পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] একটা একটা ক’রে কত দোকানেই উঠল,কিন্তু একটা জিনিষও কিনতে পারলে না । সন্ধ্যা হ’য়ে এসেছিল,—পথের আলো,দোকানের আলো, সবে মিলে একটা রঙীন নেশার রাজ্য গ’ড়ে তুলেছিল, কিন্তু বাইরের আলো তার চোখে অাধারই ঘনিয়ে তুলছিল । যে-পথে এসেছিল, সেই পথেই ফিরে চলল, বুকের ভিতর হতে কে যেন ডেকে বলছিল—চারটে পয়সা ফিরিয়ে দিয়ে এস ; পূজোর বেসাতি ভোগের বেসাতি কোরে না । সেই মোড়টার কাছে আসতেই বুকট। তার ধড়াস ক’রে উঠল, সদ্য বিধবা যেমন ক’রে আছাড় খেয়ে পড়ে। সন্ধ্যার সেই অস্পষ্ট আলোতেও ছেলেট। তার সেই হারানো জিনিষ খুজে ফিরছিল। পকেট থেকে একটা আনি তুলতে যেয়েও সে আর তুলতে পারলে না, ব্যথিত মুখে জিজ্ঞাসা করল,—“কি রে ধু জ ছিস কি ?” সাইকেলে আর্য্যাবর্ত ও কাশ্মীর จฯ ๆ খুজছিল চারটে পয়সা । কুলীর ছেলে, মা পড়েছিল কাল-রোগে, বাপ দিয়েছিল চারটে পয়সা, সাগু মিশ্রি কিনে আনতে ; পথের মাঝে হারিয়ে ফেলে চোখের জলে খুজে ফিরছিল। গলাটা পরিষ্কার ক’রে সে বললে,—“ত এখনও বাড়ীর থেকে পয়স নিয়ে সা গুমিশ্রি কিনে নিস্নে কেন ? তোর ম! যে এখনও না থেয়ে আছেরে !” . ফুপিয়ে উঠে ছেলেট বললে—“বাপ মারূবে বাবুজি ।” তার চোখ ছাপিয়ে জল আসছিল। পকেটে তখনও তার আড়াইট টাকা ; যা ছিল সব তুলে নিয়ে ছেলেটার হাতে দেবে— কিন্তু টাকা! পকেটশুদ্ধ কে কেটে নিয়ে গেছে । সন্ধ্যার আকাশে তখন তারার ঢেউগুলো মিটমিট ক’রে জলছিল ; পূজোর বাড়ী থেকে আরতির ধ্বনি বাতাসে ভেসে আসছিল, কানে কানে বলছিল, অতিরিক্তের মুঠে তিনি এমনি ক’রেই রিক্ত করেন । সাইকেলে আর্য্যাবর্ত ও কাশ্মীর শ্রী অশোক মুখোপাধ্যায় বিহার সেপ্টেম্বর, শনিবার—সকাল ৬টায় রওনা হ’লাম। দূর থেকে ট্রাঙ্ক রোড বড় বড় গাছের সারির মধ্যে যেন একটা প্রকাগু অজগরের মতন দেখাচ্ছে । মাইল আট আসার পর বরাকর নদীর পুলের ওপর এসে পড়লাম । এখানকার দৃপ্ত বেশ সুন্দর। রাস্তার দু’দিকে যতদূর দেখা যায় বেশ ফাঁক, মাঝে-মাঝে শাল-পলাশের বন আর দূরে নীল পাহাড়ের সারি। বরাকর নদী বাংলা ও বিহারের সীমানা। নদীর এপারে এসে আমরা বাংলা মাকে নতি জানিয়ে কিছুদিনের মতন বিদায় নিলাম । ধৃত ক্রমেই বদলাতে মুরু হয়েছে। ঢেউ-খেলানে ২৬শে রাস্তার ওপর দিয়ে অতিকষ্টে সাইকেল চালাচ্ছি। আর ংলার সেই আকাশতলে-মেশা হরিৎক্ষেত্র নেই, রাস্তার পাশের বাশ ঝাড় ও নারিকেল-গাছের শ্রেণীও আদৃত হয়ে গেছে। লাল রঙের মোটা থানের কাপড় পর বিহারী মেয়ের কোথাও কুয়া থেকে জল তুলছে, কোথাও বা পুরুষদের সকল কাজে সাহায্য করছে । শক্ত মাটির মেয়ে ব’লে শক্ত কাজের মধ্য দিয়েও এদের স্বাস্থ্য হয়েছে অটুট। ঘণ্টাখানেক পর নিসচিটী ব’লে একটা ছোট চটতে পোঁছলাম। চটর সঙ্গে এই আমাদের প্রথম পরিচয় । এখানকার একমাত্র বাঙ্গালী শ্ৰীযুত তিনকড়ি দত্ত মশায়ের