পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা] . ۹۰ ৭২৫ যমুনার জলে রক্তাভ আকাশের ছায়ার রূপ দেখিতে দেখিতে পিতার সঙ্গে বাড়ী ফিরিতেছিল, তখন দুরের ভূটার ক্ষেতের দিক হইতে ভিজা মাটির গন্ধ আসিয়া বৃষ্টির আগমনী জানাইয়। দিতেছিল। যমুনার পোলের ধারের দুই চারজন একাগাড়ীওয়ালা গাড়ীর লাল ঘেরাটোপ ফেলিয়া বাড়ী পলাইতে ব্যস্ত। পথে আলো নাই, নদীর বুকজোড়া বিরাট দোতালা সাকোটা একটা কালো অজগরের মত অন্ধকার মাখিয়া পড়িয়া আছে। পারের যাত্রীদের কাছে ট্যাক্সের পয়সা আদায় করিবার জন্য সাকোর মুখে দুইকোণে দুইটা পাহারাওয়ালা দুইট লণ্ঠন জালাইয়া বসিয়া আছে । সরীস্বপের চোখের মত এই আলে। দুটি পথটাকে আরো ভীষণ করিয়া তুলিয়াছে। লোহার সাকোর উপর বোঝা-কঁধে যাত্রীদের ভারী পায়ের শব্দ ধমনীর মত তালে তালে ধপধপ করিয়া চলিয়াছে। সেই সঙ্গে নারী ও পুরুষের উচ্চকণ্ঠের বিচিত্র আলাপের ধ্বনিটা যদি না থাকিত, তাহা হইলে এই অন্ধকারে এই লৌহসৰ্পের বিরাট কুক্ষির ভিতর ঢুকিয়া পড়িতে মানুষ সহজে সাহস করিত না । গৌরী পিতার হাত ধরিয়া পথের উপরের আকাশের স্নিগ্ধ মান আলো ছাড়িয়া পাহারাওয়ালার হাতে দুইটি পয়সা দিয়া-যেই ব্রীজের অন্ধকারময় লোহার ছাদের ভিতর চুর্কিয়া পড়িল, অমনি সে লক্ষ্য করিল বারান্দার নীচের মই পরিচিত স্বদেশী মুখটি পাহারাওয়ালার লন্ঠনের সামনে কুকিয়া পয়সা গুনিতেছে। গৌরী চমকাইয়া উঠিল, বুঝিল মানুষটির চোখ এই অন্ধকারেই তাহাদের দিকে লক্ষ্য রাথিয়াছে। তারপর লম্বা আধমাইল পথ সে যে তাহাদেরই পায়ে পায়ে পিছন পিছন আসিল, তাহা গৌরীর বুঝিতে বাকী রছিল না। অন্য দিন ইহলে অন্ধকারে সমস্ত পথই সে পিতার সঙ্গে বক্‌ বক্‌ করিয়া বকিয়া চলিত ; কিন্তু আজ তাহার কেমন যেন বাধ-বাধ ঠেকিল। ঐ মাকুযটি যদি তাহার সব কথা শোনে ! শুনিলে যে কি ক্ষতি তাহা সে পরিষ্কার. ধারণা করিতে পারিল না ; কিন্তু তবু সহজ ভাবে কথা তাহার আসিল না। সাকোর শেষে ওপারেও পাহারাওয়াল ভালো লইয়া বসিয়া আছে, খোলা আকাশের আলোও খানিকটা আসিয়া পড়িয়াছে। একাওয়ালা এবং নৌকার মাঝিরা কোলাহল করিতেছে । গৌরী তাহার ভিতর দেখিল লোকটি তাহার মুখের দিকে কেমন যেন করিয়া তাকাইয়া উন্ট রাস্তায় তাড়াতাড়ি চলিয়া গেল । পথে এমনি দেখা প্রায়ই হইত। গৌরী একবার ভাবিল মাকে বলিবে । কিন্তু মানুষটির দৃষ্টিতে কি যে একটা জিনিষ থাকিত, যাহাতে তাহার বলিতে বাধা আসিত । মনে হইত, ম হয়ত শুনিলে বুঝিতে পারিবেন না, হয়ত তাহার উপর রাগ কfরবেন । কিন্তু ইহতে তাহার যে অপরাধ কিছুই নাই সেটা ভাবিয়া বুঝিবার তাহার ক্ষমতা হইল না। মনে কমন তাহার একটা ভয়ভয় থাকিয় গেল । ভাবিল উহাকে এমন পিছন পিছন ফিরিতে বারণ করিয়া দিবে। কিন্তু যদি সে কিছু বলে ? তাহার যেখানে খুনী যাইবার যেদিকে খুপী তাকাইবার অধিকার আছে ; গৌরী তাহাকে বারণ করিবার কে ? তাহার ছোট্ট মনের কাছে এই সমস্যার সমাধান করা বড় কঠিন হইয়ু উঠিল অথচ কে যে তাহাকে সাহায্য করে তার ঠিক নাই। বাবার হাতটা টিপিয়ু ধরিয়া চিন্তিত মুখে গভীরভাবেই আজ সে সারি বাধা নিমগাছ-তলার পথ দিয়া বাড়ী ফিরিয়া গেল । রাত্রিটাও তাহার কেমন অস্বস্তিতে কাটিল। সকাল বেলা গোয়ী বাড়ীর সামনের উঠানে চৌকিদারের স্ত্রী ও মেয়ের যাতায় গমভাঙার পর্ব পর্য্যবেক্ষণ করিতে গিয়াছিল। মা মেয়েতে ভারী যাতার দুইদিকৃ হইতে পরস্পরের পায়ের উপর পা ছড়াইয়া বসিয়া বিচিত্র রাগিণীর গানের স্বরের সঙ্গে সঙ্গে যাতার চাকা ঘুরাইয়া চলিয়াছিল। যাতার ফুটার ভিতর দিয়া মুঠা মুঠ গম ধীরে ধীরে অদৃপ্ত হইয়া আটার ফোয়ারার মত চাকার তল দিয়া ঝরিয়া পড়িতেছিল, দেখিতে গৌরীর বড়ই মজা লাগিতেছিল। গৌরী সেই গোবরলেপ উঠানে উবু হইয়া বসিয়া মন দিয়া গমভাঙা দেখিতেছে, এমন সময় তাহাদের বাড়ীর ঝি স্থনরির মেহেদী পাতায় হাত পা রাঙাইয়া কপালে সিকির মাপের অভ্রের টিকুলি লাগাইয়া রঙীন চুনরি সাড়া পরিয়া হাসিতে হাসিতে