পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

טטף প্রবাসী –ভাদ্র, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড প্রিয় বললে—“যেমন আবহাওয়ার মধ্যে আছে তেমনি সব হবেই। উনি ত দু’ মাসেই হাফিয়ে উঠেছেন । সে-দিন বলছিলেন যে, এখানকার চাকরী পেরে উঠবেন না, হয় বদলী নেবেন, নয় কাজ ছেড়ে দেবেন। কেবলি খুনের খবর আসছে, আর সব খুন এই সব ছাই ভস্ম নিয়ে। প্রিয় কাজে গেল । সেবার এখানে কোন কাজ ছিল না, তবে প্রিয় তাকে মীনাকে প্রত্যহ সকালে একবার ক’রে বই নিয়ে বসাবার ভার দিয়েছিল । আর শিখর ও রমার মেয়ে বিজু এরাও এসে ঐসময় একটু ক’রে তাদের পড়া জেনে নিত। নিজের সামান্ত যা কিছু বিদ্যা সেবা পুজি করতে পেরেছিল এখন এভাবে ত! কাজে লাগাতে পেরে তার ভারী আনন্দ হ’ত । পড়াশুনো তার যেটুকু ইয়েছিল তা খুব বেশী না, তবে শিক্ষার আনন্দ, জ্ঞান-সঞ্চয়ের আনন্দ তাকে যেন নেশার মতো পেয়ে বসেছিল, তাইতে সে তার মনটি সৰ্ব্বদ সজাগ রেথে যেখান থেকে যে-অবকাশে যেটুকু শিখতে পারে তার জন্যে সচেষ্ট থাকৃত । এখানে এসে কেদারের কাছে অনেক ভাল ভাল বই ছিল দেখে তার মন ভারী খুদী হয়েছিল। এগুলি সে মন দিয়ে পড়ত যা বুঝতে পাৰ্বত না তার জন্তে ক্ষুব্ধ হ’লেও পাঠে তার অবসাদ ছিল না । মুখ হাত ধুয়ে ধরে এসে সেবা ছাত্রদের প্রতীক্ষায় বসে রইল। ছেলেদের কলকোলাহল কানে ঢুকতেই সে বুঝতে পারলে যে, পড়ুয়ার হাজির ; অধিকন্তু ভাইটিকে কোলে নিয়ে নন্দা ও এসে উপস্থিত। সামনে এসে দাড়াতেই কিন্তু সেবা বুঝলে যে, পড়বার চাইতে এরা আজ একটা নতুন কি এক খবর নিয়েই বেশী ব্যস্ত । বিশেষ ক’রে খবরটাতে এমন একটা রস আছে যেটা বলিহৃদয়ের বেশ উপযুক্ত খোরাক অর্থাৎ হাস্যরস। জয়া, প্রিয়, সবাই এসে নন্দাদের কাছে দাড়িয়েছে দেখে সেবাও এগিয়ে গিয়ে বললে—“ব্যাপার কি ? হেসেই যে অস্থির সব ।” নন্দ মুখে কাপড় গুজে হাস্ছে, বিজও খিল খিল ক’রে হাস্ছে, শিথরেরও সেই অবস্থা, জয়াও হেসে কুটিকুটি । প্রিয় বললে—“হেসেই সব খুন হবি না খুলে কিছু বলবি ?” জয় বললে—“শোনো গিন্নিম, এই আমি ? ঝাট দিয়ে বাসন নিয়ে ঘাটকে—গেছি”—বাধা দিয়ে শিখর, বললে—“চুপ কর জয়, আমি বলছি। শোন দিদি ঐ :ে নবীনের দিদি...” নন্দ শিখরের মুখে হাত চাপা দিয়ে ব’লে উঠল— “এই আমি বলছি শোন মাসীমা । নবীনের দিদি সকালবেল পুকুরে ডুব দিয়ে নাইছে আর দয়া পাগলকে যে কি কি ব’লে গাল দিচ্ছে ত ধদি শোন একবার আব: পাশেল গিন্নিকে পয্যন্ত ।” গালাগালির মধ্যে হাসিক কিছু গন্ধ না পেয়ে বিরক্ত হ’য়ে প্রিয় বললে—“কি :ে মিথ্যে তোরা হেসে সার। হচ্ছিস তা ত কিছু বুঝ নে পারলাম না আমি।” সেবা বললে—“পাশেলের আবার গিন্নি কি সই, তাও ত বুঝি না।” মন্দ বললে—“ওগো পাশেল-বাবুর গিন্নি। এইবার ভাল ক’রে বলছি শুনে হাস কি না দেখব । দয়া পগিণী, মোড়লদের বাড়ী খুব ধুম ক’রে অন্নপূর্ণো পূজো হয়—” বাধা দিয়ে জয় ব’লে উঠ ল—“ঐ যে গিন্নিম লবনের ঠাকুর গো ।” —“থাম্ তুই’ ব’লে নন্দ জয়াকে ধমক দিয়ে বললে “—পূজোয় ব্রাহ্মণ-ভোজন হয়েছিল । তাদের পাত থেকে সন্দেশ আর ক্ষীরমোহন কুড়িয়ে দয়া পাগলী একট। হাড়ী ভত্তি করেছিল । রাস্তা দিয়ে যখন নিয়ে যাচ্ছে নবীন তথন সেখান দিয়ে যাচ্ছিল ; সে দয়াকে দেখে বললে, ‘অ-দয়া, কি নিয়ে যাচ্ছিস ? " দয়া বললে, “দাদাঠাকুর গো, এক হাড়ী সন্দেশ নিয়ে যাচ্ছি। এই দ্যtখ ক্যানে, লাতিন আমার আর-বছর শ্বশুর-ঘরকে খালছে আর আস্বার নামটি নাই। সে গীকে ভাল মন্দ কোনো খাবার-প্রব্যি ম্যালে না দাদাঠাকুর, এই এক হাড়ী খাবার, লাতিন আমার ঘরকে থাকূলে কতই খাতে আহ হ৷”—নবীন তার দুঃখু দেখে বললে—“তুই না হয় তার শ্বশুর ঘরে গিয়ে দিয়ে আয় না।" দয়া বললে, “পরের বাড়ীর ঝি আমি, কাজের বাড়ীতে ছুটি নেই, কেমন ক’রে যাব ?" তখন নবীন বললে, “বেশতো ষ্টেসনে নিয়ে গিয়ে পার্শেল ক’রে দিগে না।” দয়া পাগলী