পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓኰ8 প্রবাসী—ভান্দ্র, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড এই নিখিল দৃশ্যের যদি ভ্ৰষ্ট না থাকিত, তবে তাহ নিরর্থক হইত। তোমার অনন্ত সৌন্দৰ্য্য ও তেজ দিয়া তুমি যে অপূৰ্ব্ব বর্ণগন্ধময় নয়নাভিরাম প্রকৃতির স্বষ্টি করিলে, তাহা আমি না থাকিলে কে উপভোগ করিত ? 'দুহু বস্তুদ্বয় দেখিয়া আমি প্রতিনিয়ত বড় আনন্দ পাইতেছি?—এই কথাটি আমার মুখ দিয়া বাহির করাইয়। তুমি আপনাকে ধন্য করিতে চাও। আমাকে তুমিই যে মহান করিয়া স্বষ্টি করিয়াছ । “আমার মাঝে তোমার লীলা হবে”—আমার মধ্য দিয়াই যে তুমি তোমাকে ফুটাইয়া তুলিলে— 岭 এই ঘরে সব খুলে যাবে দ্বার ঘুচে যাবে সকল অহঙ্কার আনন্দময় তোমার এ সংসারে আমার কিছু আর বাকি না রবে। “সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন স্বর” ইহা ও ঐ গভীর ভাবদ্যোতক । ভাব হইতে স্কুলু ও রূপ হইতে ভাবে রূপান্তরিত হইয় রসময় অমৃতপুরুষ আপনাকে নব নব ভাবে উপভোগ করিতেছেন । - যাহার অতীন্দ্রিয় বৃত্তি প্রস্ফুটিত হয় নাই, তিনি সীমার মাঝে অসীমের আবির্ভাব হৃদয়ঙ্গম করিতে পারেন না। কবি দিব্য অনুভূতিবলে শুনিতে পান— “জগত জুড়ে উদ্বার স্বরে আনন্দ গান বাজে ।” জল স্থল, তরুলতা, পত্র পুষ্পে অসীমের মুর ঝঙ্কত হইতেছে। সেই স্বরের ভিতর দিয়া পূর্ণ প্রাণের অমৃতময় রসধারা তাহাদিগকে নব নব রসে সঞ্জীবিত করিতেছে । স্বাক্ষ দৃষ্টিশক্তি বলে কবি দেখিতে পান— প্রেমে প্রাণে গানে গন্ধে আলোকে পুলকে প্লাবিত করিয়া-নিখিল দু্যলোক ভুলোকে তোমার অমল অমৃত পড়িছে ঝরিয়া । উপনিষদ বলেন দিব্য দৃষ্টিলাভ ন হইলে স্বষ্টি-রহস্য বোধগম্য হয় না। জীব অজ্ঞানে সমাচ্ছন্ন, অবিদ্যাপ্রযুক্ত সে নিখিল দৃপ্ত ভিন্নরূপে সন্দর্শন করিতেছে । কবির চক্ষে যে সকল বস্তু আনন্দপ্রদ, তাহার কাছে সেসকল দুঃখময় । ইহার কারণ কবি সমস্তের মধ্যে ব্রহ্মসত্তা উপলব্ধি করিতেছেন । জীবের প্রধান রিপু অহঙ্কার। এই অহঙ্কারের মোহে জীব আপনার স্বরূপ হইতে দূরে রহিয়াছে। অহঙ্কার নাশপ্রাপ্ত না হইলে প্রকৃত আমিত্বের বিকাশ হয় না । গীতাঞ্জলির প্রথম গানই— “আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণ ধুলার তলে। সকল অহঙ্কার হে আমার, ডুবাও চোখের জলে ।” আপনার গৌরবগাথা গান করিয়া, যশ খ্যাতি লাভের জন্য ছুটাছুটি করিয়া, জীব কেবল আপনাকেই শত পাকে জড়াইতেছে । কবি প্রার্থনা করিতেছেন হে প্রভো, তুমি আমার এই আত্মপ্রশংসালাভেচ্ছা সংযত কর । “তোমারই ইচ্ছা করহে পূর্ণ, আমার জীবন মাঝে।” “অহং'এর মুখর ধ্বনিতে হৃদয়ে প্রকৃত শাস্তি পাওয়া যায় না। শ্ৰীভগবানের কাছে পূর্ণ আত্মোৎসর্গের ফলেই চরম শান্তি পাওয়া যায় । কবি তাই প্রার্থনা করিতেছেন “আমারে আড়াল করিয়া দাড়াও হৃদয় পদ্মদলে ।” অহঙ্কারের ন্যায় বাসনাও জীবের বন্ধনের কারণ । জীব প্রতিনিয়ত বাসনাচক্রে বিঘূর্ণিত হইতেছে। রজনীকান্ত গাহিয়াছিলেন “লক্ষ্য শূন্য লক্ষ বাসনা ছুটিছে গভীর আধারে।” একমাত্র ভগবানের কাছে পূর্ণ আত্ম নিবেদনের ফলে বাসনা কমিয়া আসে ।–“আমি বহু বাসনায় প্রাণপণে চাই, বর্কিত করে বাঁচালে মোরে।” জ্ঞানের বিকাশ হইলে সাধক দেখেন, জীবের ত কোন অভাবই নাই। পরম পুরুষ তাহার যে কোন অভাবই রাখেন নাই। “আকাশ আলোক তন্তু মন প্রাণ” তিনি ত না চাহিতেই দান করিয়াছেন, তাহার এই মহাদান, এই অপার করুণার কথা ভাবিলে “বহু বাসনার” আর স্থান থাকে না । হৃদয় কৃতজ্ঞতায় পূর্ণ হইয় তাহার কাছে মস্তক চিরঅবনত করিয়া রাখে । কিন্তু মানুষ এই পরম তত্ব বুঝিয়াও বুঝিতে পারে না । ইন্দ্রিয়গ্রাহ বিষয়সমূহ ভোগ করিতে করিতে সে এমনি তন্ময় হইয় পড়িয়াছে, যে অতীন্দ্রিয় বিষয়ের দিকে চিত্ত ফিরাইবার আদেী অবসর পায় না। অন্তর্জগতের কথা একরূপ বিস্কৃত হইয়াই আছে। অনিত্য বস্তুর প্রতি . আত্যন্তিক অমুরাগের ফলে সে তাহাকেই সত্য বলিয়া গ্রহণ করিয়াছে। ফলে আসক্তি জালে বদ্ধ হুইয়া অবিরাম “যাওয়া আসার’ দুঃসহ কষ্ট ভোগ করিতেছে। আসক্তিনাশ