পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ፃፃ8 এক-একটি প্রজাপতি পাঁচ ছয় শতের কম ডিম্ব প্রসব করে না। ডিম্ব প্রসবের পরই তাহার। মৃত্যুমুখে পতিত হয়। এই জন্য পুং-প্রজাপতি স্ত্রী-প্রজাপতি অপেক্ষ কিছু অধিককাল জীবিত থাকে। ডিমগুলি আকারে খুবই ছোট হয় । ডিমগুলি সময় সময় ধুইয়া রৌদ্রের উত্তাপ দিলে অল্প কয়েকদিনের ভিতরেই ডিম ফাটিয়: গিয়া উহ। হইতে ছয় প বিশিষ্ট ক্ষুদ্র কীট বাহির হয়। কীটগুলির অতিশয় যত্ন করিতে হয় । সময়ে ইহাদের যত্ব না হইলে মরিয়া যাইবারই সম্ভাবনা । কালশিরা, কটাবা, চুনোকেটে ( সন্দি ), রসা (সদি গবমি) প্রভূতি রোগে আক্রান্ত হয় । আবার মাছি, টিকটিকি, আরম্নল প্রভৃতি শত্রু ইহাদের বড়ই অনিষ্ট সাধন করে। পলুর গৃহ মাঝে মাঝে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করিয়া চুণ ছিটাইয়া দিয়া গন্ধকের ধুম দিলে ইহাদিগকে অনেক পরিমাণে শত্রুর হাত হইতে রক্ষণ করা যায়। ডালা চন্দ্রক দৈনিক পরিষ্কার করিতে হয় । কীটগুলি যাহাতে কোনরূপ শত্রু বা ব্যাধি দ্বারা আক্রান্ত হইয়া অবিলম্বে বিনষ্ট হইয়া না যায় তাহার প্রতি স্বতীয় দৃষ্টি রাখা হয় । অল্পবয়স্ক কীটগুলির চক্ষু থাকে না । গুটি পোকার ( প্রজাপতিরূপে পরিণত হইবার পূর্ব অবস্থাপ্রাপ্ত কীট ) চৌদ্ধটি করিয়! চক্ষু থাকে । ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কীটগুলির গুটি পোকার আকার বা বুদ্ধাবস্থা প্রাপ্ত হইতে প্রায় দেড় দুই মাস সময় লাগে অর্থাৎ কীট গুলিকে দেড় দুই মাস লালন-পালন না করিলে তাহারা গুটি প্রস্তুত করিবার মত উপযোগী হয় না। প্রাপ্তবয়স্ক কীটগুলিকে তিন ইঞ্চির অধিক লম্বা হইতে দেখা যায় না । তাহারা শিশুকাল হইতে আরম্ভ করিয়া এই সময় পৰ্য্যস্ত তাহাদের দেহের আকার পাচ বার পরিবর্তন করিয়া ফেলে। এই আকার পরিবর্তনের নাম কলপ লাগা আহার ত্যাগ করিয়া তাহারা চন্ধুরকির ধারে ধারে গুটি প্রস্তুতে মন দেয়। গুটিগুলি দেখিতে পীতবর্ণ। গুটি হইতে যাহাতে প্রজাপতি বাহির হইয়া না যায় তজ্জন্ত তসর গুটির ন্যায় এই গুটিগুলিকে স্থত। বাহির করিবার পূৰ্ব্বে গরম জল বা বাম্পে সিদ্ধ করিয়া লওয়া হয় । কারণ গুটি হইতে প্রজাপতি প্রবাসী—ভাদে, Y 55 কাটগুলি সময় সময় - { ২৬শ ভাগ ১ম খণ্ড বাহির হইয়া গেলে গুটিতে লালা লাগিয়া স্থত টেকসই কম হইয়া যায় । এক-একটি গুটি হইতে প্রায় ৪৪০ গজ বা সিকি মাইল পৰ্য্যন্ত লম্বা স্থত পাওয়া যায় । একসের র্কাচ রেশমের মূল্য বিশ বাইশ টাকারও অধিক। ঐ রেশম নিয়া বস্ত্র বয়ন করাইলে তাহার মূল্য পঞ্চাশ যাট টাকার কম হয় না । তিন সহস্র কীট হইতে প্রায় ত্রিশ পয়ত্রিশ টাকা মূল্যের রেশম পাওয়া যায় । ১০০ শত ভাগ রেশমের মধ্য হইতে ৫৩ ভাগ খাটি রেশম পাওয়া যায় ; বাকী ২১ ভাগ শিরিষ ও আঠা, ২৪ ভাগ সাদ। মত একপ্রকার বস্তু এবং বাকী ২ ভাগ মোম, রজন, চৰ্ব্বি প্রভৃতি পদার্থ মিশ্রিত থাকে । আগুন লাগাইলে খাটি রেশম ধূমাইয়া ধুমাইয়া পুড়িয়া থাকে এবং তাহা হইতে দুৰ্গন্ধ বাহির হয় । কিন্তু পাট, তুলা প্রভৃতি মিশ্রিত ভেজাল দেওয়া রেশম না ধূমাইয়৷ শীঘ্রই দাউ দাউ করিয়া পুড়িয়া যায়। প্রকৃত রেশম পরীক্ষার ইহা একটি প্রকৃষ্ট উপায় । ২৩০০ গুটি পোকায় প্রায় অৰ্দ্ধসের রেশম উৎপাদন করিতে পারে । একমণ কাচা রেশমের গুটি শুষ্ক হইয়। ওজনে প্রায় বার তের সের হয় । বার তের সের শুষ্ক গুটি হইতে প্রায় দুই সের আন্দাজ সুতা পাওয়া যায় । ইসলামপুর প্রভৃতি গ্রামে ইংলণ্ড প্রভৃতি দেশের জন্য রেশমের ৭ গজি ও ১০ গজি থান, চাদর এবং রুমাল বয়ন হইয়া থাকে । বীরভূম হইতে ১৯১৩-১৪ সনে ৯১৭১৪৮২ টাকার ও ১৯১৪-১৫ সনে ৪ ১৮৩০৩২ টাকার রেশম বিদেশে রপ্তানি হইয়াছিল। ভারতবর্ষ হইতে প্রতিবৎসর পঞ্চাশ ষাট লক্ষ টাকার অধিক রেশম বিদেশে রপ্তানি হয় । এদেশে প্রতিবৎসর প্রায় ৩০ হাজার মণ রেশম-স্থত। প্রস্তুত হয় ; তন্মধ্যে ইহার অৰ্দ্ধেকের উপর বেশম ভারতবর্ষের লোকে ব্যবহার করে । সমগ্র ভারতের উক্ত রেশম মধ্যে কেবল বীরভূম হইতেই পাঁচ ছয় হাজার মণ রেশম প্রস্তুত হয় । আমাদের দেশে সাধারণতঃ রেশমী বস্ত্ৰ পট্টবস্ত্র নামে অভিহিত হয় । এই বস্ত্র অতি শুদ্ধ এবং পবিত্র জিনিষ ।