পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] বিবিধ প্রসঙ্গ-নারী-নিৰ্য্যাতন সম্বন্ধে গবর্ণমেণ্টের কর্তব্য আঘাত করিবার নিমিত্ত তাহীদের হাত উঠে না। বস্তুতঃ সভ্যতা শিষ্টত খুব ভাল জিনিষ হইলেও, তাহার আতিশয্য ভাল নয়। অর্থাৎ সাধারণতঃ লড়াই করিতে উন্মুখ থাকা ভাল নয়, কিন্তু দুৰ্ব্বলের বিপন্নের রক্ষার জন্যও আবখ্যক হইলে কাহারও গায়ে হাত দিতে না-পারাটা সভ্যতা বা শিষ্টতা নহে, উহা আমাহুযতারই লক্ষণ । এইজন্য হিন্দু মহাসভা সাত্ত্বিকতাকে অবশুই সৰ্ব্বোচ্চ স্থান দিবেন, কিন্তু বিপন্নের সহায় হইবার জন্য ক্ষত্ৰি ধৰ্ম্ম অবলম্বন করিতে এবং তাহার জন্য প্রস্থত হইতেও সভ্যদিগকে উৎসাহিত করিবেন। - তাঞ্জিমের কর্তব্য আমরা মুসলমান নহি । সুতরাং তাঞ্জিমের কৰ্ত্তব্য কি, সে-বিষয়ে কিছু বলা আমাদের পক্ষে অনধিকার চর্চা মনে হইতে পারে। কিন্তু কতকগুলি কৰ্ত্তব্য আছে, যাহা সকল ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ের, সকল মামুষের সাধারণ কর্তব্য । তাঞ্চিমের অন্যতম উদ্দেশু মুসলমান সম্প্রদায়ের নৈতিক উন্নতি বলিয়৷ কথিত হইয়াছে। এইজন্য, এখন ধে-বিষয়টির আলোচনা করিতেছি, সেই উপলক্ষ্যে ইহা বলা অনধিকার চর্চা ইষ্টবে না, যে, ধৰ্ম্ম-সম্প্রদায়-নির্বিশেষে সকল বিপন্ন নারীকে অত্যাচার হইতে রক্ষণ করা যেমন হিন্দু-মহাসভার সভ্যদের ও অন্য সব হিন্দুদের কৰ্ত্তব্য, তেমনি ধৰ্ম্মসম্প্রদায়নিৰ্ব্বিশেষে সকল বিপন্ন স্ত্রীলোককে অত্যাচার হইতে রক্ষ। কং তাঞ্জিমের সকল সভ্যের ও অন্য মুসলমানদের কর্তব্য । এই কৰ্ত্তব্য কুঠিয়ার মাধু সেখ ও র্তাহার পুরের পালন করিয়াছেন । ইহার দ্বারা মুসলমান সমাজের গৌরব বৃদ্ধি হইয়াছে। হিন্দু মহাসভার কৰ্ত্তব্য সম্বন্ধে আমরা অপর সে-সব কথা বলিয়াছি, তাহার মপ্যে তাপ্লিমের উপযোগী অন্য কিছু থাকিলে মুসলমানের তাহ বিবেচনা করিয়া দেখিলে সখী হইব । নারী-নিৰ্য্যাতন সম্বন্ধে গবর্ণমেণ্টের কৰ্ত্তব্য এবিষয়ে আমরা আষাঢ়ের প্রবাসীতে ৭ ৪৪ পৃষ্ঠায় ধাহী লিখিয়াছি, তাহার উপর আর দু’একটি কথা বলিতে চাই । উহ লিখিবার পর সংবাদ আসিয়াছে, যে, কতিপয় শ্বেতকায় নারীর উপর আফ্রিকার কেন্যা দেশের আদিম নিবাসী কেহ কেহ বল-প্রয়োগ করায় তথাকার ইংরেজ গবর্ণর যে আইন আরও কড়া করিবেন বলিয়াছিলেন, তাহ। করা হইয়াছে। কোনও কৃষ্ণকায় ব্যক্তি কোন শ্বেতাঙ্গনাকে ধর্ষণ করিলে তাহার প্রাণদণ্ড হইতে পরিবে, এবং নৃনেকল্পে ● তিন বৎসরের জন্য কঠোর কারাদণ্ড হুইবে । বলাৎকারের চেষ্ট হইলে ঐরূপ অপরাধীর যাবজীবন করারোধ হইতে পরিবে । শ্বেতাঙ্গনার লজ্জাশীলতার হানি করিলে বা তাহাকে আক্রমণ করিলে চৌদ্দ বৎসরের জন্য কারাদণ্ড হইতে পরিবে। তদ্ভিন্ন, আদালত সকল্পকে ঐ সব দণ্ডের সহিত বেত্ৰাঘাত দণ্ড দিবারও ক্ষমতা দেওয়া হইয়াছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফ্রিকার রোডেসিয়া দেশেও এইরূপ দণ্ডবিধি প্রচলিত অাছে। কেন্যা দেশে কয়েকটি শ্বেতাঙ্গনীর উপর অত্যাচার হওয়ায় সেখানেও ঐরূপ আইন করা হইল। এরূপ কড়া আইন কেবল শ্বেতাঙ্গনাদের রক্ষার জন্য করা হইয়াছে, কৃষ্ণাঙ্গনাদের উপর শ্বেতপুরুষরা অত্যাচার করিলে এরূপ দণ্ড হইবে না। এইরূপ শয়তানী বৈষম্যে সে শ্বেতদেরই অধঃপতন বাড়িবে, তাহ নিঃসন্দেহ । শাহী হউক, তাহ! এখন আমাদের বিচাৰ্য্য নহে। আমরা কেবল ইহাই বলিতে • চাই, যে, কেন্যাতে যেমন অবস্থার পরিবর্তনে আইনের পরিবর্তন হইয়াছে, বঙ্গেও তেমনি অবস্থার পরিবর্তনে আইনের পরিবর্তন হউক, এবং সমুদয় ম্যাজিষ্ট্রেটু ও পুলিস কৰ্ম্মচারীকে উপদেশ দেওয়া হউক, যে, নারীহরণের ও নারীর উপর অত্যাচারের অভিযোগ মাত্রেরই তদন্ত বিন্দুমাত্র ও কালবিলম্ব না করিয়া করিতে হইবে, এবং বিচার ও যাহাতে শীঘ্র শীঘ্র হয় তাহাব ব্যবস্থা করিতে হইবে । অত্যাচারিত নারীর পক্ষে উকীল না থাকিলে সরকার হইতে উকীল নিয়োগের আইন করিতে হইবে। কোন নারী অপহৃত ও নিরুদেশ হইলে তাহার উদ্ধারসাধনের চেষ্ট ও বন্দোবস্ত সরকার পক্ষ হইতে করিতে হইবে। উদ্ধার করিতে ন পারিলে স্থানীয় পুলিসকে তাহার কৈফিয়ং দিতে হইবে এবং তাহার। অকৰ্ম্মণ্য বিবেচিত ও তিরস্থত হইতে পারিবে । দণ্ডের বিষয়ে বক্তব্য এক্ট, যে, আমরা প্রাণদণ্ডের পক্ষপাতী নহি । কিন্তু অন্যান্য কঠোরদণ্ডের ব্যবস্থ৷ হওয়া উচিত । মফঃস্বলে দেবমন্দির ও দেবমূৰ্ত্তি ভগ্ন ও অপবিত্রীকরণ সম্বন্ধে গবন্মে ণ্ট স্মেন বলিয়াছেন, সে, ইহা বন্ধ করা পুলিশের অসাধা, নারীনিৰ্য্যাতন সম্বন্ধে ও সেই ধরণের কথা সরকার বলতে পারেন । কিন্তু দুষ্টের দমন ও শিষ্টের রক্ষা ও পালন রাজশক্তির একটি প্রধান কাৰ্য্য । লাট লিটন যখন rule of claw বা নথরের রাজত্বের পরিবর্তে rule of law বা আইনের রাজত্বের প্রতিষ্ঠার কথা বলিয়াছিলেন, তখন ইহাই উহা ছিল, যে, রাজশক্তি, নখরবিহীন অর্থাৎ নিরস্ত্র এবং আত্মরক্ষায় অসমর্থ লোকদিগকেও রক্ষা করিবেন । পুলিস সৰ্ব্বত্ৰ সৰ্ব্বদ বিদ্যমান থাকিতে পারে না বটে, কিন্তু (নারীনিৰ্য্যাতন নিবারণ