পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] পূজার শাড়ী R 06t একরকম ছুটিয়া বাহির হইয়া গেল। মনে মনে দুর্গানাম জপিতে লাগিল, গিয়াই যেন সাহেবের সঙ্গে শুভদৃষ্টি न श्ध्न । সচরাচর বাঘের ভয় থাকিলেই সন্ধ্যা হয় দেখা যায়, কিন্তু অনিলের অদৃষ্টগুণে আজ তাহার কিছু ব্যতিক্রম দেখা গেল। আফিশের সামনে আসিয়া বড়সাহেবের ভ্রুকুটিকুটিল মুখের পরিবর্তে তাহার সহকৰ্ম্মীদের বিকশিতদন্তমুখগুলি দেখিয় তাহার দুই চোখ যেন জুড়াইয়া গেল। তাহারা সব কয়টি মিলিয়া দরজায় ভীড় করিয়া মহোৎসাহে গল্প করিতেছে। “ব্যাপার কি হে ?” বলিয়া অনিল চুটিয়া গিয়া তাহাদের কাছে দাড়াইল । “তোমরা সবাই ক্ষেপেছ না বড়-সাহেব পটোল তুলেছেন ?” “আমরাও ক্ষেপিনি এবং বড় সাহেবও পটল তোলেননি,” প্রায় সমস্বরেই সব ক’জন উত্তর দিল । “ভবে সাহেব পটোলের ক্ষেতের দিকে এক পা বাড়িয়ে ছিলেন বটে। মোটরে মোটরে ধাক্কা লেগে ঠ্যাং ভেঙে কৰ্ত্ত এক হৰ্থার জন্তে হাসপাতাল বাস করতে গিয়েছেন।” অনিল মুক্তির নিশ্বাস ফেলিয়া বলিল, “বাচা গেল, বাবা। আমি ত ভাব তে ভাবতে আসছি যে, ঢুকেই এক মাসের নোটিশ পাব। কিন্তু ভাল কথা, আমাদের মাইনের হ’ল কি ? সেটাও পকেটে নিয়ে তিনি হাসপাতালে গেলেন নাকি ?” একজন প্রৌঢ় গোছের কেরাণী তাহার পিঠ চাপড়াইয়। বলিল, “ না হে না। আজই মিলবে। আরো মুখবর আছে। আমরা দরখাস্ত করেছিলাম না যে বড় দিনে ‘বোনাস’ না দিয়ে সেই টাকাটা আমাদের পূজোর মাইনের সঙ্গে দেওয়া হোক, তা সাহেব তাতে রাজীই হয়েছেন।” অনিলের বড় সাহেবের জন্য একটু ভাবন হইতে লাগিল। হঠাৎ ভূতের মুখে রামনাম শুনিলে একটু ভাবন হইবারই কথা। ব্যাটার ভাল মদ কিছু না श्हेप्ल इग्न । কিন্তু বড়-সাহেবের ভাবনা ভাবিবার তাহার বেশী সময় ছিল না। হঠাৎ এক সঙ্গে প্রায় দুই মাসের মাহিনীর সমান টাকা হাতে পাওয়ার সম্ভাবনায় তাহার মন আনন্দে নাচিতেছিল। যাক, পূজার কাপড়-চোপড় কোথা হইতে কিনিবে, সে ভাবনা আর ভাবিতে হইবে না। স্বষমার জন্য একটা খুব ভাল রকম কিছু কিনিতে পারিলে এই অসুবিধাজনক ঝগড়াটার শীঘ্রই মিটমাট হইয়া যায়। আফিশের ছুটি হওয়ার জন্য সে অস্থির চিত্তে অপেক্ষা করিতে লাগিল। অবশেষে ছুটি এবং টাকা একসঙ্গে লাভ করিয়া সে অধরের বাড়ীর দিকে চলিল। ইচ্ছাট যে, বন্ধুকে সঙ্গে করিয়াই বাজার করিতে বাহির হইবে। অধর সৌভাগ্যক্রমে বাড়ীতেই ছিল । চট্‌পট, এক-এক পেয়ালা চা কোনোরকমে গিলিয়া খাইয় তাহারা বাহির হইয়া পড়িল । অধরের অনেক জিনিষপত্র কিনিবার.ছিল। সৰ্ব্বপ্রথমে তাহার এক কাপড়ের দোকানে গিয়া উপস্থিত হইল। লীলার জন্য সিস্কের ফ্রক কিনিতে হইবে, কাজেই সৰ্ব্বপ্রথম অনিল তাহাই দেখাইতে বলিল । রাশি রাশি, নানা রংএর, নানা ছাটের ফ্ৰক ঘুরাইয়া ফিরাইয়া দেখিয় সে অবশেষে সোনালী রংএর রেশমের একটি ফ্রক পছন্দ করিল। লীলা দিব্য টুকটুকে মেয়ে, তাহাকে এ রংএ নিশ্চয়ই মানাইবে । দামটা অবশু তাহার অবস্থার পক্ষে কিছু বেশী, কিন্তু পকেটে তখনও ঝনঝন করিতেছে, কাজেই বেশী হিসাবী হইতে তাহার ইচ্ছ। করিল না। এখন সুষমার জন্য খুব ভাল দেখিয়া একখান। শাড়ী কিনিতে পারিলেই হয়। তাহার সামনে তাকভৰ্ত্তি করিয়া গাদ গাদা শাড়ী সাজানো। সেগুলির কত রং, কত রকম চেহারা । অনিল ভাবিয়াই ঠিক করিতে পারিতেছিল না যে, সুষমার জন্য কি কেনা যায়। জিনিষটা খুবই বেশীরকম স্বন্দর হওয়া চাই, কিন্তু একেবারে তাহার অবস্থার অতিরিক্ত হইলেও চলিবে না। “কি রকমের শাড়ী হ’লে ওকে সব-চেয়ে মানাবে বলতে পার ?” অনিল নিরুপায় হইয়া শেষে বন্ধুকেই জিজ্ঞাসা করিয়া বসিল । অধর অত্যন্ত চটিয়া বলিল, “আমি কি ক’রে বলব রে, গাধা ? আমি কি কখনও তোর বউকে চোখে দেখেছি ? সে ফর্শ না কালে, তাও ত জানি না।”