পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] আমেরিক যাহা করিয়াছে, ইংরেজ ১৬৮ বৎসরে বঙ্গে তাহা করিতে পারে নাই । বঙ্গের লোকসংথ্য ফিলিপাইন্সের লোকসংখ্যার প্রায় পাচগুণ ; ফিলিপিনোর যতদিন আমেরিকার অধীন আছে, বাঙালীরা তাহার প্রায় সাতগুণ সময় ইংরেজের অধীন আছে। অথচ বঙ্গের ছাত্রসংখ্যা ফিলিপাইন্সের ছাত্রসংখ্যার দ্বিগুণের কাছাকাছি মাত্র । অথচ ফিলিপিনোর আমেরিকান শাসনের আরম্ভের সময় খুব স্বশিক্ষিত ছিল না। ঐ শাসন আরম্ভ হয়, ১৮৯৯ সালে । ১৯০১ সালে ছাত্রসংখ্যা ছিল ১,৬০,০০০ । ১৯১১তে উহা হয় ৫,০০,০০০ ; ১৯১৯এ হয় ৭,০০,০০০ ; এবং ১৯২৩এ হইয়াছে ১১,২৮,৯৯৭ । অন্য দিকে ব্রিটিশ শাসন আরম্ভের সময়, ইংরেজরাই বলেন, বঙ্গের গ্রামে গ্রামে বিদ্যালয় ছিল । ব্রিটিশশাসিত বাংলায় ৮৫১১১টি গ্রাম ও সহঁর আছে, এবং তাহাতে মোট e ৭১৭৩টি সব রকমের শিক্ষালয় আছে। অনেক সইরে বিস্তর শিক্ষালয় আছে । স্বতরাং বুঝা যাইতেছে, এখনও এমন গ্রাম বিস্তপ আছে যেখানে কোন বিদ্যালয় নাই । ব্রিটিশ শাসনের পূৰ্ব্বে অবস্থা এরূপ ছিল না। তখন এখনকার মত আধুনিক উচ্চশিক্ষা ছিল না বটে, কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষার বিস্তার এখনকার চেয়ে বেশী ছিল । স্বরাজ্যলাভের চেষ্টায় বিঘ্ন সাম্প্রদায়িক বিরোধে মানুষের মন অনেক দিন ধরিয়া এমন বিক্ষিপ্ত হইয়া রহিয়াছে, যে, স্বরাজ্যলাভের চেষ্টায় *লোকে মন দিতে পারিতেছে না। সকল সম্প্রদায়ের ও শ্রেণীর সম্মিলিত চেষ্টা ত স্থদুরপরাহত হইয়াই গিয়াছে, ভারতবর্যের প্রধান যে দুই সম্প্রদায় হিন্দু ও মুসলমান, তাহারা নিজেরাও স্বতন্ত্রভাবে স্বরাজ্যলাভচেষ্টা করিতে পারিতেছে না। মুসলমানরা সংথ্যায় কম হইলেও তাহাদের মধ্যে জাতিভেদ ও শ্রেণীভেদ কম বলিয় তাহারা স্বরাজ্যলাভ-চেষ্ট অধিকতর একাগ্রতা ও ঐক্যের সহিত করিতে সমর্থ । কিন্তু সে-চেষ্টা তাহদের কতিপয় নেতা কখন কখন করিলেও, মুসলমান সমাজ প্রধানতঃ সরকারী চাকরীতে এবং প্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠানসমূহে নিজেদের ভাগটা বেশী করিয়া বসাইবার চেষ্টাই করিয়| আসিতেছেন । হিন্দুদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত অধিকসংখ্যক লোক রাষ্ট্রীয় আন্দোলনের গোড়া হইতে এবং পরে স্বরাজ্যলাভ-চেষ্টায় যোগ দিয়া আসিতেছেন। কিন্তু ইদানীং হিন্দু-নারীর নির্য্যাতন এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় তাহাদেরও মন বিক্ষিপ্ত হইয়াছে । ভারতীয়ের স্বরাজ্য লাভ করে, ইংরেজ জাতি তাহা বিবিধ প্রসঙ্গ—মন্ত্রিত্ব লওয়া হইবে কি না ממף চায় না। অবশ্য, আমরা স্বরাজ্যলাভ করিলে যদি ইংরেজদের ব্যবসাতে ও অর্থাগমে হাত না পড়ে, তাহী হইলে আমাদের স্বরাজ্যলাভে তাহাদের ততট। আপত্তি থাকিবে না। কিন্তু ভারতে ইংরেজদের রাজনৈতিক শক্তির অপব্যবহার দ্বারা তাহদের ব্যবসা ও অর্থাগম যতট1.বাড়িয়াছে, আমাদের স্বরাজ্য লাভের পর তাহার কিছু হ্রাস হইবার সম্ভাবনা আছে। এইজন্ত, যাহাতে আমাদের স্বরাজ্যলাভে বাধা ও বিলম্ব ঘটে, তাহা ইংরেজদের পক্ষে অবাঞ্ছনীয় মনে না হইতে পারে । তা ছাড়া, হিন্দু-মুসলমানের বিরোধ নিবারণ এবং তাহ ঘটিলে শান্তিস্থাপন ও মধ্যস্থতাকরণ যখন ইংরেজদের ভারতবর্ষে থাকিবরি একটি কারণ বলিয়া ঘোষিত হইয়াছে, তখন ঐরুপ বিরোধ ও ইংরেজদের বিরক্তিকর ন হইবার কথা । তাহা হইলেও ইহা নিশ্চিত, যে, ইংরেজ আমলাতন্ত্র সাক্ষাংভাবে বা লোক লাগাইয়া হিন্দু-মুসলমানে ঝগড়া বাধাইয়া দেন, ইহা কেহ প্রমাণ করিতে পারিবে না । অন্যদিকে ইহা ও সত্য, যে, কতকগুলি লোকের ব্যবহার এরূপ যে, ইংরেজ আমলাতন্ত্রের টাকা খাইলে বা তাহীদের দ্বার প্রলুব্ধ হইলে উহা যেমন হইবার সম্ভাবনা ছিল, অনেকটা সেইরূপই দেখা যাইতেছে । এমন অবস্থাতেও র্য"হারা স্বরাজ্যলাভের চেষ্টা করিতেছেন, তাহার। ধন্যবাদাহ । যে-সব হিন্দু নারীনিৰ্য্যাতনের প্রতিকারকল্পে যথেষ্ট চেষ্টা করিতেছেন না, কিস্ব হিন্দুমুসলমানের বিরোধে হিন্দুর ন্যায়সঙ্গত অধিকারে হাত পড়িলেও তাহার উদ্ধার বা রক্ষার জন্য চেষ্টা করিতেছেন না, তাহাদের এই ঔদাসীন্য বা অবসরের অভাব যদি সত্য সত্যই স্বরাজ্যলাভচেষ্টায় সতত ব্যাপৃত থাকায় ঘটিয়া থাকে, তাহা হইলে তাহা কতকটা মার্জনীয় ; নতুবা নখে । দেশে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা-বৃদ্ধি আমরা চাই না, কিন্তু জোড়াতাড়া দিয়া বিরুদ্ধবাদীদের মধ্যে বাহ মিলন রক্ষণও পছন্দ করি না ;–তাহা টিকিতে পারে না । স্বরাজ্যদলের মধ্যে যে-বিরোপ দেখা দিয়াছিল, তাহা যদি সত্য সভ্যই ভিতরে ও বাহিরে মিটিয়া গিয়া থাকে, তাহা হইলে স্বশ্বের বিষয় । মস্তিত্ব লওয়া হইবে কি না মস্তিত্ব গ্রহণ সম্বন্ধে বাদাতুবাদ চলিতেছে। দ্বৈরাজ্য যখন টিকিয়া আছে, এবং বাস্তবিক ভদ্র নামের উপযুক্ত লোকও কৌন্সিলে ঢুকিবেন, তখন খাটি লোকের মন্ত্রিত্ব গ্রহণই ভাল। মিথ্যাবাদী, ঋণগ্রস্ত, ঘুষখোর, সংকীর্ণমন লোক মন্ত্রী হইলে দেশের পক্ষে অনিষ্টকর।