পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা l পাঠাইলে তাহারা হয়ত বা শহীদ বলিয়া পূজিতও হইতে পারে । - মুসলমান কোন কোন কাগজে পড়িয়াছি, যে, পাবনা সহরের হিন্দুরা গীতবাদ্যসমন্বিত মিছিল ইচ্ছা করিয়া এমন সময়ে এমন রাস্ত দিয়া ঘুরিয়া ফিরিয়৷ লইয়া গিয়াছিল, যাহাতে মুসলমানদের নমাজে ব্যাঘাত জন্মে ও তাহীদের সঙ্গে ঝগড়া বাধে । তাহার পর যখন ঝগড়া বাধিল, তখন হিন্দুরা মসজিদের ভিতর পর্য্যস্ত ঢুকিয় মুসলমানদিগকে ঠেঙায় —ইত্যাদি। ইহা যদি সম্পূর্ণ সত্য বলিয়া মানিয়া লওয়া যায়, তাহা হইলেও পাবনা জেলার নানাগ্রামের হিন্দুদের ঘরবাড়ী লুটপাট ও তাহাদের উপর অত্যাচার ন্যায়সঙ্গত বা স্বাভাবিক বলিয়া প্রমাণ হয় না । কারণ, পাবনা সহরের হিন্দুরা সমস্ত জেলার হিন্দুদের সঙ্গে পরামর্শ করিয়া তাহাদের সাহায্যে ও সম্মতিক্রমে সহরের মুসলমানদিগের উপর অত্যাচার করে নাই | কাগজে দেখিলাম, পাবনার গ্রামে গ্রামে এইরূপ জনরব উঠিয়াছে, যে, মুসলমান রাজত্ব স্থাপিত হইয়াছে, এখন সাতদিন ধরিয়া হিন্দুদের ঘরবাড়ী লুট করিলেও কেহ কিছু বলিবে না, ইত্যাদি । ইহা অংশতঃ সত্য হইলেও যাহারা জনরব তুলিয়াছে, তাহারা অতি গৰ্হিত কাজ করিয়াছে । মুসলমান রাজত্বের আদর্শ ও নমুনা এইরূপ বলিয়া বিশ্বাস করাইবার ও করিবার লোক যদি বর্তমান সময়েও মুসলমানদের মধ্যে থাকে, তাহা হইলে তাহা ঐ সম্প্রদায়ের পক্ষে গৌরবের বিষয় নহে। আশা করি, এই সংবাদ সত্য নহে। হয় ত পাবনার জজ ম্যাজিষ্ট্রেট ১৪ পুলিস সাহেব মুসলমান বলিয়৷ এইরূপ গুজব রটিয়াছে। যাহা হউক লুটতরাজ যেরূপ ব্যাপক হইয়াছে, তাহাতে ইহাকে আকস্মিক মনে করা যায় ন—ইহার পশ্চাতে শৃঙ্খলাবদ্ধ কাজ করাইতে সমর্থ মাথাওয়ালা লোক আছে । পাবনার অরাজকতা কেবল ধৰ্ম্মবিদ্বেষজাত না হইতেও পারে। এই জেলার কৃষকের অধিকাংশ মুসলমান, জমীদারেরা তাহা নহে। জমীর মালীক ও চাষীদের মধ্যে মনোমালিন্ত বশত: জেলার অনেক স্থানে চাষীরা চাষ না করায় জমী পড়িয়া আছে শুনা যায়। তাহাতে চাষীদেরও অল্পকষ্ট হইয়া থাকিবে । বুভূক্ষিতঃ কিং ন করোতি পাপং—ষ্ণুধাৰ্ত্ত লোকের কি পাপ ন৷ করে ? মহাজনদের টাকা না দিবার মতলবে লুটপাট করা ও অসম্ভব নহে । সমবায়-ঋণদান-সমিতি সকলের মুলধন বেশীর ভাগ হিন্দুরাই দিয়াছে শুনিতে পাই ; অথচ শুনিতে পাই কোন একজন সরকারী উচ্চপদস্থ মুসলমানের কৌশলে পূৰ্ব্ব ও উত্তরবঙ্গের কোন কোন জেলায় সমিতি e جسمحمهم لاج বিবিধ প্রসঙ্গ—পাবনায় অরাজকতা ༤༽ e ༤༽ গুলির কর্তৃত্ব মুসলমানদের হাতে আসিয়াছে। ইহা কি সত্য ? পাবনা কি সেইরূপ একটি জেলা ? o সব দিকের সব কারণ সম্বন্ধে অকুসন্ধান করিয়া মুসলমান বা হিন্দু, যাহার যাহা অভিযোগ আছে, তাহার কারণ দূর করা আবশ্যক। কিন্তু সৰ্ব্বাগ্রে আবশ্যক শাস্তিস্থাপন। পাবনার অস্থায়ী মুসলমান ম্যাজিষ্ট্রেট, প্রথমেই সহরে যদি দৃঢ়তা দেখাইয়া দুৰ্দ্দান্ত লোকদিগকে দমন করিতেন, তাহা হইলে অরাজকতা এরূপ ভীষণ ও ব্যাপক আকার ধারণ করিত না, এবং নানাস্থানে মুসলমান জনতার উপর পুলিসকে গুলি চালাইতে হইত না । বহুশত মুসলমানকে গ্রেপ্তার করাও আবখ্যক হইত না । লুষ্ঠিত গ্রাম সকলে হিন্দুদের, বিশেষতঃ স্ত্রীলোকদের যেরূপ দুঃখ-দুর্দশা ও লাঞ্ছনা হইয়াছে, তাহা হৃদয়বিদারক এবং বর্ণনার অতীত। অর্থের দ্বারা দুঃখমোচন যতটা হইতে পারে, তাহার চেষ্ট হইতেছে, এবং চেষ্টা ক্রমশঃ ফলবতীও হইতেছে । স্থায়ী প্রতিকার নির্ভর করিবে, মুসলমান সম্প্রদায়ের মনের ভাব ও লোকমত পরিবর্তনের উপর, হিন্দুসমাজের মনের ভাব ও লোকমত পরিবর্তনের উপর, এবং গবর্ণমেণ্টের অপক্ষপাত দ্যায়পরায়ণ দৃঢ় ব্যবহার ও ব্যবস্থার উপর। মুসলমানদের মধ্যে কি পরিবর্তন দরকার, তাহা তীtহাদের মধ্যে চিস্তাশীল লোকের স্থির করিলে ভাল হয়। আমরা বলিতে অনিচ্ছুক। কিন্তু ইতিহাসের ইঙ্গিত উল্লেখ করা চলিতে পারে। ইউরোপীয় শক্তিপুঞ্জের পরম্পরের সহিত অসদ্ভাব ও প্রতিযোগিত{ বশত: এখনও যে কয়টি মুসলমান দেশ স্বাধীন আছে, তাহারাও সেকালের মনোভাব ছাড়িয়া দিতেছে । হিন্দু অনেক ভাগ্যবিপর্য্যয় সত্ত্বেও এখনও বাচিয়া আছে ; ভবিষ্যতেও সম্ভবতঃ মরিবে না । কিন্তু মাকুষের মত বাচিয়া থাকা দরকার। সেইজন্য তাহাকে আত্মরক্ষার উপায় অনুশীলন করিতে হইবে। যtহাদের পৌরুষ থাকে, তাহারা সংখ্যায় নূ্যন হইলেও অন্যেরা তাহাদিগকে বিরক্ত করিতে বা আক্রমণ করিতে ইতস্ততঃ করে হিন্দুর সেই পুরুষকারের বিকাশ হওয়া আবশ্বক। ইহা বীজের আকারে প্রচ্ছন্নভাবে সকলের আত্মাতেই বিরাজমান। কেবল ফুৰ্ত্তির, বিকাশের প্রয়োজন। তাহা অসাধ্য নহে । - লর্ড লিটন যাহা প্রকাশ্যভাবে বলিয়াছিলেন, অন্য ইংরেজ শাসকদেরও সেই মত। অর্থাৎ “ক্ল”, কি না অস্ত্রশস্ত্র, সরকার বাহাদুরের হাতে থাকিবে, সাধারণতঃ বে-সরকারী লোকদের হাতে থাকিবে না । কারণ,