পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] তাহার পরিষ্কার ধারণা করিবার মত শক্তি আমার ছিল না। জলের ঝাপটা লাগিয়া সৰ্ব্বাঙ্গ ভিজিয়া গেল ; অন্ধকার আকাশে তীব্র বিদ্যুৎফুরণ হইতে লাগিল।– কলিকাতার ঘরবাড়ী লেপিয়া মুছিয়া গিয়াছে ; আকাশের নীচে গ্যাসের স্তিমিত আলোকে আমরা দুষ্টটি প্রাণী এক অজানিত রহস্তলোকের দ্বার উন্মোচন করিবার ব্যর্থ প্রয়াস করিতেছি – সোওয়ারী জুটিল দুইজন। প্রচুর ভাড়া চাহিলাম, তাহারা তাহাতেই স্বীকৃত হইল। দুইজনের কেহই প্রকৃতিস্থ ছিল না –একজন নেশায় একেবারে চুর হষ্টয়া ছিল—অন্য জনের তখনো হুস ছিল । এই ঝম্ ঝম্ বৃষ্টির মাঝে বাগবাজার পর্য্যন্ত যাইতে হইবে । সোওয়ারী দুইজন ভিতরে বসিল । আমি ভাল করিয়া তেরপল মুড়িয়া দিলাম । গঙ্গার ধারে ধীরে সোজা উত্তর দিকে চলিতে লাগিলাম ; দোকানপাট সব বন্ধ হইয়া গিয়াছে। একটা পানের দোকানে এক উড়িয়া বামুন স্থর করিয়া কি পড়িতেছিল । রাস্তায় এখানে-ওখানে দুই একজন লোক চলিতেছিল ; গাড়ীঘোড়া একেবারেই ছিল না। আমি নিৰ্ব্বিঘ্নে পথের মাঝখান দিয়া রিক্স টানিয়া লইয়া চলিলাম। কুমারটুলীর কাছাকাছি গিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, আর কতদূর যাইতে হইবে, উত্তর পাইলাম, ‘সিধা চালাও ।” আমার সর্বাঙ্গ ভিজিয়া গিয়াছিল। পরিশ্রমে আর ক্লাস্তিতে ঘুমে চোখ জড়াইয়া আসিতেছিল। মনে হইতেছিল, আর টানিতে পারিব না। এমন সময়ে পরদ ঠেলিয়া এক বাবু আমার হাতে পয়সা দিয়া এক বাক্স সিগারেট আনিতে বলিলেন। এক গাছতলায় গাড়ী রাখিয়া সিগারেট আনিতে গেলাম। কাছাকাছি দোকান ছিল না। এদিক-ওদিক ঘুরিয়া একটি বিড়ির দোকানের সন্ধান পাইলাম। সিগারেট কিনিয়া ফিরিয়া আসিয়া হাকিয়া বাবুদের সিগারেটের বাক্সটা লইতে বলিলাম। কেহ উত্তর দিল না। ভাবিলাম, মাতাল বাবুর ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। তেরপলের পরদা তুলিয়া সিগারেট দিতে গিয়া - এক ভয়াবহ দৃশ্ব দেখিয়া মূচ্ছিতপ্রায় হইলাম — রিক্সওয়ালা মক্‌বুল আবার চুপ করিল। যাহা শুনিতেছিলাম । - বাবু, সেই মুহূৰ্ত্ত হইতে আমার জীবনের সমস্ত শান্তি অন্তর্হিত হইয়াছে ; কাহার পাপের বোঝা মাথায় লইয়া আমি আজ তিন বৎসর কাল প্রায়শ্চিত্ত করিয়া ফিরিতেছি জানি না ; আর কতকাল এযন্ত্রণ সহিতে হইবে খোদাতাল্লাই বলিতে পারেন ! সামান্ত আলো আসিতেছিল ; দূরে গ্যাসপোষ্ট। গাছের তলে বেশ একটু অন্ধকার ; বৃষ্টির বিরাম ছিল না। পৰ্বদ তুলিয়া সেই অস্পষ্ট আলোকে দেখিলাম, গাড়ীতে একজন মাত্র লোক-মুখ বাধী—সুক দিয়া দরদর ধারে রক্ত পড়িতেছে—সৰ্ব্বাঙ্গ রক্তে ভিজিয়া গিয়াছে। প্রাণ আছে বলিয়। মনে হইল না ; কেমন করিয়া কি হইল প্রথমট। কিছু ঠাহর করিতে পারিগাম না ; বিমূঢ় হইয়া দাড়াইয়া ঘামিতে লাগিলাম। ধীরে ধীরে চেতন। ফিরিয়া আসিল ; মনে বিষম ভয় হইতে লাগিল ; চোথের সম্মুখে ফাসীকাষ্ঠের ভয়াবহ দৃশ্ব ফুটিয়া উঠিল। সমস্ত দোষটা আমার ঘাড়ে যে চাপিবে তাহাতে সন্দেহ নাই । আমার কথা কে বিশ্বাস করিবে ?— বুঝিলাম, অন্ত লোকটি মুখ বধিয়া ছোরার আঘাতে এই লোকটিকে হত্যা করিয়া পলাইয়াছে। তাহাকে ধরিবার কোনো উপায় নাই ; তাহার চেহারাটাও মনে আসিল না। ¢लांक निश्5श्शे भद्रिप्र शिंग्रांtछ् ; १itशू झांउ ग्नि দেখিলাম—তখনও গরম । ভাবিলাম—কোনো হাসপাতালে লইয়া যাই—চীৎকার করিয়া লোক জড় করি, কিন্তু সাহস হইল না। তাজা খুন দেখিয়া ভয়ে আমি তখন হিতাহিতজ্ঞানশূন্ত-আত্মরক্ষা করার কথাটাই আমার প্রথমে মনে হইল, সভয়ে চারিদিকে চাহিয়া মৃত বা মরণাপন্ন দেহটি সেই বৃক্ষতলে ফেলিয়া রাখিয়া গাড়ী লইয়া উৰ্দ্ধশ্বাসে পলায়ন করিলাম । কেমন করিয়া বাড়ী ফিরিয়া আসিলাম, কেমন করিয়া সেই রাত্রিতেই গাড়ীখানি ধুইয়া মুছিয়া আস্তাবলে রাখিলাম, আমার কিছুই স্মরণ নাই । তার পরে সাত আট দিন ধরিয়া আমি দারুণ জরে বেইস হুইয়া পড়িয়া ছিলাম। ফুফুর মুখে শুনিয়াছি সে কয় দিন আমি খুন রক্ত স্ট্রাসী ইত্যাদি সম্বন্ধে ভুল বকিয়াছিলাম।