পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা] মহন্থ-রমূ-উল-হরাম 带、 ግ8£ আলীও খলীফের পদ স্বীকার করিলেন। ওসমান বাগদাদে আপনার এক জাতি মোয়াবিয়াকে (Moaviya) শাসন-কৰ্ত্ত নিযুক্ত করিয়াছিলেন । নানা কারণে অলী তাহাকে পদচু্যত করিলেন। মোয়াবিয়া সে-আজ্ঞা প্রতিপালন করিতে কেবল যে অস্বীকার করিলেন তাহ নহে, তিনি অলীর নির্বাচন অন্যায় হইয়াছে বলিয়া আলীকে খলীফ রূপে স্বীকার করিলেন না, যড়যন্ত্র করিয়া সাধারণ মুসলমানদের উত্তেজিত করিয়া যুদ্ধ করিতে প্রস্তুত হইলেন। মুসলমানদের রাজ্য এসময়ে যেরূপ-বিস্তৃত হইয়াছিল, তাহাতে মরুভূমি-বেষ্টিত মক্কা বা মদীনাতে বসিয়া সকল দেশ শাসন করা কাৰ্য্যতঃ অসম্ভব হইয়াছিল। সেইজন্য অলী পারস্যের পশ্চিমে, বাগদাদের পূৰ্ব্বে, কুফ (Koofa) নামক নগরে বাস করিতেন । এই কুফার প্রধান মসজিদে ৬৬১ ঈশাদের জানুয়ারি মাসে প্রকাশ্য স্থানে ঘাতকের হস্তে অলী নিহত হইলেন । অলীর পর, তাহার জ্যেষ্ঠপুত্র অল-হসন (Al-Hassan) খলীফ নির্বাচিত হইলেন । কিন্তু তিনি ষড়যন্ত্র, গোলমাল ইত্যাদি সহ করিতে পারিতেন না ; উপাসনা লইয়া থাকিতে ভালবাসিতেন ; অতএব ৬৬১ ঈশাদের অগষ্ট মাসে তিনি ইচ্ছা করিয়া খলীফার আসন ত্যাগ করিলেন । মোয়াবিয়া নির্বাচিত না হইলেও এখন সমস্ত মুসলমানদের সম্রাটুরূপে দমিশ কে (Damascus) বসিয়া রাজ্য শাসন করিতে লাগিলেন । হসনের সহিত মোয়াবিয়ার যেসন্ধি হইয়াছিল, তাহাতে মোয়াবিয়া স্বীকার করিয়াছিলেন যে, তিনি আপনার জীবন-কালে রাজ্য শাসন করিবেন। তাহার পর আবার হসন, অথবা তাহার অবর্তমানে হুসেন (Al-Husseyn) খলীফ হইবেন । ইহার অল্পকাল পরে হসনকে তাহার পত্নী মোয়াবিয়ার প্ররোচনায় বিযপ্রয়োগে হত্যা করিয়াছিলেন । মোয়াবিয়া প্রাদেশিক শাসনকর্তা ও মুসলমান প্রধানদের, কতক বলদ্বারা, কতক ভয় দেখাইয়া, আপনার পুত্র ইয়াজীদকে (Yazeed) Rafa s ভাবী উত্তরাধিকারী স্বীকার করিতে বাধ্য করিলেন। প্রধানদের মধ্যে কেবল হুসেন ইয়াজীদের যুবরাজ-পদ স্বীকার করেন নাই। অতএব এই সময়ে প্রকারাস্তরে নিৰ্ব্বাচন-প্রথা উঠিয়া গেল ; ইহার পর আর খলীফ নিৰ্ব্বাচিত হয়েন নাই, উত্তরাধিকারস্বত্রে পিতার পর পুত্র খলীফ হইয়াছেন। মুসলমান ঐতিহাসিকরা অলী পৰ্য্যন্ত চার জন খলীফকে ‘খুলফায়-রাশদীন” বলেন, তাহার পর আর খলীফা বলিয়া স্বীকার করেন না। শিয়ার খলীফ শব্দ ব্যবহার করেন না ; তাহারা বলেন—ইমাম (Imam) । র্তাহারা অলীকে প্রথম ইমাম, হসনকে দ্বিতীয়, হুসেনকে তৃতীয় ইমাম বলেন ; এইরূপে দ্বাদশ ইমাম হইয়াছিলেন। শিয়ার প্রথম তিনজনকে (অর্থাৎ আবুবকর, ওমর, ও ওসমান) অনধিকারী রাজ্যাপহারী বলিয়া নিন্দ করেন ; মহরমের সময়ে তাহাদের গালি দিয়া থাকেন, সেইজন্য স্বল্পীদের সহিত বিবাদ হইয়া থাকে। ৬৮০ ঈশাকে মোয়াবিয়ার মৃত্যু হইলে তাহার পুত্র ইয়াজীদ দমিশ কে খলীফরূপে সিংহাসনারোহণ করিলেন। তখন অলী ও ফাতিমার জ্যেষ্ঠপুত্র অল-হুসনের মৃত্যু হইয়াছিল, কনিষ্ঠ অল-হুসেন আপনার পুত্রপৌত্রাদি লইয়া মদীনাতে বাস করিতেছিলেন। কুফাবাসীরা একখানি আবেদনপত্রে নগরের দশ হাজার অধিবাসীর স্বাক্ষর করিয়া হুসেনের কাছে পাঠাইল, তাহাতে লিখিয়াছিল যে, “আমরা, হজরৎ মহম্মদের দৌহিত্র জীবিত থাকিতে, ইয়াজীদের অধীনতা স্বীকার করিতে চাহি না ; আপনি আসুন, আমরা আপনাকে খলীফ করিব। এই আবেদন পত্রে যাহাঁদের স্বাক্ষর অাছে তাহ ছাড়া আরও লক্ষ লক্ষ মুসলমান আপনার পথ চাহিয়া বসিয়া আছে।” হুসেন মদীনাতে আপনার বন্ধুবান্ধবদের এই আবেদনপত্র-দেখাইলেন, পরে মক্কাতে গিয়া সেখানকার বন্ধুদের পরামর্শ জিজ্ঞাসা করিলেন, কিন্তু তাহারা সকলেই কুফবাসীদের কথায় বিশ্বাস করিতে পরামর্শ দিলেন না। সকলেই বলিলেন, “কুফাবাসীরা অতি চঞ্চলমতি, ভীরু ; তাহারা সম্ভবতঃ অস্তরে আপনার খিলাফত কামনা করে, কিন্তু ইয়াজীদের ক্ষাত্র বলের সম্মুখে কেহই আপনার প্রতিজ্ঞ রক্ষা করিবে না, আপনি সেখানে যাইলে মহা বিপদে পড়িবেন।” যাহা হউক, কুফাবাসীদের বারবার আহবানে হসেন লোভ সাম্‌লাইতে পারিলেন না। তিনি সাত আট শত মাইল মরুভূমি অতিক্রমকরিয়া কুফা অভিমুখে যাত্রা করিলেন। তাহার সহিত র্তাহার ও র্তাহার স্বৰ্গীয়