পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম:সংখ্যা ] গবেষণা-বিধায়না ও উন্মোচন৷ Ե-ծ > আছে । তন্নিমিত্তই উক্ত বিধিগুলিকে প্রকৃত (real) বলিতে সন্দেহ জন্মে। ইহাদের মূলে একটি প্রকৃত বিধি আছে বলিয়। ধারণ হয় এবং উক্ত বিধি নির্দেশ পূৰ্ব্বক আক্ষিক zoso (experiment) 3 বিবিধ সংস্কারযুক্ত বিধির সহায়তায় যাচাই করিয়া তাহ প্রতিষ্ঠিত করা হয় । এই প্রকারের গবেষণাকে উন্মোচন বলা হইবে। কোপানিকাস জ্যোতিষ্ক-মণ্ডলীর গতিবিধি পৰ্য্যবেক্ষণ করিতেছিলেন। পর্য্যবেক্ষণে উক্ত গতিতে তিনি কিঞ্চিং অস্বাভাবিকতা পরিদর্শন করিলেন । অধিকাংশ জ্যোতিষ্ক সমবেগে চলিতেছে । কিন্তু মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি,শুক্র ও শনি এই পাঁচটি গ্রহের গতিতে পূর্ণমাত্রায় বৈষম্য বৰ্ত্তমান । মাত্র তাহাই নহে। ইহারা অগ্রসর হইতে হইতে হঠাৎ থামিয়া যায়, ক্রমে পশ্চাদিকে প্রত্যাবৰ্ত্তন করে ; পুনরায় অগ্রসর হয়। ইহাদের গতিতে এই বৈষম্যের কারণ কি ? অপরাপর জ্যোতিষ্কসমূহই বা কেন সমবেগে চালিত হয় ? আজন্ম যে জাতীয় জ্ঞান ও শিক্ষা দীক্ষায় তাহার মস্তিষ্ক পরিপুষ্ট হইয়াছে, তদ্বারা কিছুতেই ইহার মীমাংসা সম্ভবে না। এই মীমাংসার নিমিত্ত পূৰ্ব্ব সংস্কারের পরিবর্জন একান্ত প্রয়োজন। এই সংস্কারমতে পৃথিবী সমগ্র জ্যোতিষ্ক-জগতের কেন্দ্র-স্থানে অবস্থিত। যাবতীয় গ্ৰহ নক্ষত্র ইহাকেই প্রদক্ষিণ করিতেছে। অনেক সময়েই বিশেষ বিশেষ আক্ষিক প্রমাণ বিশেষ বিশেষ সংস্কারকে দূরীভূত করে। পরবত্তা তত্ত্ব কর্তৃক পুৰ্ব্ববৰ্ত্তী তত্ত্ব খণ্ডিত হয়। কিন্তু কোপানিকাস যে-ভাবে তাহার স্বপ্রতিষ্ঠিত ংস্কারকে বিদূরিত করিয়াছিলেন, তাহা সে জাতীয় গবেষণা নহে । তিনি দেখিলেন, জ্যোতিষ্কমণ্ডলীর গতি-বিধিতে অসামঞ্জস্ত আছে । প্রচলিত সংস্কারে আস্থা থাকিলে তাহার সামঞ্জস্য সম্ভবে না। এই সামঞ্জস্য বিধানের নিমিত্ত স্বীয় চিন্তা-শক্তিকে বদ্ধমূল সংস্কারের স্বধৃঢ় গণ্ডিভেদ করিয়া জ্ঞানের উন্মুক্ত পথে বিচরিত করান একান্ত প্রয়োজন । তিনি তদ্বিষয়ে হস্তক্ষেপ করিয়া তদীয় প্রগাঢ় গবেষণায় প্রতিপন্ন করিয়াছেন, বৰ্ত্তমান সংস্কারজাত জ্ঞান, উক্ত অসামঞ্জস্তের মীমাংসায় শুধু অসমর্থ নহে, অধিকন্তু ইহা উক্ত অসামঞ্জস্যের কারণরূপেও 8 دس سے 8 oھ বৰ্ত্তমান। তিনি প্রদর্শন করিয়াছিলেন, আমরা পৃথিবীতেই অবস্থিত ; এমতাবস্থায় পৃথিবী সচলা কি অচলা আমাদের সাক্ষাৎ সম্বন্ধে জানিবার উপায় নাই। পক্ষাস্তরে আমাদের পৃথিবীতে অবস্থানহেতু, ইহাকে কেন্দ্রস্থ ও সমগ্র জ্যোতিষ্কজগৎকে ভ্ৰাম্যমাণ বলিয়া প্রতীত ( apparent ) হওয়া স্বাভাবিক। এই সংস্কার বশতঃই গ্রহবর্গের গতি কোথায় কিরূপ প্রতীত হয় এবং পৃথিবীকে সচল ধরিলে কি প্রকারে তাহার প্রণিধান করা যায়, তাহা তিনি গণিত-ঘটিত প্রমাণের সাহায্যে পুঙ্খানুপুঙ্খরুপে প্রদর্শন করিয়াছেন । কি বিধায়না কি উন্মোচন উভয়বিধ গবেষণাই আক্ষিক প্রমাণের সাহায্যে নিম্পন্ন । কিন্তু বিধায়ক গবেষণায় সেরূপ প্রমাণই সাধারণতঃ প্রধান অবলম্বন r উন্মোচক গবেষণা সেরূপ নহে। কারণ বিধায়ক গবেষণা প্রচলিত সংস্কারের উপর নির্ভর করে। উন্মোচক গবেষণা ংস্কারে সন্দিগ্ধ করাইয় তাহার মূল অনুসন্ধানে ব্যাপৃত করায় । বিধায়ক গবেষণা সংস্কার-আশ্রিত জ্ঞানে সামঞ্জস্য বিধান করিয়া বিবিধ বিধি আবিষ্কার করে। তাহাই পরম্পরাক্রমে প্রতিষ্ঠিত হইয়া বিজ্ঞানশাস্ত্রে পরিণত হয়। উন্মোচক গবেষণা চিরাগত সংস্কার বিশ্লেষণ (analysis) করিয়া তাহাকে বদ্ধমূল অবস্থা হইতে উন্মোচন পূর্বক জ্ঞানের গৃঢ়তর স্তর প্রদর্শন করে, পরিশেষে তদ্বারা প্রতীত ঘটনাবলীর সামঞ্জস্য নিরাময় করিয়া বিজ্ঞানশাস্ত্রকে নূতন আকারে প্রতিষ্ঠিত করে। উন্মোচক গবেষণা প্রতীতিজাত সংস্কার উন্মোচিত না হওয়৷ পৰ্য্যস্ত বিধায়ক গবেষণা উক্ত সংস্কারের সীমায় আবদ্ধ থাকিয়া প্রতীত জ্ঞানেরই শৃঙ্খলা বিধান করে। তাহাতে অনেক অসামঞ্জস্য থাকিয়া যায়। তাহার মীমাংসার নিমিত্ত উক্ত সীমার বহির্ভাগে উপস্থিতি আবশ্যক। কিন্তু সংস্কারের সীমা উন্মুক্ত হওয়ার পূৰ্ব্বে সে আবশ্বকতার উপলব্ধি আয়াসসাধ্য। র্যাহাদের মস্তিষ্কে এই উপলব্ধি উপস্থিত হয়, তাহারা অধিকাংশ সময়েই উক্ত সীমা অতিক্রমণে অসমর্থ হইয়া মীমাংসাশূন্ত কাল্পনিক যুক্তির অবতারণা করিতে থাকেন। ইহা হইতেই দার্শনিক বিতণ্ডার স্বষ্টি ।