পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ নিষিদ্ধ দেশে সওয়া বৎসর ミわ〜ヘ? কখনও সুশিক্ষিত ভিক্ষু পুনৰ্ব্বার গাহস্ত্যিাশ্রমে প্রবেশ করে এবং গৃহস্থশ্রেণী এইরূপে শিক্ষাদীক্ষা লাভ করে, এবং ইহাও সত্য যে মঠে শিক্ষিত ভিক্ষু ধনী গৃহস্থ বালকের শিক্ষক নিযুক্ত হয়, কিন্তু প্রচলিত নিয়মানুসারে যে সকল মঠে বৃহৎ বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয় আছে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে গৃহস্থ মাত্রেই তাহাতে প্রবেশ করিতে পায় না। তিব্বত ভিক্ষুর দেশ। ইহা সত্য নহে যে সত্তেঘর ভিক্ষুগণ প্রধান বা মঠাচাৰ্য্যগণ দেশ শাসন করেন, কিন্তু দেশের জনসংখ্যার পঞ্চমাংশ গৃহত্যাগী-ভিক্ষুশ্রেণীভূক্ত। কচিৎ এমন গ্রাম পাওয়া যায় যেখানে দুই একটি ভিক্ষুও নাই বা যাহার পাশ্বস্থ পৰ্ব্বতবাহুতে ছোট মঠ স্থাপিত হয় নাই । আট হইতে বারো বৎসর বয়সের মধ্যে ভিক্ষু-সঙ্ঘপ্রবেশার্থী বালকেরা মঠে প্রবেশ করে। অবতারী লাম!--অর্থাৎ যাহাদের লোকে কোন প্রসিদ্ধ মহাত্মা বা বোধিসত্ত্বের অবতার বলিয়া জ্ঞান করে—আরও অল্প বয়সে মঠে প্রবেশ করে । এই সকল বালক প্রথমে ছোট ছোট মঠে গুরুর নিকট বিছাভ্যাস করে। প্রারস্তে বিশেষ ভাবে সুন্দর অক্ষর দাড়িযুক্ত ও দাড়িবিহীন –লিখনের অভ্যাস করানো হয় । হস্তলিপি-অভ্যাসে অধিক সময় দেওয়ায় সুশিক্ষিত তিববতীদের লিথন প্রায়ই সুন্দর । পড়ার মধ্যে প্রধান কার্য শ্লোক কণ্ঠস্থ করা । তিববতী ভাষায় ব্যাকরণ, কাব্য, তর্ক, ধৰ্ম্মশাস্ত্র সবই শ্লোকবদ্ধ, ইহাতে শিক্ষার্থীর পক্ষে সেগুলির অভ্যাস ও স্মরণ দুইই সহজ হয় । সাধারণ গণনার অতিরিক্ত গণিত প্রায়ই শিখানে হয় না, কেবল যাহারা জোতিষী বা সরকারী দপ্তরের উচ্চ কৰ্ম্মচারী হইতে চাহে তাহারা বিশেষভাবে গণিত শিক্ষা করে। বিস্তাশিক্ষায় বেত্ৰদণ্ডের সাহায্য খুবই লওয়া হয়। অবতারী লামা ভিন্ন অন্ত ছাত্রমাত্রেই অধ্যাপকের সেবাপরিচর্য্যা করে, অন্যদিকে বহু অধ্যাপক অনেক দরিদ্র ছাত্রের ভরণপোষণ পৰ্য্যস্ত করিয়া থাকেন । লিখনপঠনে কুশলতা-লাভ ও কিছু ধৰ্ম্মগ্রন্থ কণ্ঠস্থ করিলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ হয়, তাহার পর ব্যাকরণ, নীতি ও ধর্শ্ব-বিষয়ক শ্লোক পাঠ আরম্ভ হয়। এই রূপে চার পাচ বৎসর কাটিলে উচ্চশিক্ষার পথে যাওয়া যায় । যদি মঠে উপযুক্ত অধ্যাপক না থাকে তবে বিদ্যার্থীকে বড় মঠে পাঠাইয়া দেওয়া হয় । উচ্চশিক্ষা-কেক্সে যাইবার পূৰ্ব্বে মধ্যম শ্রেণীর কোনও মঠে উপযুক্ত শিক্ষকের নিকট আমাদের মাধ্যমিক শিক্ষার অন্তরুপ বিদ্যাভ্যাস করা প্রয়োজন। তর্ক, বৌদ্ধদৰ্শন এবং কাব্যের প্রারম্ভিক গ্রন্থাদি এই সময় পড়ানো হয়। পুস্তকগুলি কণ্ঠস্থ করাই প্রধান কৰ্ত্তব্য । যদিও বিদ্যাথিগণ ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত হইয়া পাঠ শিক্ষা করে, পরীক্ষা বা উচ্চশ্রেণীতে উন্নয়নের কিন্তু কোনই ব্যবস্থা নাই, ইহার পরিবর্তে ছাত্রেরা দল বাধিয়া স্ব স্ব বিষয়ে শাস্ত্রার্থ প্রভৃতি লইয়ু প্রতিযোগিতা করে বা অধ্যাপক ছাত্রকে প্রশ্নাদি করেন, প্রশ্নোত্তর সন্তোষজনক না হইলে সেই ক্ষণেই দণ্ডদান করা হয় এবং নুতন বিষয়ে পাঠ স্থগিত রাখা হয় । এক গ্রস্থের পাঠ সমাপ হইলে সেই বিষয়ের উচ্চতর গ্রন্থ পড়ানো হয় এবং বিদ্যার্থী যদি চিত্রণ, মূৰ্ত্তি-নিৰ্ম্মাণ ব! কাষ্ঠ-ভক্ষণ ইত্যাদি কলাবিদ্য। শিক্ষা কবিতে চাহে তবে তাহাকে সে শিক্ষাও দেওয়া হয় । সকল মঠেই এই সকল বিষয়ে শিক্ষার ব্যবস্থা আছে । উচ্চতম শিক্ষণর জন্তু চারটি মঠে বিশ্ববিদ্যালয় আছে। প্রথম গন-দম ( লাস হইতে দুষ্ট দিনের পথ ), দ্বিতীয় ডে-পুং ( লাসার নিকট, ১৪১৬ খ্ৰী: স্থাপিত ), তৃতীয় সে-র (লাসার নিকট, ১৪১৯ খ্ৰী: স্থাপিত ), চতুর্থ ট-শি-লুন-পো ( চণ্ড প্রদেশে, ১৪৪৭ খ্ৰীঃ স্থাপিত ) ৷ তিব্বতের প্রাচীনতম মঠ সমূ-য়ে লাস হইতে তিন দিনের পথ। নালন্দার মহান দার্শনিক আচার্য্য শাস্তরক্ষিত ৭৭২ খ্ৰীষ্টাব্দে ইহার স্থাপনা করেন, কিন্তু এখন ইহার আর সে প্রাচীন গৌরব নাই। উপরিউক্ত চারিটি বিশ্ববিদ্যালয়ই মধ্য-তিব্বতে স্থিত, এতদ্ভিন্ন পূৰ্ব্ব তিব্বতের তেবৃগী ( ১৫ ৮ খ্ৰী: স্থাপিত ) ও চীন সীমান্তস্থিত অম্‌-দো প্রদেশের ভূ-বুম ( ১৫৭৮ খ্ৰীঃ স্থাপিত) এই দুইটিও প্রসিদ্ধ বিদ্যাকেন্দ্র । এই সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচুর জায়গীর আছে, উপরন্তু যাত্রীরাও এই সকল মঠকে কিছু দান করা ধৰ্ম্মের অঙ্গ বলিয়া মনে করে । মঠ হইতে বিদ্যাথিগণকে অবস্থামত আর্থিক সাহায্যও করা হয়। প্রতিভাশালী ছাত্রের যথেষ্ট সুযোগহুবিধা আছে, কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও মূ-খন্‌-পো (অধ্যক্ষ—উীন) ঐক্লপ ছাত্রকে অতি স্নেহ ও যত্বের সহিত দেখেন এবং তাহার উন্নতিতে নিজের ও নিজ প্রতিষ্ঠানের গৌরববুদ্ধি অনুভব করেন। মাঝারি ছাত্রকে অনেকটা নিজ পরিবারের বা গুরুর সাহায্যের উপর নির্ভর করিক্তে হয় ।