পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ե e

  1. o esta (Intuition) আমার বিরুদ্ধে একট। তর্ক উঠিতে পারে ; সাধারণ বাস্তব ঘটনা হইতে হঠাং ভূমীকে (ভগবানকে ) আবিষ্কার করিয়া বসাটা অনেকের কাছে বোধ হইবে নেন সেটা আমার বুদ্ধির ভিতরকার ধার করা কোন একটা জিনিস। এই সমালোচনার যে ক্ষেত্র আছে, তাহা পূৰ্ব্ব হইতেই বুঝিয়াছি ; লে সত্তা স্বরাষ্ট্র ও স্বয়স্থ, তাহাকে মিলাইয়াছে আমার সহজ জ্ঞান ( intuition ), কিন্তু সহজজ্ঞান বস্থটা কি ? ইহা আমার কাছে বৰ্ত্তমানের চেতনা (সুতরাং বাস্তব ) এবং দুরবগাঙ্গ ও শাশ্বত

( সুতরাং আচঞ্চল ) ; ইহা একের বোধ । সাধারণের ধারণা যেন মাহ্য বিচিত্র ও বিভিন্ন উপাদানে গড় একটা মোসেইক (inosaic); অখণ্ড আত্মার নানা বৃত্তি যেন খণ্ডিত হইয়া নানা মানুষের মধ্যে ফুটিয়াছে। কিন্তু যদি বিচিত্র বিকাশের মধ্যে জীবনের মূলগত ঐক্যটি অনুভব করিতে চেষ্টা করা যায়, যদি বুঝিতে প্রয়াস করা যায় যে, বুদ্ধিবৃত্তি (reason) অনুভূতিরই (sensibility) একটা ভঙ্গীমাত্র—দুইএর মধ্যে আছে শুধু একটু পর্য্যায়-ভেদ বা স্তর-ভেদ--তাহা হইলে দেখা যাইবে যে, প্রত্যক্ষবাদী বৈজ্ঞানিক ও অপ্রত্যক্ষবাদী তাত্ত্বিকদের কাল ক্রমাগত পরস্পর-উপেক্ষার ও অবিশ্বাসের কোন ভিত্তি নাই। এক দিন আসিবে যখন চোখ খুলিয়। যাইবে, এবং আমরা আবিষ্কার করিব যে সহজজ্ঞানের পথও বৈজ্ঞানিক পস্থার চেয়ে কম সুসংবদ্ধ নয়, বরং অন্য দিকে অধিক ফলপ্রস্থ। বিজ্ঞান দেখাইয়াছে দুইটা শুষ্ক প্রণালী :–নিগমন (Deduction) ও অনুগমন (Induction) ; প্রথমটা যেন মনে হয় সাপ নিজের ল্যাজ কামুড়াইতেছে, দ্বিতীয়টা যেন কচ্ছপের মম্বর-বন্ধুর পদবী ! বাস্তবকে ধরিতে হইবে ইহা ঠিক, কিন্তু আমাদের সত্তার সমস্ত শক্তি দিয়া ধরিতে হইবে । বৰ্ত্তমানের এই চকিত ও শাশ্বত দীপ্তিতে যদি আমরা শুধু নানা ভেকধারী বহুর খণ্ড রূপই দেখি,ত হইলে আমরা ঠকিব এবং সার সত্যেরও অমৰ্য্যাদা করিব, কারণ বহুকে এক করিয়া দেখিতে না পারিলে, না থাকে তার অর্থ, না থাকে তার অস্তিত্ব। চিরপ্রাণকে সমস্ত প্রাণ দিয়াই ধরিতে হইবে এবং তাহার প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড মৰ্ম্মস্থলে প্রবেশ করিতে হইলে কিছুই বাদ দিলে চলিবে না; যুক্তি এবং অনুভূতি দুষ্টটি বৃত্তির দ্বারাই দেখিতে হুইবে ; তবেই ভূমাকে দেখা যাইবে । জীব-পর্য্যায় বিশ্বের চরম অধিষ্ঠান যে চিরন্তন ঐক্য, তাহা আমর। দেখিয়াছি। ভূমা নিখিল চরাচর, ভূম সৰ্ব্বব্যাপী, ভূম ব্যষ্টিভাবে পৃথক্ পৃথক্ চেতন, আবার সমষ্টিভাবে সমগ্র চেতনার সমন্বয় । জীবনের ক্ষুদ্রতম স্পন্দনের মধ্যেও র্তার অব্যাহত প্রকাশ। এই বোধটি অটুট রাপিয়া অনুসন্ধান করা যাউক জীবনের কোন অংশ আমাদের দিকে পড়িয়াছে ; চিরস্তনের পাশে চির ভঙ্গুর এই জীবনকে রাখিয়া দেখা যাউক । সমস্ত ইন্দ্রিয়-চেতনার মধ্যেই বিভিন্ন মাত্রায় অহম্বোধ আছে। প্রত্যেক চেতনা-গ্রামেরই একটা বিশেষ বোধ আছে ; এই বিশিষ্ট অহং-বোধ বিভিন্ন চেতন-পর্য্যায়ে বিভিন্নভাবে প্রকট হয়। প্রত্যেক পৰ্য্যায়টি স্বপ্রতিষ্ঠ ও স্বসম্পূর্ণ–যেন একটি জলবিশ্বের মধ্যে বিশ্বের প্রতিবিধ ! এই যে আমার ‘আমি", আমার ব্যক্তিগত জীবন-ইহার কথা ভাব যাক। এই কথাগুলি লিপিতে লিপিতে ‘আমি’ ভাবিতেছি। কেমন করিয়া ভাবন হইতেছে এ প্রশ্ন এখন আমার কাছে বড় নয় ; আমার ক্ষুদ্র ভাব-জগতের ঐক্যটা হয়ত অলীক, আমার অতীত ও বর্তমান চেতনাকে সংবদ্ধ করিয়া আছে যে বাধন তাহ টুটিয়া যাইতে পারে, তবু এ-সমস্ত যে অাছে সে বোধ জাগিতেছে মূল ঐক্যবোধ হইতে । স্থায়ী হোক অস্থায়ী হোক, সত্য হোক, মায়া হোক, আমার এই অস্তিত্বের ঐক্য সব-কে বিধৃত করিতেছে। এই অহংবোধেও ভূমা আছেন কারণ ভূমা সৰ্ব্বাশ্রয়। স্বতরাং অহমই ভূমা (Le Moi est Dieu), অহম ভূমার অনিৰ্ব্বচনীয় প্রকাশ। আমি আমার প্রত্যেক খণ্ড-চেতনার মৰ্ম্মস্থলে ভূমাকে দেখিয়াছি এবং প্রত্যেক চেতনা-সমষ্টির মধ্যেও দেখিব—প্রত্যেক আমির মধ্যে ( আমার আমি হইতে সুরু করিয়া) দেখিব ; নানা সমষ্টির মণ্ডল-পরিক্রমায় ভূমাকে দেখিব; সেই যে বিরাটু সমন্বয়ের মধ্যে নিসর্গ-জগতের খণ্ড ভগ্নাংশগুলি