পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] বিবিধ প্রসঙ্গ—বৃটেনের ক্ষতি দেখিয়া কলহাস্য ϊν8% সাংহাইএ শেষ হইয়া গিয়াছে—বৃটিশ বয়কট এখনও চলিতেছে। পিকিংএ বয়কট প্রভৃতি সমস্ত বিদেশীর প্রতি বিরুদ্ধাচরণের বোঝা জাপান ও বৃটেনের উপর না ফেলিয়া শুধু বৃটিশদিগের উপর ফেলিবার চেষ্টা চলিতেছে। দক্ষিণে ক্যান্টন্‌ গভর্ণমেণ্ট, বৃটিশের বিরুদ্ধে প্রাণপণ চেষ্টা করিতেছেন এবং হংকংএর সর্বনাশ সাধনে উঠিয়া-পড়িয়া লাগিয়াছেন। যে-সকল জাহাজ হংকং হইয়া আসিবে তাহাদিগের ক্যাণ্টন বন্দরে প্রবেশ নিষেধ করিয়া ক্যান্টন গভর্ণমেণ্ট অনেক জাহাজের যাতায়াতের পথ পরিবর্তন করাইয়াছেন । ইহার ফলে হংকং ছাড়িয়া বহুসংখ্যক শ্রমিক ক্যান্টনে চলিয়া গিয়াছে । ফলে হংকংএর পতন অনিবার্ধ্য। এই ঘটনা বৃটেনের পক্ষে বিশেষ বিভীষিকাময়, কারণ বৃটেনের চীনে কাৰ্য্যকলাপ অনেকাংশে হংকংএর উপর নির্ভর করে । এই বিপদ হইতে বাচিতে হইলে বৃটেনকে ক্যান্টন গভর্ণমেণ্ট কে জয় করিতে হইবে এবং তাহা করা শক্ত। অপর দিকে শুল্কসভার কথাবাৰ্ত্তাও বৃটেনের ভাল লাগিতেছে না ; কারণ তাহার মধ্যে বৃটেনের বর্তমান শুল্ক-আদায় প্রভৃতি বিষয়ে যে জোর আছে তাহার অবসানের আভাস পাওয়া যাইতেছে । রুশিয়ার কথা চীনে যে বৃটিশ-বিরুদ্ধত আরম্ভ হইয়াছে তাহার মূলে বৃটেনের চীনের উপর বহুকাল ধরিয়া প্রভূত্বকরণ ও চীনাদিগের প্রতি ইংরেজ জাতীয় লোকেদের কুব্যবহার রহিয়াছে, সন্দেহ নাই ; কিন্তু একথা মনে রাখিতে হইবে যে, রুশিয়া এই ব্যাপারের পশ্চাতে আছে। একথা অভ্রান্ত সত্য যে, সাংহাইএর ব্যাপারে রুশিয়া যথেষ্ট পরিমাণে লিপ্ত ছিল এবং বর্তমানেও রুশিয়া ক্যান্টন গভর্ণমেণ্টকে হংকংএর শ্রাদ্ধ করিতে উত্তেজিত ও সাহায্য করিতেছে। নিজের অবস্থার উন্নতি করিতে হইলে বৃটেনকে চীনা সোভিয়েটুগুলি ভাঙ্গিয়া দিতে হইবে ; কারণ ঐসকল সোভিয়েটু রুশিয়ার কথা শুনিয়া কাৰ্য্য করে । বৃটেন ক্যান্টনের চেম্বার অফ কমাসকে করায়ত্ত করিবার চেষ্টা করিয়া বিফল হইয়াছে। ক্যান্টনের শক্ৰ জেনারেল চেনকে (Chen) বৃটেন সাহায্য করিয়া কোন ফল পায় নাই ! চিহ্ন লি (Chihli) দলের বোলশেভিক ংস-মন্ত্র বৃটিশের খুবই ভাল লাগিয়াছে এবং উত্তর চীনে এই মন্ত্রবাদীদিগের সম্মিলন সমাধানের জন্য বৃটেন গোপনে সাহায্য করিতেছে, এইরূপ গুজব। ইহার উদ্দেশু চীনের উপকার নহে-নিজের বিপদ হইতে আত্মরক্ষ। বৃটেনের সকল কার্ধ্যে এই স্বার্থসিদ্ধির ভাব অধিক দৃষ্ট হয় বলিয়াই জাপানের পক্ষে চীনে বৃটিশের সহায়তা করা কোন মতেই গভীর চিস্তা না করিয়া করা উচিত নহে । বৃটেনের ক্ষতি দেখিয়া কলহাস্য sitri nfrâlfă (Osaka Mainichi ) era suşi, ক্যান্টন ও সওয়াওটাও (Swatow ) প্রভৃতি স্থানে বৃটিশ বয়কট হওয়ার ফলে উক্ত জাতির কত ক্ষতি হইয়াছে তাহার অনেক বৃত্তান্ত পাওয়া যায়। জাপানীদিগের বিরুদ্ধে চীনে যে-আন্দোলন সাংহাই ও শামীনে ( Shameen ) চীনা-হত্যা হওয়ার পর আরম্ভ হয় তাহা প্রায় থামিয়া গিয়াছে এবং বর্তমানে চীনের বিশেষত ক্যান্টনের, সহিত জাপানের বাণিজ্য বহুল পরিমাণে বাড়িয়াছে। কিন্তু বৃটেনের বিরুদ্ধে যে-আন্দোলন হয় তাহার ফল এখনও বৃটেন ভোগ করিতেছে। বৃটিশদিগের সঠিক রিপোট ( ওসাকা মাইনীচির কথা অনুসারে)হইতে দেখা যায় যে, গত বৎসর হংকংএর রপ্তানী ও আমদানী উভয়ই শতকরা ৫০ কমিয়া গিয়াছে। জাহাজের চলাচলও উক্ত বন্দরে শতকরা ৫০ হারে কমিয়া গিয়াছে। জনসংখ্যা ২০০,০০০ কমিয়া গিয়াছে। কারিগরদিগের মধ্যে ৬০,০০০ জন হংকং ছাড়িয়া চলিয়া গিয়াছে । এ অবস্থায় যে হংকংএর প্রধান রপ্তানীর মাল চিনির রপ্তানী খুবই কম হইতেছে ইহাতে আশ্চৰ্য্য হইবার কিছুই নাই । জন-সংখ্যা কমিয়া যাওয়ার ফলে জমীর দাম ও ভাড়া প্রভৃতি এত নামিয়া গিয়াছে যে, ফলে গভর্ণমেণ্টের একটি দারুণ আর্থিক সমস্ত উপস্থিত হইয়াছে । বৃটিশ বণিকদিগের ভিতর অনেকে দেউলিয়া হইয়াছে এবং তাহাদিগের সাহায্যার্থে ৩০,০০,০০০ পাউণ্ড ধারের ব্যবস্থা করিয়াও খুব লাভ হয় নাই। এমন অবস্থা এখন হইয়াছে যে, ঐ প্রদেশে বৃটিশ-জাতীয় লোকের পক্ষে ব্যবসা করাই অসম্ভব হইয়া দাড়াইয়াছে। এইরূপ অবস্থা আর কিছুকাল থাকিলে যে বৃটিশ-ব্যবসা ও প্রতিষ্ঠা এত বংসরের পরিশ্রমে গড়িয়া উঠিয়াছে তাহ সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হইয়া যাইবে । কি করিয়া এই অবস্থার উন্নতি সম্ভব ইহা এখন বৃটিশ গভর্ণমেণ্টের একটি মহা চিস্তার বিষয় হুইয়া দাড়াইয়াছে। ওসাকার পত্রিকাটি বৃটেনের সহিত সহানুভূতি দেখাইয়া উক্ত দেশকে শুদ্ধ-সভায় এরূপ ব্যবহার করিতে উপদেশ দিতেছেন যাহাতে চীনারা তাহাদের ন্যায্য অধিকার পায় ও তাহাদের অপমান না হয় ।