পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা | বিশ্ববিদ্যালয়, ফ্যাক্টরী, ট্রেড-ইউনিয়ন, নগর-স্বরাজ, পল্লীস্বরাজ প্রভৃতি যা-কিছু ওদের আছে, সমস্তই আমরা আস্তে-আস্তে গ্রহণ করছি । ইয়োরোপে যখন ষ্টীম্‌ এঞ্জিন নামক অদ্ভূত বস্তুটি তৈরী হ’ল তার দেড়শ বছর পর আমরা হঠাৎ চেয়ে বললাম—এ আবার কি ! ওদের প্রসাদ সবই আমরা পাচ্ছি, কিন্তু আস্তে-আস্তে বেমালুম হজম করে বলি, ওদের পথে ওর, আমাদের পথে আমরা । কিন্তু আসল কথা এই যে, ওরা যখন কোনো-কিছুর চরমে ওঠে আমরা তখন কেবলমাত্র গোড়ায় এসে দাড়াই। সুতরাং একই প্রণালীতে যে পৃথিবী চলছে সে-কথা আর অস্বীকার করবার উপায় নেই। একথা সত্য যে, আমরা ওদের ল্যাজে হাত দিয়ে চলেছি মাত্র । ওদেশে আর্থিক উন্নতির প্রচেষ্টা কতভাবে মানুষ করেছে সে-সম্বন্ধে পূৰ্ব্বে বলেছি। সেগুলি মোটামুটি এই –(১) ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা —উপার্জিত অর্থ লোকে কোথায় রাখবে, তা হ’তে লোকে কি করে লাভবান হবে, কোথায় টাকা রাখলে নিরাপদে থাকবে, ব্যাঙ্ক, প্রতিষ্ঠিত করে সে-সমস্যার সমাধান করা হ’ল । ( ২ ) জীবন বীমা পদ্ধতি –পূৰ্ব্বে লোকে ভয়ে ভয়ে মহা উদ্বেগে জীবন কাটাতো। যদি কারে হঠাৎ মৃত্যু হয়, যদি হঠাৎ কোনো বিপদ আসে তবে কি উপায় হবে—এ একটা মহ চিন্তা ছিল। সেই চিন্তার হাত থেকে মুক্তি পাবার জন্যে ওরা ভাবলে—এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে সবাই নিরুদ্বেগে শাস্তিতে জীবন যাপন করতে পারে। ফলে হষ্টি হ’ল সৰ্বকারী বাধ্যতামূলক জীবনবীমাপদ্ধতি। (৩) জমি-জমার ব্যবস্থা –পূৰ্ব্বে যার জমি ছিল তার কোনো ভাবনা থাকৃত না, কিন্তু যার জমি নেই সে নানারূপ আর্থিক অসুবিধা ভোগ করত। এই অনৈক্য দূর করুবার জন্যে জমি-জমার নূতন বিলি-ব্যবস্থা হ’ল । যার প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি আছে তা’র কাছ থেকে জমি কেড়ে নিয়ে যার জমি নেই তা’কে দেবার ব্যবস্থা হ’ল । এই নেওয়া ও দেওয়ার মালিক রাষ্ট্র নিজে । তোমার জমি তোমার থাকৃবে কি না তা’র বিচার-ভার রাষ্ট্রের উপর ন্যস্ত করা হ’ল । ( ৪ ) শ্রমিকের বৃহত্তর দাবী –ফ্যাক্টরীর মজুরই হোক আর কেরাণীই হোক আধুনিক জাৰ্ম্মান নারীর আর্থিক প্রচেষ্টা כיכ\ আগে তাদের যা-কিছু অভাব-অভিযোগ বা দাবী তা ট্রেড ইউনিয়নেই সীমাবদ্ধ ছিল। ঐসব ইউনিয়ন বা সজেই তা’র। এতকাল সন্তুষ্ট ছিল। কিন্তু এখন তা’র আমূল পরিবর্তন হ’য়ে গেছে। ফ্যাক্টরীর মালিকদের সঙ্গে সমানে বসে মজুর ও কেরাণীরা এখন ফ্যাক্টরী পরিচালন, জম-খরচের হিসাবপত্র, ও অন্যান্ত শাসন-কার্য্যে সমান অধিকারী । (৫) অবৈতনিক বাধ্যতামূলক সাৰ্ব্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা –কি স্ত্রী কি পুরুষ ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত সবাইকে এই শিক্ষা গ্রহণ করতে হত। ১৯১৮ হ’তে বয়স ১৪ থেকে ১৮ পর্য্যন্ত করা হয়েছে । জাৰ্ম্মান রমণীরা তাদের আর্থিক উন্নতির জন্যে অনেককিছু করেছে ও ইয়োরোপের অন্যান্য দেশের মেয়েরা তাদের তুলনায় অনেক পেছনে আছে একথা খুবই সত্যি । কিন্তু তা’র আগে এই কথাটা পরিষ্কার করে বলা দরকার যে মেয়েরাই যে সব উন্নতির মূল তা সত্য নয়। অনেকের বিশ্বাস যে, বিশেষ কোনে-একটি শক্তির জোরে জগংসংসার চলছে। তা তো কখনো ত’তে পারে না । হাজার জায়গায় হাজার রকম হাজার শক্তির ও তা’র ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার উপর জগতের যত-কিছু উন্নতি নির্ভর করে । যিনি যে-শক্তির বা প্রথার উপাসক বা তা’তে বিশ্বাসপরায়ণ তিনি প্রায়ই আর-সব শক্তিকে তাচ্ছিল্য বা অগ্রাহ করে’ বলে থাকেন—সৰ্ব্বান ধৰ্ম্মান পরিত্যজ্য মামেকং স্মরণং ব্রজ। বিশেষ কোমো শক্তি বা আন্দোলনকে নিজের খুলী, মর্জি বা শক্তি অনুসারে সাহায্য করবার অধিকারী সকলেই, কিন্তু সেইটেকেই অযথা ফাপিয়ে বড় করে তোলবার দরকার নেই । আর্থিকই হোক আর রাষ্ট্রীয়ই হোক্ যে-কোনো উন্নতি নারীর করতে হ’লে তা’র স্বাধীনতার প্রয়োজন সকলের আগে । ওদের অনুকরণ করে’ গ্রী-স্বাধীনতার আনোলন আমরা আরম্ভ করেছি, কিন্তু ওদের দেশেও এ বস্তুটি খুব বেশী দিনের নয়। পশ্চিমে এখনও এমন দেশ আছে যেখানে আর্থিকভাবে নারী স্বাধীন নয়। আমেরিকার আলবামা বা নিউ ইংলণ্ড প্রদেশে স্ত্রীর উপার্জিত অর্থের অধিকারী তা’র স্বামী । ৪০ বছর আগেও জাৰ্ম্মানীতে-যে দিন প্রথম একটি মেয়ে বিশ্ব