পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] ঐতরেয় উপনিষৎ । ঋগ্বেদীয় ব্রহ্মবাদ এই উপনিষদেই পরাকাষ্ঠা লাভ করিয়াছে। কিন্তু কত কল্পনা-জল্পনা, কত সাধ্য-সাধনার পরে ঋষিগণ শেষ সিদ্ধাস্তে উপনীত হইয়াছিলেন, তাহা জানিতে হইলে সমগ্র দ্বিতীয় ও তৃতীয় আরণ্যকই পাঠ করা আবশ্যক। আমরা আবশ্যক মত এই উভয় আরণ্যেকেরই আশ্রয় গ্রহণ করিব । ঐতরেয় আরণ্যক ঐতরেয় আরণ্যকের মতে আত্মাই ব্ৰহ্ম । আত্ম কি? এবিষয়ে অনেক মতভেদ ছিল । এক স্থলে ( ২।১।৪ ) লিখিত আছে যে, ব্রহ্ম মানবদেহে প্রবেশ করিয়৷ পঞ্চ ‘শ্রী রূপে মস্তকে অবস্থান করিলেন । পঞ্চ ‘শ্রীর নাম–চক্ষু, শ্রোত্র, মন, বাকু এবং প্রাণ । এস্থলে প্রাণকে অন্যতম ইন্দ্রিয় বলিয়! বর্ণনা করা হইল ; কিন্তু ঋষি একটি উপাখ্যানু দ্বারা বুঝাইয়া দিয়াছেন যে, উক্ত পাঁচটির মধ্যে প্রাণেরই শ্রেষ্ঠত্ব ( ২॥১৫ ) । ইহার পরে (২।১৮ ) বলা হইয়াছে যে, ব্ৰহ্ম অস্ক এবং প্রাণ ; ভূতি এবং অভূতি। ‘ভূতি’ অর্থ ‘সত্তা’ এবং অভূতি অর্থ অ-সত্তা বা অ-বস্তু। ভূতিরই শ্রেষ্ঠত্ব দেবগণ ভূতির উপাসনা করিয়া লাভ করিয়াছিল এবং অম্বরগণ অ-ভূতির উপাসনা করিয়া বিনাশ প্রাপ্ত হইয়াছিল । ইহার পরে ঋযি এক নূতন প্রণালী অবলম্বন করিয়া প্রাণের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করিয়াছেন । গৃৎসমদ, বিশ্বামিত্র, বামদেব, অত্রি, ভরদ্বাজ, বলিষ্ঠ প্রভৃতি নাম বিশ্লেবণ করিয়া ঋষি দেখাইয়াছেন যে, এ সমুদায় প্রাণই ; প্রাণেরই বিশেষ বিশেষ শক্তি দেখিয়া ইহাকে গৃৎসমদ, বিশ্বামিত্ৰাদি নাম দেওয়া হইয়াছে ( ২২১,২ )। ইহার পরে ঋষি বলিয়াছেন যে, স্বত্ত, ক্ষুদ্রস্বত্ত, মহাস্বত্ত, ঋক্, অৰ্দ্ধঋক্, পদ, অক্ষর, এবং সমুদায় বেদই છit° ફે રારાર " । অন্ত এক স্থলে ( ২২৩ ) ঋবি একটি উপাখ্যান দ্বারা প্রাণের ব্ৰহ্মত্ব স্থাপন করিয়াছেন। বর্ণিত আছে যে, ইন্দ্র সন্তুষ্ট হইয়া বিশ্বামিত্রকে বলিলেন--"হে ঋষি, আমি তোমাকে বর দিতেছি ।” বিশ্বামিত্র বলিলেন—“আমি তোমাকে জানিতে ইচ্ছা করি।” ইন্দ্র বলিলেন—“হে কিন্তু ঋগ্বেদীয় উপনিষদের ব্রহ্মবাদ لا ون\صb ঋষি, আমি প্রাণ; তুমিও প্রাণ এবং সমুদায় ভূতই প্রাণ। এই যে ( স্থৰ্য্য ) উত্তাপ দিতেছে, ইহাও প্রাণ । আমি এইরূপে সমুদায় দিক বেষ্টন করিয়া রহিয়াছি” ( રારl૭ } । এস্থলে ইন্দ্র ব্রহ্ম স্থানীয়। হইল প্রাণই ব্ৰহ্ম । সবিতৃদেব নিত্য-উপাস্ত ; গায়ত্রী মন্ত্র দ্বারা সবিতাকে পূৰ্ব্বোক্ত অংশে বলা প্রতিদিন উপাসনা করা হয়। ঋষি বলিতেছেন, উপাসক এবং এই উপাস্ত্য একই । উপাসক নিজে বলিতেছেন :– যঃ অহম, স: অসেী ; য: অসেী, স: অহম্। “আমি যাহা, তিনি ( অর্থাৎ সবিতৃদেব ) তাহাই ; তিনি যাহা, আমি তাহাই” ( ২২l৪ ) । 爆 এপর্য্যন্ত যাহা বলা হইল তাহাতে বুঝা যাইতেছে যে, ঋষির মতে আত্মাই ব্ৰহ্ম । বিস্তু ‘আত্মা’ বলিলে প্রাণই বুঝিতে হইবে ; প্রাণ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর আর কিছুই নাই । কিন্তু প্রাচীনকালের ঋষিগণ সকলে এই আত্ম-তত্ত্বে সন্তুষ্ট হইতে পারেন নাই। র্তাহারা অনেকে প্রাণকে অতিক্রম করিয়া উচ্চতর সোপানে অধিরোহণ করিয়াছিলেন। ঐতরেয় উপনিষদে প্রাণকে কোন শ্রেষ্ঠত্বই দেওয়া হয় নাই। এই গ্রন্থে ঋষি প্রশ্ন উত্থাপন করিয়াছেন—“আত্মা কি ?” তাহার সিদ্ধাস্ত, প্রজ্ঞানই আত্মা । এবং প্রজ্ঞান বলিলে সংজ্ঞান, আজ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রজ্ঞান, মেধা, ধূতি, মতি, মনীয, জতি, স্মৃতি, সঙ্কল্প, ক্রতু, অস্থ, কাম, বশ–এই সমুদায় বুঝিতে হুইবে । এক স্থলে এই প্রকার বলা হইয়াছে :– “এই ব্ৰহ্ম (~ ব্রহ্ম ), এই ইন্দ্র, এই প্রজাপতি, এই সমুদায় দেবতা ; পৃথিবী, বায়ু, আকাশ, জল, জ্যোতিঃ এই পঞ্চ মহাভূত ;...স্থঙ্গম, পতত্রি এবং স্থাবর—এই সমুদায়ই প্রজ্ঞানেত্র ( অর্থাৎ প্রজ্ঞাপ্তার চালিত ), প্রজ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত। লোক প্রজ্ঞানেত্র, প্রজ্ঞাই প্রতিষ্ঠা এবং প্রজ্ঞানই ব্ৰহ্ম” ( আরণ্যক ২৬/১ ; উপনিষৎ তৃতীয় অধ্যায়-- প্রবাসী, ১৩২৯ কাৰ্ত্তিক পৃঃ ৫-৭ দ্রষ্টব্য।