পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] মহন্থ-রমূ-উল-হরাম ዓ8 » সিংহল দ্বীপে (Ceylon) এক গিরিশিখরে পড়িয়াছিলেন, সেখানে পাথরের উপর তাহার পায়ের দাগ আছে, ও ঐ গিরিশৃঙ্গকে আদমের শৃঙ্গ (Adam's Peak) বলে। হবা মক্কার কাছে মরুদেশে একস্থানে পড়িয়াছিলেন। পৃথিবীতে আসিবার পর, প্রায় নয় শত বৎসর উভয়ে উভয়কে খুজিধা পাইলেন না। পরে ফিরিশতা হজরৎ জিব্রঈলের (Gabriel) অনুগ্রহে মক্কার নিকট উভয়ের সাক্ষাৎ হইল। হজরৎ জিব্রঈল মনুষ্যরূপে দেখা দিয়া বলিলেন, “এইবার তোমাদের ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেওয়া ও উপাসনা করা উচিত।” আদম বলিলেন, “আমি ত ধন্যবাদ দিতে অথবা উপাসনা করিতে জানি না।” * হজরৎ জিব্রঈল তখন উভয়কে কি করিয়া উপাসনা করিতে হয়, সবিস্তারে শিক্ষা দিলেন। যেখানে এই শিক্ষা দিয়াছিলেন, মক্কার মসজিদ ঠিক সেই স্থানে নিৰ্ম্মিত । আদম সেদেশের খাদ্যদ্রব্য স্থলভ নহে দেখিয়া হববাকে লইয়া ভারতবর্ষে আসিয়া বাস করিলেন, কিন্তু তাহার প্রথম উপাসনার স্থানটি পবিত্র ও তীর্থরূপে চিহ্নিত করিয়া আসিয়াছিলেন, সেখানে প্রতি বৎসর অন্তত একবার গিয়া সেই স্থানে, বসিয়া উপাসনা করিয়া আসিতেন । এই ঘটনার বহুকাল পরে, হজরৎ নৃহের ( Noah ) সময়ে প্লাবনে যখন সকল পৃথিবীই ডুবিয়া গিয়াছিল, তখন উপাসনা-স্থানের চিহ্নও লোপ পাইয়া ছিল । ইহার বহু কাল পরে, একেশ্বরবাদী ভক্ত হজরৎ ইব্রাহীমের সিরিয়া দেশে বাসকালে দুই স্ত্রীর গর্ভে দুইটি পুত্র উৎপন্ন হইল। গৃহ বিবাদের ভয়ে তিনি জ্যেষ্ঠ পুত্র ইসমাঈলকে তাহার মাতার সহিত স্থানান্তরে গিয়া বাস করিতে বলিলেন। কনিষ্ঠ ইসহাক তাহার কাছে রহিলেন । কিছুকাল পরে, তাহার একবার প্রিয় জ্যেষ্ঠ পুত্রকে দেখিবার ইচ্ছা প্রবল হইল, তিনি, খুজিতে খুজিতে পুত্র ও তাহার মাতাকে আধুনিক মক্কাতে পাইলেন। দেখিলেন, পুত্র বেশ গোছাইয়া সংসার পাতিয়াছে, কিন্তু জিজ্ঞাসা করিয়া জানিতে পারিলেন যে ইসমাঈল উপাসনা করিতে জানেন না। তিনি হজরৎ জিব্রঈলের মুখে শুনিয়াছিলেন ঐ প্রদেশে কোনও স্থানে হজ্বরং আদমের উপাসনার স্থান আছে, তিনি ঐ ফিরিশতার সাহায্যে সে স্থান খুজিয়া বাহির করিলেন, ও সে স্থানের চারিদিকে পাথর ও কাদা দিয়া প্রাচীর গাথিয়া চিহ্নিত করিয়া দিলেন । এই স্থানটি লম্বা ও চওড়ায় ঠিক সমান ও চতুষ্কোণ না হইলেও প্রায় সমকোণযুক্ত চতুষ্কোণ। সেই প্রাচীর বেষ্টিত স্থানই এখনকার “কাবা” বা মক্কার প্রধান উপাসনালয়, ও পৃথিবীতে প্রাচীনতম উপাসনার স্থান, অতএব পবিত্রতম স্থান। সেকালে প্রাচীর প্রায় চার ফুট উচ্চ ছিল, ও ছাদ ছিল না ; ক্রমে লোকে প্রাচীর উচ্চ করিয়া লম্বা ও চওড়ায় প্রায় সমান করিয়া ফেলিয়াছে ও ছাদ করিয়াছে অতএব ঘর খানি কাবার (Cube) মত দেখিতে হইয়াছে, সেইজন্য উহার নাম “কাবা” হইয়াছে। এখন প্রাচীরগুলি ভাল কাটা পাথরের ও পাকা করা হইয়াছে. কিন্তু ভীত কেহ পরিবর্তন করে নাই, হজরত ইব্রাহীমের বাকা চোরা ভীতের উপরই পাকা প্রাচীর করিয়াছে, পবিত্র জ্ঞানে প্রাচীন ভাতই রাখিয়াছে । এই ইতিহাস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মক্কায় মসজিদ পৃথিবীতে 'প্রাচীনতম উপাসনালয়। যতদূর সংবাদ পাওয়া গিয়াছে এই উপাসনালয়ে চিরকাল একেশ্বরবাদীরা উপাসনা করিয়াছেন, তবে মধ্যে মধ্যে দেশের লোক আকাশের সূৰ্য্য, চন্দ্র, তারাকে ঈশ্বরের “জ্যোতি” বলিয়া সম্মান করিয়াছে, ও হজরৎ মহম্মদের আবির্ভাবের কিছু পূৰ্ব্বে দেশের লোকেরা আপনার আপনার বংশের প্রধান যোদ্ধাদের প্রতিমূৰ্ত্তি গড়িয়া উপাসনালয়ে সাজাইয়া রাখিয়া ছিল, ও পরে তাহাদের সম্মান করিতে আরম্ভ করিয়াছিল। কিন্তু ঐ মূৰ্ত্তিগুলিকে কখনও কেহ “ঈশ্বর” বলিয়া পূজা করে নাই। হজরৎ মহম্মদ এরূপ ৩৬০টি মূৰ্ত্তি উপাসনালয়ে পাইয়াছিলেন । হজরত ইব্রাহীমের দুই পুত্র ; ইসমাঈল আরবদের আদি পিতা, অতএব হজরত মহম্মদ তাহার বংশজ। অন্ত পুত্র ইসহাক সিরিয়াতে বাস করিয়াছিলেন। ইহদীর ও ও যিশু খৃষ্ট র্তাহার বংশজ। হজরৎ মহম্মদের পূর্বপুরুষেরা মক্কা নগরের ও উপাসনালয়ের রক্ষক ছিলেন, অতএব দেশের রাজা বা শাসনকৰ্ত্ত ছিলেন । তাহার বংশের নাম “কোরেশ” । ঐ বংশ আরব দেশে সৰ্ব্বাপেক্ষা সম্মানিত ছিল। সেকালে