পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] প্রবাল SRS প্রতিষ্ঠিত আছে। সে-সংসারকে আমরা অবজ্ঞা করব কি ক’রে ? ভগবানের স্বষ্টি একদিনে লোপ পেয়ে ষাক, এ-বাসনা কোনো অৰ্ব্বাচীনই কোনো দিন করতে পারে না। তবে সাধনার জন্তে যার আত্মা ব্যাকুল হয়েছে সেই শুধু সংসার ত্যাগ ক’রে সন্ন্যাস-আশ্রম গ্রহণ করবার অধিকারী । দেখে বৎস—এসব তত্ত্ব একদিনেই বোঝাবার নয়। যত বড় বিদ্বান বা পণ্ডিত বা বুদ্ধিমান হোক ভগবৎ-তত্ত্ব এক মুহূর্বে বোঝা কারুর পক্ষে সহজ নয়, কেননা এসব যুক্তি-তর্কের বাইরের জিনিষ। ধ্যান, ধারণা ও গভীর অনুভূতি, চিন্ত প্রভৃতির দ্বারা ভিতরকার বৃত্তিগুলি পরিপুই না হয়ে উঠলে এ গভীরতত্বের ভিতর প্রবেশ করার উপায় নেই। মানুষ যদি সত্যিকার পিপাসায় উন্মুখ হয়ে ওঠে তা হ’লে সে যেন বিশ্বাস করে যে, তার জন্যে অমৃতের উৎস আছেই। জল না থাকলে তৃষ্ণার উদ্রেকই হ’ত না। অবশু পিপাসী হয়ে জলের সদ্ধানে নিশ্চেষ্ট হয়ে থাকলেও চলবে " প্রবাল একদিন সাধুকে জিজ্ঞেস করলে—“আচ্ছ, আপনার বিশাল সাধু-সমাজ ষে এভাবে নির্জনে বসে সাধন-ভজন করেন এর ফল ত আপনারা নিজেরাই ভোগ করেন । কিন্তু আপনাদের সমস্ত দেশবাসী যে অজ্ঞানের মধ্যে ডুবে থেকে দুঃখ ভোগ করছে তাদের জন্তে আপনারা কি করেন ? এতে কি দেশ আপনাদের সেবা থেকে বঞ্চিত হয় না ?” সাধু স্নিগ্ধ হাস্তে বললেন— “ভা কেমন ক’রে হয়, লাল ? বৃক্ষের শাখা-প্রশাখা যখন বাতাস থেকে প্রচুর খাদ্য সংগ্ৰহ ক’রে সজীব থাকে তার ফল কি মাটির ভিতরের মূল পৰ্য্যন্ত ভোগ করে না ? নিশ্চয় করে, কেননা কেউ কাউকে ছাড়া নয়। তোমরা জান জগতে কোনো বস্তর বিনাশ নেই, স্বতরাং সচ্চিস্তার বিনাশ নেই। চক্ষের অগোচরে মামুষের, বিশেষ ক’রে সমস্ত বিশ্ব-জগতের, মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী সাধুগণের টিস্তা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে পূর্ণ ক’রে রয়েছে। এ চিন্তার যথেষ্ট প্রভাব আছে, আকর্ষণ আছে। জগতে যত সাধু পুরুষ সাধনা ক’রে গিয়েছেন, বা এখনও গোপনে গিরি-গহবরে লোকচক্ষুর অগোচরে সাধন করছেন একদিন তাদের সকলের স্বক্ষচিস্তার রূপ ঘনীভূত হয়ে কোনো মহাপুরুষের মধ্যে দিয়েই প্রকাশ হবে । কাল অনন্ত, বৎস, স্বতরাং নিশ্চয় জেনো—যিনি এই কালের অধীশ্বর তিনি সময় বুঝে যেমন যুগে যুগে দুঃখাওঁ মানবের জন্তে মহামাহ্যকে পাঠিয়েছেন তেমনি আবার পাঠাবেন ।” প্রবাল সাধুর মুখের এই ধরণের কথাগুলি শুনে ভারী আনন্দ লাভ কবুলে। তারপর সে মাকে নিয়ে অন্যান্য ছোট-বড় তীর্থ ভ্রমণ ক’রে প্রয়াগে এল । তখন প্রয়াগে কুম্ভমেলা উপলক্ষে মহাস্নান চলেছে। স্বানে গিয়ে একদিন হঠাৎ একজন পরিচিতfর সঙ্গে যশোদার দেখা হ’য়ে গেল । সেই বৃদ্ধাও নানা রূপে শোকক্লিষ্ট হ’য়ে আজ প্রায় সাত বংসর যাবৎ কাশীবাসিনী । সম্প্রতি প্রয়াগে কুম্ভমেলা উপলক্ষে একমাসকাল গঙ্গাতীরের কুটারে কল্পবাস করতে এসেছেন। হঠাৎ দেশের লোককে পেয়ে তিনি খুব খুলী হ’লেন এবং যশোদার দুঃখের কাহিনী শুনে নিজের জীবনের বিগত ঘটনা স্মরণ ক’রে চোখের জল ফেললেন । তার পর তিনি যশোদাকে বললেন—“বেশ ত বউ মা, দিনকতক আমার কাছে কুঁড়েয় থাকবে চলো। এখানে তীর্থ-স্থানে মনও ভাল থাকবে ; তার পর কাশীতে যদি গিয়ে বাস করতে চাও সে মন্দ হবে না। আমার মতন অনেক হতভাগী সংসারের খেলাঘর ভেঙে যাওয়ায় বাবা বিশ্ব নাথের পায়ের তলায় পড়ে রয়েছে ।” যশোদা এপ্রস্তাবে রাজী হ’লেন। প্রবালেরও ছুটীর মেয়াদ ফুরিয়ে এসেছিল। সে মায়ের তীর্থবাসে আপত্তি না ক’রে নিজে আর দু’চার দিন সহরে থেকে যাবার ইচ্ছা করলে । সেদিন বৈকালের দিকে মেল-স্থল হ’তে সে যখন বঁধের ওপর চলেছে হঠাৎ একটি সাহেববেণী যুবককে দেখে সে দাড়িয়ে গেল, আর মুখ থেকে অতর্কিতভাবে বেরিয়ে গেল-সঙ্গীব ! - সঞ্জীবের সঙ্গিনী ছিল একটি তরুণী নারী। দামী ধূপছায়া রঙের রেশমী সাড়ী বিচিত্র ভঙ্গীতে তার দেহ বেষ্টন ক’রে বুকে মাথায় কাধে পাঁচ-সাতটা সোনার সেফটিপিনে বাধা পড়েছিল ; পায়ের খুব উচু হীলের জুতো যেন অতি কষ্টে তার দেহভার রক্ষা করছিল। হাতে রেশমী রুমাল।