পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৮৬২_প্রবাসী=আশ্বিন ১৩৩৩ __ এই উপনিষদে বলা হইল, প্রজ্ঞ নরূপী আত্মাই ব্ৰহ্ম । ইহার পরে ঐতরেয় আরণ্যকের এক স্থলে আত্মবিযয়ে এইরূপ বলা হইয়াছে— যিনি অশ্রুত, ধিনি অ-গত ( যাহাতে গমন করা যায় না অর্থাৎ যিনি অগম্য, অ-মত ( যাহাকে মনন করা যায় না ) - অ নত ( যাহাকে বশীভূত করা যায় না ), অদৃষ্ট, অবিজ্ঞাত, অনাদিষ্ট ( অর্থাৎ লক্ষণ দ্বারা যাহার বিষয় উপদেশ দেওয়া হয় নাই ) কিন্তু যিনি শ্রোতা, মস্ত, দ্রষ্ট, আদেষ্ট, ঘোষ্টা ( যিনি ঘোষণ করেন ), বিজ্ঞাত, প্রজ্ঞাত এবং সমুদায় ভূতের অন্তর-পুরুষ, তিনিই আমার আত্ম— ' এই প্রকার জানিবে (৩২৪)। এই স্থলের ভাষ্যে সায়ণাচাৰ্য্য লিখিয়াছেন, “আত্ম। বিষয়ে ন ভবতি বিষয়ী তু ভবতি”—অর্থাৎ “আত্ম। বিষয় নহেন, তিনি বিষয়ী”। এখানে জ্ঞানবাদের পরাকাষ্ঠ ; যাজ্ঞবল্ক্যও এই আত্মারই ব্যাখ্যা করিয়াছেন । এই আত্মাই ব্ৰহ্ম । কৌষীতকি উপনিষদের মত ঐতরেয় আরণ্যকের কোন-কোন স্থলে প্রাণকে আত্মা বলা হইয়াছে। কিন্তু কোন কোন ঋষি এই মত অগ্রাহ করিয়া আত্মাকে প্রজ্ঞান স্বরূপ বলিয়াছেন । কিন্তু কৌষীতকি উপনিষদের একটি বিশেষত্ব আছে। এই উপনিষদের ঋষিগণ প্রাণ-বাদ এবং প্রজ্ঞান-বাদ এই উভয় মতের সামঞ্জস্য করিবার চেষ্টা করিয়াছেন । দেখা যাউক উপনিষং স্বয়ং কি বলিতেছেন । ( > ) এই উপনিষদের প্রথম অধ্যায়ে বর্ণিত আছে যে, মৃত্যুর পরে মানব ব্ৰহ্ম-সন্নিধানে উপস্থিত হইলে ব্ৰহ্ম তাহাকে জিজ্ঞাসা করেন—“তুমি কে ?” তখন তিনি বলিবেন — “আমি কাল ( ঋতু ), আমি কাল সমূত ( আৰ্ত্তব: ), আমি আকাশ-রূপ যোনি হইতে, জ্যোতিঃ হইতে সস্তুত । ংবৎসরের এই তেজ আমি ; আমি ভূতের (ভূতকালের), ভূতের ( প্রাণিগণের ), ভূতের ( পঞ্চভূতের ) এবং ভূতের ( সমুদায় সত্তার, আব্রহ্ম-স্তম্ভ পৰ্য্যন্ত সমুদাযু সত্তার ) [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড আত্মা। আমি আত্মা ; তুমি যাঃ আমিও তাহাই” (১৬) । এস্থলে 'ভূত' শব্দ চারিবার ব্যবহৃত হইয়াছে। কেঃ কেহ মনে করেন, একই অর্থকে দৃঢ়ীভূত করিবার জন্য ঋষি একই শব্দকে চারিবার ব্যবহার করিয়াছেন। আমাদিগের মনে হয় ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ভিন্ন ভিন্ন ‘ভূত’ শব্দ ব্যবহৃত হইয়াছে। কিন্তু ঐসমুদায় অর্থ কি তাহ নির্ণয় করা সুকঠিন । আমরা চারিটি স্থলে চারিটি অর্থ দিয়াছি এবং ইহাদিগের মধ্যে কোন অর্থই কষ্টকল্পিত নহে ; সমুদায় অর্থই প্রচলিত। 'ভূত' শব্দের অন্ত অর্থও আছে। প্রাচীন সাহিত্যে ঐশ্বৰ্য্য' অর্থে ভূত শব্দ ব্যবহৃত হইত। ঐতরেয় ব্রাহ্মণের এক স্থলে (৩০১০ ) 'ভূত' শব্দের এই অর্থ। এস্থলে সায়ণ লিখিয়াছেন, ‘ভূতম্ ঐশ্বৰ্য্যম্’। আরও অনেক অবাস্তবিক অর্থ আছে। এস্থলে এসমুদায় শ্বদের অর্থ যাহাই হউক না কেন, এ অংশের ভাবার্থ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। ব্রহ্মসমীপবৰ্ত্তী পুরুষ ব্রহ্মকে যাহা বলিতেছেন তাহার অর্থ હરે “আমি আত্মা ; আমি সমুদায়েরই আত্মা ; আমি তুমিই ।” এখানে বলা হইল “আত্মাই ব্রহ্ম”। ( २ ) এখন প্রশ্ন ‘আত্ম কি ?” দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রথমেই এই প্রকার লিখিত আছে— “কৌষীতকি বলেন, প্রাণই ব্রহ্ম । মন প্রাণরূপ ব্রহ্মের দূত, বাগিন্দ্রিয় ইহার পরিবেষ্ট, চক্ষু ইহার রক্ষক, শ্রোত্র ইহার প্রতিহারী। এই প্রাণরূপ ব্রহ্মের উদ্দেশে দেবতাগণ ( অর্থাৎ ইন্দ্রিয়গণ ) অযাচিত ভাবে বলি প্রদান করিয়া থাকে ( কেীঃ উঃ, ২১ )। নিজমত সমর্থন করিবার জন্ত ঋষি অপর এক ঋষির মত উদ্ধৃত করিয়াছেন। “প্রাণ: ব্রহ্ম” ইতি হ শ্ব আহ পৈঙ্গ—অর্থাৎ পৈঙ্গ ঋষি বলেন “প্রাণই ব্রহ্ম" (২১) । ঋষি কাহাকে প্রাণ বলিতেছেন, তাহা উক্ত অধ্যায়েই বর্ণিত হইয়াছে—“ইন্দ্রিয়সমূহ নিজ নিজ প্রাধান্তের জন্য • বিষাদপরায়ণ হইয়া এই শরীর হইতে উৎক্রমণ করিল। তখন এই শরীর দারুবৎ শয়ন করিয়া রহিল ।