পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] না হওয়া পৰ্য্যন্ত যাতায়াতের বিরাম হইবে না ও আত্যন্তিক সুখলাভ হইবে না । কবি বলিতেছেন— স্বরের বোঝা টেনে টেনে পারের ঘাটে রাখলি এনে, তাই যে তোরে বারে বারে ফিরতে হ'ল গেলি ভুলে ! মহাযাত্রার সময় জীব যদি তাহার পুঞ্জীভূত বিষয়বাসনার কথা একেবারে বিস্মৃত হয়, তবে তাহাকে আর ফিরিয়া আসিতে হয় না ! জীবনের প্রসার বৃহত্তর করিতে হইবে। সঙ্কীর্ণতার মধ্যেই অজ্ঞান ও অবিদ্যার লীলা । মাহুষ যদি বৃহত্তের সহিত প্রাণের সহজ যোগসাধন করিতে পারে তবে আর দুঃখ কোথায় ? প্রকৃতির জগত ও মানুষের জগতে মিল নাই । মহিষ প্রকৃতি হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া নিজের একটি ভিন্ন জগত স্বষ্টি করিয়াছে । তাই প্রকৃতির হাওয়া মানুষের রাজ্যে প্রবেশ করিতে পারিতেছে না। প্রকৃতির আনন্দ ধারা হইতে তাই মানুষ চির বঞ্চিত। প্রকৃতি হইতে দূরে রহিয়াছে, তাই সে বৃহৎ বা অসীমের সহিত চিত্তের সহজ যোগ হারাইয়াছে। আলো বাতাসের মধ্য দিয়া অনস্ত পুরুষের যে শাশ্বত আবাহন আসিতেছে, তাহা মানুষের অবরুদ্ধ হৃদয় দ্বারে ব্যাহত হইয়া ফিরিয়া যাইতেছে। কবি বলিতেছেন— তোমার আকাশ, উদার আলোকধারা, দ্বার ছোট দেখে ফেরে না যেন গো তারা। ছয় ঋতু যেন সহজ নৃত্যে আসে অন্তর মোর নিত্য নুতন সাজে। * আনন্দপুরুষ র্তার অপার আনন্দ সারা নিখিলে প্রবাহিত করিয়াছেন। প্রকৃতি সেই আনন্দের স্বরেই বাধা । তাই পত্র পুষ্পময়ী কাননরাণীর এমন ভুবনমোহন সৌন্দৰ্য্য। কবি ইহা লক্ষ্য করিয়া অনন্ত পুরুষকে বলিতেছেন "তব আনন্দ আমার অঙ্গে মনে, বাধা যেন নাহি পায় কোন আবরণে " স্বখে দুঃখে সম্পদে বিপদে তার আনন্দ যেন “পুণ্য আলোক সম” জলিয়া উঠে। দিনের সৰ্ব্বকৰ্ম্ম মাঝে তার আনন্দ সমস্ত দীনতা চূর্ণ করিয়া যেন দিব্যভাবে ফুটিয়া উঠে। " তিনিই ষে একমাত্র নিত্য আনন্দের বস্তু। তাহাকে পাইলেই যে সকল পিপাসার অবসান হয়, তাহ সাধক গীতাঞ্জলি ও অতীন্দ্রিয় তত্ত্ব ՊԵé কবির হৃদয়ে প্রতিভাত হইল। কিন্তু মোহান্ধ চিত্ত তাহাতে বুঝিয়াও বুঝে না :– জানিহে তুমি মম জীবনে শ্রেয়তম, c१भन ५न पत्रांब्र नीहि cय cठांभ मभ তবু যে ভাঙ্গাচোরা ঘরেতে আছে পোর ফেলিয়া যেতে পারি না যে ! এইখানেই চিত্তের দুৰ্ব্বলতা। বিষয়বস্তুর প্রতি মামুষের এক একবার ঘৃণা আসে। কিন্তু তাহা অধিকক্ষণ স্থায়ী হয় না । কবি বলিতেছেন—“আমি যে প্রাণভরি তাদের ঘৃণা করি, তবুও তাই ভালবাসি।” কবি আত্মবিশ্লেষণ করিয়া অমৃতপ্ত হৃদয়ে বলিতেছেন ‘এতই আছে বাকি, জমেছে এত ফাকি, কত যে বিফলতা, কত যে ঢাকাঢাকি।” চিত্তের এই দুর্বলতা ও নানাবিধ অসম্পূর্ণতার কথা ভাবিয়া কবি দেখিলেন নিখিল স্বামীর করুণা ব্যতিরেকে মুক্তির উপায় নাই । তাই প্রার্থন করিলেন “তব দয়া দিয়ে হবেগে মোর জীবন ধুতে— এতদিন সৰ্ব্বাঙ্গে মলিনত মাখ ছিল । আজ অভুতপ্ত হৃদয়ে শ্ৰীভগবানের পুণ্য পবিত্র স্পর্শ ভিক্ষা করিতেছেন – w অীজ ঐ শুভ্র কোলের তরে ব্যাকুল হৃদয় কেঁদে মরে, দিয়োন গো দিয়েনি। আর ধুলার শুতে । ভগবৎ-বিরহে কবির প্রাণ কাতর হইয়াছে । নানা ঘাত-প্রতিঘাতের পর প্রকৃত প্রেমের স্ফুক্তি হইল। উপনিষদের জ্ঞান সাধক হৃদয়ে পূর্ণতা প্রাপ্ত হয় যখন সাধকের প্রকৃত রসামুভূতি বিকাশ পাইতে থাকে। রসের মধ্য দিয়াই অমৃতপুরুষকে পূর্ণরূপে পাওয়া ফুয়। উপনিষদের জ্ঞান যেমন রবীন্দ্রনাথের উপর প্রভাব বিস্তার করিয়াছে। বৈষ্ণব সাহিত্যের আকৃত্রিম রসধারা তাহার প্রতিভাকে ততোধিক প্রভাবান্বিত করিয়াছে। এতদুভয়ের সমন্বয়েই কবির সাধনা শতদলের ন্যায় বিকাশ প্রাপ্ত হইয়াছে। জ্ঞান প্রেমের রসে ‘পাক’ না হইলে পূর্ণ আনন্দ দান করিতে পারে না। এই অপূৰ্ব্ব প্রেমাচুভূতিই রবীন্দ্রনাথকে মহিমা মণ্ডিত করিয়াছে । রবীন্দ্রনাথের ভগবৎ-বিরহ অনেকাংশে শ্রীরাধার বিরহের সহিত তুলনীয়। বিরহের ঘণীভূত মূৰ্ত্তি, বৈষ্ণব কবিগণ