পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o Sలిe সঞ্জীব ফিরে চেয়ে দেখবার আগেই মেয়েটি প্রবালের দিকে তাকিয়ে একটু আশ্চৰ্য্য হ’য়ে গেল যে, আধময়লা মোটা জামা কাপড় পুরা লোকটার আস্পৰ্দ্ধ তো মন্দ না । ফট করে এত লোকের সামনে ব্যারিষ্টার মিষ্টার ময়টারের জামাত নূতন ব্যারিষ্টার মিষ্টার রে-কে সঞ্জীব ব’লে ভাক্লে, বিশেষ যখন সঙ্গে তার একজন মহিলা। এদিকে মেয়েটির চাউনীতে প্রবাল ও নিজেকে অপরাধী মনে ক’রে বেশ একটু সঙ্কোচ বোধ করছিল। কিন্তু মুখের কথা আর হাতের ঢিল বেরিয়ে গেলে আর ফেরবার নয়। ইতিমধ্যে সঞ্জীব এগিয়ে এসে হাসি-মুখে প্রবালকে বললে—“প্রবাল ? আমি চিনতে একটু দেরী করেছি। খুব লম্বা-চওড়া চেহারাপানি বাগিয়েছ ত হে ! মাথায় আবার পাগড়ী, হাতে মোটা লাঠি ! আমি মনে করেছিলাম কোনো পাঞ্জাবী হ’বে।” প্রবাল বললে—“আমি কিন্তু ছেলেবেলাকার সন্ত্রীবকে এত বড় সাহেবী পোষাকে দেখে ও চিনতে দেরী করি-নি। আচ্ছা—উনি কে ? আমি হয়তে অসময়ে আলাপ ক’রে একটু অন্যায় করলাম।” সঞ্জীব বললে—“ন, ন, অন্যায় কিসের ? ইনি হচ্ছেন মিসেস সঞ্জীব । ওগো একটু এগিয়ে এস, আমার বাল্যবন্ধুর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই—। হুগলীতে আমরা একসঙ্গে এণ্টান্স পৰ্য্যন্ত পড়েছিলাম, এর মতে মেধাবী কিন্তু আমরা কেউ ছিলাম না ।” উৰ্ম্মিলা এগিয়ে এসে প্রবালকে নমস্কার করলে । প্রবালও নম্রভাবে তা ফিরিয়ে দিলে। তার পর সঞ্জীব প্রবালের উপস্থিত ভ্রমণ-কাহিনীর কথা শুনে বললে— “বেশ ত চলে আমাদের বাঙলায় । ওখানে দুদিন থেকে তার পর দেশে ফিরে । আমরাও শীগ গীর কলকাতায় ফিরব । ভবানীপুরে আমার বাসা, সেইখানেই আমি প্রাকৃটিস্ করি।” - উৰ্ম্মিল৷ কিন্তু এই অৰ্দ্ধমলিন-বেশী লোকটিকে তাদের অত বড় মোটরে নিজেদের পাশে বসিয়ে বাঙলায় নিয়ে যেতে হবে মনে ক’রে ভারী কুষ্ঠা অনুভব করতে লাগল। নিশ্চয় লোকটার গায়ে বোটক গন্ধও ছাড়বে—কি প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড সৰ্ব্বনাশ ! অতঃপর স্বামীর নির্বদ্ধিতার জন্যে সে মনে মনে রেগে উঠল। স্বামীটিও একদিন পাড়া-গায়ের ভূত • ছিলেন, পাঁচ বৎসর বিলাত বাস ক’রে সাহেবী আদবকায়দায় পূরে রকম হ্রস্ত হয়ে আসবার পরও এখনও র্তার অনেক ক্রটি কথায়-কথায় উৰ্ম্মিল ধ’রে ফেলে। যেন তার যন বুঝেই প্রবাল সঙ্গীবকে বলছিল-“আজ পাৰ্ব্ব ভাই, ঠিকানাটি দিয়ে যাও, কাল গিয়ে দেখা করব।” উৰ্ম্মিল তখন হাফ ছেড়ে বাচল—প্রবাল-সম্বন্ধেও তার একটু ভাল ধারণা হ’ল। লোকটা ভদ্রতা জানে তা হ’লে। " ঐ বেশে একজন ভদ্রমহিলার সামনে মোটরে বসতে ধে. রাজী হয়নি এ ওর সদবুদ্ধির পরিচয় । তার পর সে সুগন্ধি রুমালখানা নাকে চেপে ধ’রে মিহিগলায় ব’লে উঠল, “শীগ গীর এখান থেকে বেরিয়ে চলো, বেজায় দুৰ্গন্ধ—যত সব ভূতের মত লোকগুলোর বিত্র ভীড়— প্রাণ যায়-যায় হ’য়ে উঠল।" প্রবাল একটু অবাকৃ হয়ে উৰ্মিলার মুখের দিকে চাইলে —উৰ্ম্মিলার চমৎকার বিদ্যাবুদ্ধির কথা শুনে সে বেশ খুলী হ’য়েছিল। তার বুদ্ধির লাবণ্যমণ্ডিত মুখশ্ৰীতে আমাদের দেশের সেই একঘেয়ে অসম্ভব জড়তার ভাব নেই দেখে আনন্দও পেয়েছিল। কিন্তু মুখে তার এ কি অবজ্ঞার বাণী ! নিজেদেরই হাজার হাজার দেশবাসীর ভীড়কে সে এত লঘু চক্ষে দেখে? কৌতুহল-ভরে প্রবধু জিজ্ঞেস ক’রে ফেললে—“আপনি কি মেলা দেখতেই এসেছিলেন ?” উৰ্ম্মিলা বললে,—“মেলা নয়—সং দেখতে এসেছিলাম।" ব’লে সে হেসে উঠল। তার পর সঞ্জীবকে একরকম টেনে নিয়েই এসে মোটরের দিকে অগ্রসর হ’ল। সঞ্জীব তাড়া তাড়ি পকেট হতে কু-খানা কার্ড বের করে প্রবালের হাতে দিয়ে বললে,—“একটায় আমার শ্বশুরের বাঙলার ঠিকানা —আর-একটায় কলকাতার বাসার । যাবে কিন্তু নিশ্চয়।” প্রবাল জবাব দিলে না, মাথা হেলিয়ে শুধু সন্মতি জানালে । ( ক্রমশ: ) ,