পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓግ& একটা সিকি বের ক’রে ঠাকুরের হাতে দিয়ে বললে “—এই না ও ।” মুখখান মান ক’রে পরণের ছেড়া ময়লা পাচ হাত কাপড়টা দেখিয়ে সে বস্লে—“দেখুন বাবু, এই কাপড় প’রে থাকি ; আপনাদের সামনে বেরুতেও লজ্জ করে । আসার সময় ছোট মেয়েট। বারবার ব’লে দিয়েছিল, তার জন্যে যেন পূজোর সময় একট। ভূরে সাড়ী নিয়ে যাই ।” বাঙ্গালী ব্রাহ্মণ, রোধে খায়, বাংলার এ দৃশ্য অপরিচিত নয়। পকেট থেকে আর-একটা সিকি বের ক'রে বললে”—এই নিন, আর কিছু বলবেন না।” ঠাকুর অনেকখানি চ'লে গিয়েছিল, ডেকে ফিরিয়ে এণে সে বল লে"—আপনার আট আনা পয়স দিন ।” তার পর হাতে একট। টাকা দিয়ে বললে।”—এর অৰ্দ্ধেক চাকরকে দেবেন, আর অৰ্দ্ধেক আপনি নেবেন ।” শেষে বাকি সিকি দুটে। ফিরিয়ে দিয়ে বললে,”—এ হচ্ছে আপনার মেয়ের কাপড়ের জন্য ।” সেদিন সে কলেজে ও গিয়েছিল, ক্লাসেও বসেছিল, কিন্তু শত চেষ্টা ক’রেও প্রফেসারের একটা কথাও কানে তুলতে পারেনি । VH বিকেল-বেল কলেজ থেকে এসে হাত মুখ ধুয়ে সে বেরিয়ে পড়ল সহরের পথে, পকেটে হাত দিয়ে একবার দেখে নিলে—দুটাক আট আনা আছে । পাচ টাকা বেশী ছিল, অৰ্দ্ধেক গেছে, আর অৰ্দ্ধেক এখনও রয়েছে। মনে মনে ভাবছিল, এতেই ঢের হবে । চোখের সামনে বারবার সার বেঁধে ভেসে উঠছিল পূজোর দোকানের ছবি-কত লোকের আনাগোনা, কলরোল, আনন্দ, উৎসাহ । , সেও যাচ্ছে তার আড়াই টাকার সওদা কিনতে । কি যে কিনবে সে নিজেও জানে না। কিন্তু কিনতে যে ইবেই সে-বিষয়েও কোনো সন্দেহ ছিল না । একটা মোড় ঘুরতেই তার চোখে পড়ল, সাত আট বছরের একটা পশ্চিমা ছেলে ; পরণে একটা নেংট, উপুড় হ’য়ে রাস্তার মধ্যে কি খুজছে। কাছে আসতেই প্রবাসী—ভাদ্র, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড সে খোজ ছেড়ে সোজা হ’য়ে দাড়িয়ে বললে—“চারটে পয়সা আছে বাৰু?" অবাকু হ’য়ে সে জিজ্ঞাসা করলে, “কেন রে ?” কিন্তু হঠাৎ ছেলেটার চোখের দিকে চেয়ে বড় বড় জলের ফোটা দেখেই সে চম্কে উঠে বিবর্ণমুখে তাড়াতাড়ি ব’লে উঠল—“ন না, বলতে হবে না, আমার কাছে একটা পয়সাও নেই ।” পাঞ্জাবীর খালি পকেটটা বারবার সজোরে ঝাকি দিয়ে নেড়ে সে দ্রুতপদে চলে গেল । এক নিঃশ্বাসে সে যখন সহরের মাঝখানটায় এসে পেীছল, তখন সে হাফ ছেড়ে বঁাচল । একটা চেন। ছেলের সঙ্গে দেখা হতেই সে ব’লে উঠল—“আমাদের দেশের এইসব ভিখিরীদের উচিত ।" সহপাঠী জিজ্ঞাস করলে --“কেন ?” সে বললে—“বিলেতে তাই দেয় । এর সব এক-একটা চোব ।” ছেলেটি হেসে নিজের কাজে চ’লে গেল, কিন্তু তার আর পা উঠছিল না । কোথা থেকে একটা ক্লান্তি এসে সমস্ত দেহটাকে জড়িয়ে ধরূলে । কিছু পূৰ্ব্বেই চোখের সামনে ষে-পুলকের আলো জলছিল, কখন তা নিভে গেল । আশে-পাশে সারি সারি দোকান তাদের বিচিত্র পসরা সাজিয়ে বসেছিল ; সেই লোকজন, কলরোল, আনাগোনা । কিন্তু তাদের উপর থেকে সে-দীপ্তিটুকু যেন কখন কোথায় মিশে গিয়েছিল, আর তার চোখের কোণ থেকেও সে-অঞ্জনটুকুও যেন কে মুছে ফেলেছিল। দেহের জড়তাকে সে একেবার সজোরে ঝেড়ে ফেলে একটা দোকানে উঠে পড়ল । কিন্তু কিনবে কি ? কেনার জিনিষের ত অন্ত নেই, কিন্তু পূজোর বেসাতি কোথায়? যার উপরেই চোখ পড়ে, তার উপরেই ভেসে উঠে দুটো জলে-ভর চোখ । কিন্তু না কিনলেও তো নয়, পকেটের ভিতর থেকে টাকা কটার তপ্ত তাপ এসে যেন গায়ে ফুট্‌ছিল । জেলে পুরে দেওয়৷