পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] | শুনিয়া আসিলে ছুটি’ আস্ফালিয়া দুরন্ত আক্রোশ, বক্ষে স্নেহজল, মুখে অভয়-নিৰ্ঘোষ— জাহ্নবীজড়িত-কেশ রুদ্র-শাস্ত মহেশের মত,— প্রলয়ে দুৰ্ব্বার আর কল্যাণ-নিরত। দক্ষনাশে মত্তপদ, হস্তে ডঙ্কা, বয়ানে বিষাণ, নৃত্যমান যেমন ভৈরব চিরকাল করুণ বিলাতে ঢালে জাহ্নবীর জলধারা হতে জটাজাল, তেমনি হে দুনিবার ভৈরব বরষা, ধরণী ভগিনী তরে হে শাস্ত ভরসা, প্রলয়ে দুৰ্ব্বার তুমি, দানব নিদাঘে দলিবারে বজ্ৰ হাতে অগ্নি চোখে দেখা দিলে দিগন্তের পারে, ধীরে ধীরে ব্যাপিয়া আবরি’ চতুর্দিক দুৰ্দ্দাস্ত নিভাঁক -&& নাশিছ মারিছ ঐ অগ্নিশ্বাস দৈত্য নিদাঘেরে পলায়ন-পস্থ। তার সব ঘেরে ঘেরে । প্ৰলয়স্বরূপ শুধু তবু নহ তুমি— শীতলিয়া প্রচুম্বিয়া ধরণীর ভূমি ছলছল অবিরল রাশি রাশি ঢেলে দাও স্নিগ্ধ জলধারা ধূর্জটির জটাচুত জাহ্নবীর পারা। হে বরষা, হে মহেশ, প্রলয়ে মঙ্গলে অপরূপ, নির্বাক্ বিশ্বের বুকে দিগ্বিজয়ী ভূপ, হে কালবৈশাখী, তুমি কাল নও, অনন্ত মঙ্গল— এক হস্ত নাশলিপ্ত অন্য হস্ত স্বজনে চঞ্চল ; দেবেশ মহেশ-সম ধ্বংস দাও আবার কল্যাণ, হে কালবৈশার্থী রুদ্র, হে বিদ্রোহী, প্রণমি তোমারে মতপ্রাণ ।

কাব্যপরিচয় ( আলো ও ছায়া, মাল্য ও নিৰ্ম্মাল্য ) ঐ রাখালচন্দ্র সেন কবি কামিনী রায় অনেক সময় নিজের কবিতাকে ‘সেকেলে’ বলিয়া আক্ষেপ করেন। কিন্তু কবিতার বয়স নাই, একথাটা বোধ হয় অতি পুরাতন কথা। তবুও এ পুরাতন কথাটি মাঝে-মাঝে স্মরণ না করিলে আধুনিকতার অত্যাচার হইতে পরিত্রাণ পাইবার পথ থাকে না । আজিও আষাঢ়ে মেঘের সমারোহ যখন কতযুগসঞ্চিত যক্ষের ব্যথা সকল বিরহীর মনে ব্যথা জাগায়, সহস্ৰ বৎসরের অন্তরাল হইতে তমসাতীরে সীতা এখনও যখন মন কাদায়, তখনই নূতন করিয়া বুঝিয়া লই এই মামুষের মন বহু শতাব্দীর স্রোতৃে ভাসিয়াও কতটুকু কম বদল হইয়াছে। সেই মাহুষের মনের যত বেদনা, যত আনন্দ, যত আশা কবি কামিনী রায়ের কবিতায় অভিব্যক্তি পাইয়াছে, তা’র মাধুৰ্য্য, বালো, যৌবনে, স্বদেশে, প্রবাসে, আমাকে কত মুগ্ধ করিয়াছে, সেই কথাটাই আজ বলিতে প্রয়াস পাইতেছি। কবি যে পাগল হাওয়া বঁাশীতে বন্দী করিয়া স্বরে জাগাইয়াছেন, যে পলাতক ছায় আপন মন হইতে তুলিয়া মধুর তুলিকায় ছবিতে ফুটাইয়াছেন, তাহা যাদের ভালো লাগিয়াছে, তাহাদের কাছে এ আলোচনা অবাস্তর হইবে না। আমার কাছে তিনি প্রধানতঃ, প্রেমের কবি। তাহার কাব্যে অন্ত শ্রেণীর কবিতা যে নাই, তাহ নহে। তবে এইটি তার বীণার প্রধান স্থর, এই তার সর্বশ্রেষ্ঠ বাণী । সে পূজায় যাহা উপচার-যৌবন—তাহারই তপস্যা লইয়া এ-কাহিনী আরম্ভ করি। বস্তুতঃ যৌবন-তপস্যার মূল স্বত্র ধরিতে পারিলে, তাহার প্রেমের আদর্শ অনেকটা