পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R8 پر0 আছে । তাহারা যখন বাড়ীতে ছিল তখন যদিও সে আসে নাই, তবু মেজ দাদা ত দুই তিন মাস অন্তর প্রায়ই বৌদিীদের বাড়ীতে লেড়াইতে যাইত। সে যদি বাপমায়ের কোলের মেয়ে বলিয়া এতদিন তাহীদের কাছেই থাকিয়াছে ধরা যায়, তবুও ত তাহার বর এখানে বেড়াইতে আসিতে পারিত, কিম্ব তাহাকে চিঠিপত্র লিখিতে পারিত। বরের সঙ্গ কিম্বা চিঠিপত্রের জন্য গৌরী যে কিছু মাত্র ব্যস্ত ছিল তাহ নয় ; কিন্তু বিবাহ হইলে যাহা সকলের পক্ষে স্বভাবতই হয়, তাহার বেলা তাহাতে সব দিকে এমন ব্যতিক্রম হইয়াছে কেন, সেটা সে বুঝিতে পারিতেছিল না। মনে পড়ে অনেক কাল আগে একবার তাহার বর আসিবে বলিয়া বাড়ীতে মহা হুলুস্তুল পড়িয়া গিয়াছিল। সবাই মিলিয়া তাহাকে সাজাইয়া-গুছাইয়া এবং বরের সঙ্গে আচার ব্যবহার সম্বন্ধে অসংখ্য সদুপদেশ দিয়া অস্থির করিয়া তুলিয়াছিল । তাহার পর কি জানি কেন বর আসিল না। সে অবশ্ব তাহাতে ইাপ ছাড়িয়াই বঁচিয়াছিল, কারণ তাহার ধারণা ছিল যে, বর আসিলেই তাহাকে মার কাছ হইতে কাড়িয়া শ্বশুরবাড়ীতে টানিয়া ঠাইয়া যাইবে । তাহার পর ত কত কাল কাটিয়া গিয়াছে ; আর সে আসিবার কিম্ব গৌরীকে লইয়া ঘাইবার নাম করে না কেন ? বর যদি তাহাকে আরো কিছু দিন না লইয়া যায়, তাহা হইলে অবশ্ব ভালই । সে বেশ মা বাবার সঙ্গে দিন কাটাইতে পারে ৷ হইতে পারে মা বাবা এখন তাহাকে লইয়া যাইতে বারণ করিয়াছেন। কিন্তু শাখা লোহা সিঁদুর পরিতে ত আর কোন কষ্ট হয় না। বরং সেগুলি না পরাই নাকি সধবার পক্ষে অকল্যাণকর । তবে তাহার মা নিজে সেসব পরিয়া তাহার বেলাই ভুলিয়া যান এও কি, কখনও সম্ভব হইতে পারে ? মা ত আজ পৰ্য্যন্ত কোনো দিন তাহার ভালমন্দর ভাবনা এক মুহূর্তের জঙ্কও ভাবিতে ভুলেন নাই । গৌরীর মন নানা সন্দেহে আকুল হইয়া উঠিল। ভিতরের ঘেরা উঠানে জ্যোৎস্নায় একটা জড়ির খাট ৰিছ ষ্টয়া ভtষ্ঠার মা শুইয়াছিলেন । গৌরী অস্তে আস্তে প্রবাসী-আশ্বিন, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড সেখানে গিয়া বসিল । মা মুখ তুলিয়া তাহার দিকে কৌতুহলপূর্ণ দৃষ্টিতে চাহিয়া বলিলেন, “কিরে, এখানে - এসে বস্লি যে ? শুবি নাকি, শরীর কি খারাপ লাগছে ?” গৌরী মাথার একরাশ খোল চুল ফুলাইয়া বলিল, “না শোব না। আমার চুল বেঁধে দাও।” মা তাহার স্বন্দর চুলগুলির ভিতর আঙ্গুল চালাইয়। নাড় দিয়া বলিলেন, “বিকেল বেলা যখন ডাকৃলাম তখন ত হুস হ’ল না। এখন রাত্রির বেলা হঠাৎ চুলের ওপর এত দরদ কেন ?" গৌরী কথার উত্তর না দিয়া ঘরে গিয়া ফিতা কাট। চিরুণী আয়না সব সংগ্ৰহ করিয়া আনিল। মা উঠিয়৷ চুল সাধিতে বসিলেন। চুল বাধিয়। ভিজ গামছায় তাহার মুখখানি ঘষিয়া মজিয়া দিয়া বলিলেন, “যা, ওদিককার ছাতে একটু বেড়িয়ে আয়, শরীরটা ভাল লাগবে ।” গৌরী তবু বসিয়া রহিল। তার পর একটু ইতস্তত্ব করিয়া বলিল, “কই, সিদূর, পরিয়ে দিলে না ত ?” ম। চমকাইয়া উঠিলেন। গৌরীর মুখে আজ এপ্রশ্ন কেন ? কখনও ত সে এমন কথা বলে না । কোনোদিন বলিতে যে, পারে তাহাও তিনি মূর্থের মত ভুলিয়া বসিয়াছিলেন। এ প্রশ্নের উত্তর তিনি কি দিবেন ? একটু সামলাইয়া লইয়া বলিলেন, “তুই ত কোনোদিন সিঁদুর পরিস না। আজ আবার হঠাৎ পৰ্বতে চাইছিল যে!” গৌরী বলিল, “তুমি ত সিঁদুর পর, আমি কেন পর্ব না " . - ম। অনেক ভাবিয়া বলিলেন, “তোমার বাবার কল্যাণের জন্যে আমাকে পরতে হয়।” ইহার উত্তরে গৌরী কি বলিবে বুঝিতে পারিতেছিল না। মা ও বাবাকে সে ঠিক সাধারণ বরবধূর পর্য্যায়ে ফেলিতে অভ্যস্ত ছিল না। তা ছাড়া এক্ষেত্রে মা ত বিবাহের কথা কিছু বলিলেন না । আর কোনও কারণেও ত মা বাবার কল্যাণ কামনা করিয়া সিঁদুর পরিতে পারেন। গৌরীও ভাবিয়া বলিল, “আর অন্য সব মেয়ের কেন পরে ? ঐ যে মেয়েটি আমাদের সঙ্গে নাইতে গিয়েছিল সে8 ত সিদূর পরেছে।”