পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*Ob প্রবাসী-ভাদে, IHIV [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড একেবারেই ভুলিয়া গেল। যতগুলি ডাক্তার তাহাদের জান ছিল, প্রায় সব ক’জনকেই একসঙ্গে ডাকিয়া আনিল, সুষমা স্নানাহার সব ত্যাগ করিয়া মেয়ের পাশে বসিয়া রহিল । সকালে সুষম বসিয়া লীলাকে বাতাস করিতেছে, এবং অনিল তাহার মাথায় হাত বুলাইতেছে, এমন সময় বিটা আসিয়া বলিল, “বাইরে কে একজন বাবু দাড়িয়ে রয়েছে, মা ।” অনিল বাহির হইয়া দেখিল, দরজার কপাট ধরিয়! একটি ভদ্রলোক দাড়াইয়া আছে। তাহার কাপড়-চোপড় ময়লা, চোখ মুখের চেহারাও শোচনীয়। সে একটা কথা বলিবার পূৰ্ব্বেই অনিল বুঝিয়া লইল, এই লোকটি বেনারসী শাড়ী সংক্রান্ত ব্যাপারে আসিয়াছে । লোকটি অনিলকে দেখিয়া নমস্কার করিয়া বলিল, “আপনি আমার অনুরোধটা শুনলে খুবই অবাক হবেন বোধ হয়। আপনি যে ময়ুরকষ্ঠ বেনারসী শাড়ীখানা কিনে এনেছেন, আমিই সেটা দোকানে বিক্ৰী করতে দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার সেটা এখনি ফিরে পাওয়া দরকার।” অনিল বলিল, “তা আপনি নিয়ে যেতে পারেন। যার জন্যে কিন্‌লাম তার ত জিনিষটা কিছু পছন্দ হয়নি। তবে আমার টাকা পঞ্চাশটা দিয়ে যাবেন।” ভদ্রলোকের মুখে একটুখানি স্তব্ধ হাসি দেখা দিল । সে বলিল, “আমার হাতে এখন পঞ্চাশটা পয়সাও নেই। আপনাকে কিছুদিন পরে আমি টাকাটা দিতে পারি। কিন্তু আপনি যদি আমাকে শাড়ীট এখন দেন তা হ’লে একটা হতভাগ্য জীবের অত্যস্ত উপকার করা হয়। একেবারে না দিতে চান, দুচার দিনের জন্যে ধার দিন ।” অনিল কিছু আশ্চর্ধ্য হইয়া বলিল, “কিন্তু আপনি ওটা ফিরে চান কি জন্যে ?” পিছনে তাকাইয়া দেখিল, কপাটের আড়ালে দাড়াইয়া স্বযম তাহদের কথাবার্তা শুনিতেছে। “কাপড়খান। আমি আমার স্ত্রীকে তার জন্মদিনে কিনে দিয়েছিলাম। কিন্তু কিছুদিন পরেই তার খুব শক্ত অস্থখ হয়ে পড়ল। আমি অত্যন্ত গরীব, যা দু’চার পয়সা জমিয়েছিলাম, তা এই শাড়ী কিনতেই শেষ হ’য়ে গিয়েছিল। তার ঔষধ-পথ্যের জন্তে বাধ্য হ’য়ে শাড়ীখানা আমায় বিক্ৰী ক’রে দিতে হয়। কিন্তু তাকে ত রাখতে পারলাম না, তার ডাক এসেছে। ক'দিন থেকে ক্রমাগত শাড়ীখান চাইছেন। আমি ক্রমাগত মিথ্যা কথা বলছি তার কাছে, সেট ইন্ত্রি কবৃতে দিয়েছি। কিন্তু আর ত সময় নেই। দয়া ক’রে কাপড়খানা দিন।” অনিল ইতস্ততঃ করিতে লাগিল । এত টাকা দিয়া কিনিয়া জিনিষটা একেবারে হাতছাড়া করিবার তাহার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু ভিতরে ভিতরে কে যেন তাহাকে খোচাইতে লাগিল, গরীব বিপন্ন লোকটির কথা রাখিবার জন্য । হঠাৎ পিছন হইতে স্বযম তাহার পাঞ্জাবী ধরিয়া একটান দিল । অনিল ফিরিতেই সে খিল খিল করিয়া বলিল, “দিয়ে দাও গো । বেচারী মেয়েমানুষটি মারা যাচ্ছে, এখন তার শেষ ইচ্ছা রক্ষা করতে হয়।” সে ঘরের ভিতর গিয়া শাড়ীখানা নিজেই বাহির করিয়া অনিল । লোকটির চোখে জল আসিয়া পড়িয়াছিল। শাড়ীখান হাতে করিয়া সে বলিল, “আপনাকে ধন্যবাদ দেবার চেষ্টাও কর্য না সম্ভব হয় ত জিনিষটা ছ'চার দিনের মধ্যেই আমি ফেরত দিয়ে যাব । *A. লীলার জর কিছু বাড়িয়া যাওয়াতে তাহাকে লইয়াই অনিল আর সুষম এমন ব্যস্ত হইয়া উঠিল যে, শাড়ীর কথা একরকম তাহারা ভুলিয়াই গেল। তবু অনিলের মনে পঞ্চাশটা টাকা মারা যাওয়ার শোক এক-একবার মাথা জাগাইয়া উঠিতেছিল। স্বষমার দু’একবার মনে হইল সেই মেয়েটি না জানি কেমন আছে। দুপুরের দিকে লীলার জর বেশ খানিকটা কমিয়া যাওয়াতে, অনিল একবার আফিশ ঘুরিয়া আসিতে গেল। কাল হইতে স্থষমার স্নানও হয় নাই, আহারও হয় নাই । লীলা দিব্য ঘুমাইতেছে দেখিয়া স্বযম তাড়াতাড়ি গিয়া স্বান সারিয়া আসিল। তারপর খাওয়াটাওঁ কোনোক্রমে শেষ করিয়া সে লীলার পাশে গিয়া শুইল । ঘুমাইবার ইচ্ছা তাহার ছিল না, একটুখানি গড়াইয়া বিশ্রাম করিয়া