাসভার সেই সকলের স্থান ও তারিখযুক্ত তালিকা প্রস্বত করা উচিত । আমার নিজের জেলা বাকুড়ার যে বিবরণ-পুস্তক শযুক্ত রামায়ুজ কর লিখিয়াছেন, তাহাতে কতকটা এইরূপ একটি তালিকা আছে । সব জেলার জন্য সেইরূপ কিন্তু তদপেক্ষা সম্পূর্ণ তালিকা প্রস্তুত করিতে হইবে । তাহার পর প্রত্যেক জেলা মহকুমা নগর ব| গ্রামের শাখার সাহায্যে প্রত্যেক মেল মিছিল স্নান উপলক্ষ্যে স্ববন্দোবস্ত করিবার জন্য ও নারীর উপর অত্যাচার নিবারণ করিবার জন্য ব্রতীর দল গঠন করিতে হইবে । মেলা আদির তারিখের অনেক পূৰ্ব্ব হইতেই মহাসভার প্রধান কাৰ্য্যালয় শাপ। সভায় চিঠি লিথিয়া জানিবেন, যে, সেখানে যথেষ্ট ব্রতীদল আছেন কি না ; না থাকিলে অন্য স্থান হইতে ব্রতী পাঠাইবার বন্দোবস্ত করিতে হইবে । শুধু মেলা আদি উপলক্ষ্যে নারী-রক্ষার বন্দোবস্থ করিলেই চলিবে না, যদিও তাহার দ্বারাই সাক্ষাৎভাবে অনেক কাজ হইবে, এবং তাহার পরোক্ষ প্রভাবে অন্য সময়েও অনেক নারী নিরাপদ হইবেন । সকল সময়েই নারীদিগকে রক্ষা করিতে প্রস্থত কতকগুলি দলবদ্ধ সভ্য হিন্দু মহাসভার প্রত্যেক শাখা উপশাখা প্রশাখায় থাক! একান্ত আবশ্যক । হিন্দুদের কাপুরুষতার নিন্দ যিনি যতই করুন, নিস্ক্রিয় সাহসে, অর্থাং দুঃখ সহ করিবার ক্ষমতায়, অপরকে, আঘাত না করিয়া নিজে মৃত্যুর সম্মুখীন হইবার ক্ষমতায় হিন্দু অন্য কোন সম্প্রদায়ের লোক অপেক্ষ। হীন নহে । তা ছাড়া, সক্রিয় সাহস, যাহাকে বিক্রম বলা যাইতে পারে, তাহাও বিস্তর হিন্দুর আছে । আমরা অহিংসার নিন্দ করিতেছি না-অহিংসা পরম ধৰ্ম্ম । কিন্তু ইহার অপব্যবহারে বিস্তর হিন্দু নিবীৰ্য্য হইয়াছে। তাহার। অনেকে সাহস হারাইয়াছে। আবার যাহারা বাস্তবিক ভীরু নহে, অনভ্যাসবশতঃ আত্মরক্ষা বা দুৰ্ব্বলের বিপন্নের রক্ষার জন্যও অন্যকে আক্রমণ বা