পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] দিকে চাইলে তখন অন্ধকারের বিশ্বজোড়া পর্দাখান উষারাণী তার সুন্দর শুভ্ৰ হাত দিয়ে অল্প অল্প ক’রে ওপর দিকে টেনে তুলছেন। শীতের বাতাস বেশ শীতল হ’লেও ভোরের সময়কার একটা নিৰ্ম্মল শান্ত ভাব তার কনকনে স্পর্শের মধ্য থেকেও আপনার প্রকাশকে ফুটিয়ে তুলছিল। সেব সে-স্পর্শে পুলকিত হয়ে সেই ছোট বাগানটির দিকে চেয়ে রইল। গাদ ফুলে ফুলে বাগানটি অপূৰ্ব্ব শোভাময় হয়ে উঠেছে, মাঝে মাঝে বড় বড় লাল, হলুদে ও গোলাপী রঙের গোলাপ তার গন্ধ বাতাসকে মধুরতর ক’রে তুলেছে । শীতের সময় বাংলা দেশে বৈষ্ণবরা ভোর থাকৃতে নাম গান ক’রে টহল দিয়ে যায়। স্বমিষ্ট কীৰ্ত্তনের স্বর ভাবপূর্ণচন্তে সহজেই বেশ সাড়া দিয়ে শুধু বাইরের চোখের ঘুম নয়—মনের চোখেরও যেন ঘুম কেড়ে নিতে সয় । সেবার পুলক ভরা চিত্ত গান শুনে ভারী খুশী হ’য়ে উঠল । সে তপন জানালাটি ভাল ক’রে খুলে দিয়ে গানের পদগুলি শোনবার জন্যে উন্মুখ হ’য়ে রইল। গায়ক পঞ্চনী বাজিয়ে বার বার গাইছে "জাগো রে নীলমণি জাগে।—” সেব নিম্পন্দ ভাবে অনেকক্ষণ ব’সে রইল। তার সমস্ত অন্তরেন্সিয়ের মধ্যে যেন কোন এক মহান আহবান-ধ্বনি বেজে উঠেছে এম্নি তার মনে হ’তে লাগল। কতক্ষণ পরে তার সেই সাম্নের বাসার বাগানটিতে চোখ পড়তেই আর সে-ভাব রইল না। দেখলে একজন যুবক তার দিকে নিমেষহীন দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। সে-দৃষ্টিতে চমকে উঠে সেবা স’রে এল । ছেলেটি যে স্কুলেরই একজন পড়য়া তাতে তার সন্দেহ ছিল না, কেন না সে শিখরের কাছে শুনেছিল যে, তাদের স্কুলেরই পাচ ছয়টি ছাত্র এখানে বাসা ক’রে থাকে। জয়৷ এই সময়ে ঘর বাট দিতে আসতেই তাকে সেবা জিজ্ঞেস করলে—“হঁ৷ জয়, একটি ছেলে যে ঐ বাগানে দাড়িয়ে আছে ও কে ?” জয় একবার জানালা দিয়ে উকি দিয়েই ফিরে এসে নিজের কাজে হাত লাগিয়ে সেবার কথার জবাব দিলে—“ঐ হোথাকে এক গ আছে সেই গরি জমিদারদের ছেলে । বোডিন না কিসে থাকে । এনাদের থাকা হয় না মৰ্বতে আসছেন আমাদের পাড়াকে পড়াশুনোর নিকুচি করেছে, কেবল রাত ভোর প্রবাল ৭৬৫ বদমাসী । বাপ ঠাকুদা এদের কেন যে পড়তে পাঠায়ছে তা মা কালীই জানছেন। এক-একটি যেন অবতার ” ছেলেদের এতখানি নীচতার পরিচয় সেবা বিশ্বাস কবৃতে পারলে না ; বললে, “জয়ার সঙ্গে আড়ি আছে না-কি যে, অত নিন্দে করা হচ্ছে ?” জয় বললে,—“আমার সঙ্গে কিসের আড়ি থাকুবে সইম ? সত্যি কথাই বলছি। ওনারা ঐ ধরণের লোকই হচ্ছেন। তাই বলছি । এই বয়সেই সব মদ খাওয়া ধরেছে, আরও সব কত নষ্টামী ঘে করে তা বলতে পারব না। ঐ যে বাবুর কাছে অপব-বাবু আর নবীন-বাবু আসে তেনারাষ্ট তে। হোচ্ছেন পাণ্ডা। গিন্নিমাকে ত পেরথম দিনষ্ট বলেছিলাম, ঐ বাবুর ভারী মন্দ লোক । তেনাদের জন্যে আমরা ছোট লোকের বউ-ঝি হ’লেও ভয়ে ভয়ে পথ চলি !" বেশ সুন্দর প্রফুল্ল মন নিয়ে সেব আজ প্রথম নিদ্রাভঙ্গে চোখ মেলেছিল, জয়ীর কপায় তার মন বড় অপ্রসন্ন হয়ে উঠল। প্রিয়ুর ঘুম ভাঙতেই সে সইএর কাছে এসে সব শুনে বললে—“তুই ও যেমন সই, ওর মন্দ আছে তা আমাদের কি ?” প্রিয় মনে করলে যে, তার সম্বন্ধে একটা আলোচনা যে-ভাবে পাড়াতে প’ড়ে গিয়েছে, আর সেই সঙ্গে পাণ্ডার কুচরিত্র পুরুষদের লোভাতুর দৃষ্টি যেমন ভাবে তার দিকে পড়েছে, তাতেই বোধ হয় ছাত্রযুবকটির লালসার চাউনী সেবাকে শঙ্কি ম্ভ ক’রে তুলেছে। সেবা কিন্তু বললে, “ন সই, কথাটা নেহাৎ গায়ে না মাপার কথা নয়। আমার দিকে অমল ক’রে চেয়েছিল ব’লে যে আমি ক্ষয়ে গিয়েছি তা নয় । কিন্তু এই এত অল্প বয়সে ওদের এই মতিগতি কু-অভ্যস্, বদপেয়ালীর কথা শুনে আমার মনটা সত্যিই যেন দরদ বোধ করছে । এরাই আবার দেশের ভবিষ্যৎ ! একে ত দেশের চারদিকেই কেবল ব্যভিচার আর অবিচারের অনস্ত লীলা চলেছে, তার ওপর এখনকার বালক যুবক ছাত্র যারা, তারাও যদি এই বয়েস থেকে এত হীন কলুষিত ভাবে নিজেদের চরিত্রকে কদৰ্য্য ক’রে তোলে তা হ’লে তার পরে যারা আসবে তারা আরও কত হীন হ’য়ে পড়বে ?”