পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ সেখানে যেতে সাহস পেল না, আমি চুপি চুপি গিয়ে দেখলাম, না, আমাদের আশঙ্কা অমূলক । পুতুলটার সামনে দাড়িয়ে লক্ষ্মী বলছে, “দুষ্ট ছেলে, আমি একটু ঘুমিয়েছি অমনি উঠে পালিয়ে এসেছ ” মোটের উপর অধিকতর শাস্ত ও স্বন্দর ছেলে পেয়ে লক্ষ্মী খুশীই হয়েছে। ছেলের পিছনে ভকে আর ছোটাছুটি করতে হয় না। বারান্দার কোণটায় বসে বসে সাধ মিটিয়ে ও ছেলের আদরযত্ন করতে পারে।” আমি বললাম, “দ্বিতীয় একলব্যের কাহিনী শুনছি ব’লে মনে হয় ।” ox কান্ত হেসে বললে, “আমাদের চাকলাদার ঠাকুরদাই বলেন ভাল, একটি পুতুলের পরিবর্তে লক্ষ্মী আর একটি পুতুল পেয়েছে । লক্ষ্মীর আপত্তি করবার তো কিছুই নেই, আর জান দাদ, লক্ষ্মী পুতুলটাকে শুধু ছেলেই বলে না, মাঝে মাঝে ডাকে পণ । দেখাদেখি বাড়ীর সকলেও পুতুলটিকে পণ্ট, ব'লে ডাকে ৷” লক্ষ্মা ভো শাস্ত আর সুন্দর ছেলে পেয়ে তুলে গেছে । কিন্তু মনে করি নি আমাকেও ভোলবার জন্তে প্রাণপণ চেষ্ট করতে হবে। কেশব বাবুর হোম-টাস্ক তৈরি করতে করতে বাড়ীর আর সকলের কথা মনে পড়বার আগে এমন কি মা'র কথাও মনে পড়বার আগে মনে পড়ে যায় আমার ছোট্ট মা-লক্ষ্মীর কথা। ওকে কিছুতেই ভুলতে পারি নে। ওর সঙ্গে ছেলে 'ছেলে খেলতে ভয়ানক উৎপাত ও বিরক্তি বোধ করেছি, অতীনবাবুর কঠিন প্রশ্নের অঙ্কগুলি কযতে কষতে আজ আবার ওর সেই খেলাঘরে ফিরে যেতে ইচ্ছা হয় । লক্ষ্মী SSRS এক শনিবার মনটা এতই বিশ্ৰী লাগতে লাগল যে বাড়ী ন-গিয়ে থাকতে পারলাম না। কিন্তু গিয়ে দেখি বাড়ীতে না-আসাই ভাল ছিল। লক্ষ্মীর পেলাঘর থেকে আমি নির্বাসিত হয়েছি, ওর মন থেকেও। আসল পণ্টর স্থান নকল পণ্ট, এমন ভাবে অধিকার করেছে যে লক্ষ্মী আমাকে যেন চিনতেই পারলে না। ভয়ানক ঈর্ষা করতে লাগলাম পুতুলটাকে । কয়েকটা বছর পরে। ভাঙ্গা স্কুলের বেড়া ডিঙিয়ে কলেজে প্রবেশ করেছি বহুদিন, আর কয়েকটা মাস কাটলেই বি-এ ডিগ্রীট লাভ করে আপিসে আপিসে ঘুরে বেড়ান আরম্ভ করতে পারি। পূজার অবকাশে বাড়ী গেলাম ঠিক এই সময়টায়। কলেজের বন্ধুবান্ধব আর প্রোফেসাররা এতদিন লক্ষ্মীকে আড়াল ক'রে ছিলেন । আজ হঠাৎ ওর দিকে চেয়ে দেপি ওর পুতুলের বাক্স বহুদিন অন্তহিত হয়ে গেছে। তার স্থান অধিকার করেছে এম্পায়ার রীডার, কে. পি. বোসের এ্যালজেবর, যাদববাবুর এ্যারিথমেটিক, সাহিত্যচয়ন, সংস্কৃত-সোপান, এমনি আরও কত কি । ওর কথাবার্ভায়, বেশেবাসে আধুনিকতা স্বপরিস্ফুট। লক্ষ্মীকে ডেকে বললাম, “ম, এক গ্লাস জল নিয়ে আয় তো। খুব তেষ্ট পেয়েছে অনেক ক্ষণ ধ’রে ।” লক্ষ্মী যেতে যেতে বললে, “বুড়ো মানুষের মত কি সব সময় “মা” “মা” কর সোন কাক, আমার ভাল লাগে না । তোমার কথা শুনলে মনে হয় আমিও যেন মেজদির মত বুড়ী হয়ে গেছি। আমাকে লক্ষ্মী বলেই ডেকে । মা ত তোমার রয়েছেই, ওই বুড়ী মেজদি ।”