পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

పెఫిe সম্পূর্ণ আরোগ্য হইবার পরও গাড়ী লইয়া বাহির হইতে সাহস হইতেছিল না ; গাড়ীখানির দিকে নজর দিতেও ভরসা পাইতেছিলাম ন—কিন্তু পেট ত চালাইতে হইবে। আবার একদিন সকালে মনের সহিত অনেক যুদ্ধ করিয়া গাড়ীখানি বাহির করিতে গেলাম। গাড়ীতে হাত দেওয়ামাত্র মনটা ছ্যাৎ করিয়া উঠিল । রক্তের চিহ্নমাত্র ছিল না, তবু যেন রক্ত দেখিতে পাইলাম । মনের দুৰ্ব্বলত। জোর করিয়া উড়াইয়া দিয়া গাড়ী লইয়া বাহির হইলাম। সোয়ারী জুটিল। মাঝে মাঝে গা ছম্ ছম করিতেছিল বটে, কিন্তু দিনের আলোয় লোকের ভিড়ে সে-ভাব বেশীক্ষণ মনে থাকিতে পায় নাই । থাকিয়া থাকিয়া মনে হষ্টতেছিল অন্যায় করিয়াছি—হয়ত লোকট। বঁচিতে পারিত । বিপদের ভয় না করিয়া যদি তৎক্ষণাৎ কোনো হাসপাতালে তাহাকে লইয়া যাইতাম হয়ত সে বঁচিয়া উঠিত। লোকটা যদি মরিয়াই থাকে—নিজেকে তাহার মৃত্যুর কারণ বলিয়া মনে হইতে লাগিল—সেভাবটাও কাটাইয়া উঠিলাম—কে জানে পরের দিকে নজর দিতে গিয়া হয়ত মহা ফ্যাসাদে পড়িয়া যাইতাম । বঁচিবার নগীব থাকিলে সে এমনই বাচিবে ! এইভাবে নান। মানসিক দ্বন্দ্বে প্রথম দিনটা কাটিয়া গেল। সন্ধ্যার আগেই বাড়ী ফিরিয়া আসিলাম । সমস্ত রাত্রি কেমন যেন একটা অশান্তিতে কাটিল ; ঘুমাইতে পারিলাম না! ভয় হইল, আবার বুঝি জর হইবে । সেই রক্তাক্ত দেহ মুখ-বাধা লোকটিকে যেন চারিদিকে দেখিতে লাগিলাম ! মাথ। গরম হইয়াছে ভাবিয়া চোখে মুখে জল দিয়া ঘুমাইবার চেষ্টা করিলাম —ঘুমও আসিল । কিন্তু ভোর-বেলায় আবার তাহার স্বপ্ন দেখিয়া ভীষণ ভয়ে ঘুম ভাঙিয়া গেল ! সে যেন গুমরিয়া গুমরিয়া আমার কাণে বলিয়া গেল—তুই আমাকে খুন করিয়াছিস্— ! আমি আল্লা নাম স্মরণ করিয়া উঠিয়৷ বসিলাম । সে-দিন গাড়ী লইয়া বাহির হইতে যাইব—মনে হইল কে যেন আমার পাছু লইয়াছে, পিছনের পথের উপর. যেন রক্তের দাগ দেখিলাম। হায় আল্লা ! একি হইল ! কাহার পাপের বোঝা কাহার ঘাড়ে চাপাইলে তুমি! প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩e [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড আমি যেখানে যাই সেখানেই যেন কোনো অদৃশু কেহ আমার পাছু লইতে লাগিল। ভাবিলাম, আমি কি পাগল হইয়া গেলাম ! বুঝিলাম আমাকে ভূতে পাইয়াছে। ওঝার কাছে গেলাম ; সে অনেক ঝাড়ফুক করিল; কিন্তু কিছুতেই কিছু হইল না ; সে আমার পাছু ছাড়িল না। মকবুল চুপ করিয়া গামছা দিয়া কপালের ঘাম মুছিল । আমার কাছে একট। সিগারেট লইয়া সেট। ধরাইয়া আবার বলিতে লাগিল – দুই একদিন পরে সন্ধ্যার সময় হেদুয়ার মোড়ে দাড়াইয়াছিলাম, এমন সময়ে বৃষ্টি নামিল। বৃষ্টি হইতে বাচাইবার জন্য গাড়ীখানা তেরপল মুড়ি দিতে যাইতেছি দেখি পিছনে পিছনে কে যেন আসিতেছে! ফিরিদ্ধ। তাকাইলাম, কেহ নাই। তাড়াতাড়ি গাড়ীখান ঢাকিয়৷ বাড়ী ফিরিবার ইচ্ছা হইল। গাড়ীর ছপ্লব হইতে পর্দাখান ফেলিতে যাইব দেখি গাড়ীর ভিতরে সে বসিয়া-মুখ বাধা—বুক দিয়া রক্ত গড়াইতেছে । ভয়ে শিহরিয়া উঠিয়া পৰ্বদা ফেলিয়া দিয়া মূৰ্ছিতের মত সেখানে বসিয়া পড়িলাম । আমার এই অদ্ভুত যন্ত্রণার কথা আপনাকে কেমন করিয়া জানাইব, বাবু? আপনি কি বুঝতে পারিবেন ? গাড়ীর ভিতর রক্তাক্তকলেবরে সে নিশ্চয়ই বসিয়া আছে ! সেই হইতে আজ পর্য্যস্ত সে ওই গাড়ীতে বসিয়া আছে ; আমার পিছনে আর তাহাকে দেখি না—সে নিশ্চিন্ত হইয়া গাড়ীতে বসিয়া থাকে, আমি তাহাকে টানিয়া লইয়া বেড়াই ! মকবুল চোখ বুজিয়া চুপ করিয়া রহিল। অনেকক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া আবার বলিতে লাগিল— বাবু, সেইদিন হইতে আজ পর্য্যন্ত ওই মড়ার বোঝা আমি টানিয়া ফিরিতেছি। একজনের অধিক সোওয়ারী তাই আর টানিতে পারি না । মড়া পচিয়া দুৰ্গন্ধ বাহির হইতেছে;আমাকে তাহাই সঙ্গে করিয়া ফিরিতে হইতেছে ; অথচ আল্লার দোহাই বাবু ওই লোকটার মৃত্যুতে জ্ঞানত: আমার কোনো অপরাধ নাই!