পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

దా নিষিদ্ধ দেশে সওল্প বৎসর Տեած অধিক । এ-দেশের শীত যেন অস্থিচ্ছেদ করিয়া দেহে প্রবেশ করে । ঋতুর কঠোরতা হেতু দেশবাসীদিগকে অধিক পরিশ্রমী ও সাহসী হইতে হইয়াছে। সিংহলের ন্যায় এদেশে একটি সারোং (লুঙ্গা )-এ চলে না, এখানে বার মাসই মোট পশমী পোষাকের প্রয়োজন । শীতকালে তাহাতেওঁ কুলায় না, লোমযুক্ত পশুচৰ্ম্ম ( পোস্তান ) ভিন্ন উপায় নাই । সাধারণ লোকে ভেড়ার চামড়—লোম ভিতরে চৰ্ম্ম বাহিরে রাখিয়া-পরিয়া থাকে, অবস্থাপন্ন ব্যক্তিগণ বন্য শৃগাল, নেকড়ে, নেউল ইত্যাদি নানা জন্তুর চৰ্ম্ম ব্যবহার করেন, সেগুলির মূল্য অধিক। সংক্ষেপে এদেশে সাধারণ কাপড়ে প্রাণধারণ করা অসম্ভব । চামড় ও উলের বুট জুতা ( শোম্প), তাহার উপর গরম পায়জাম, লম্বা গরম কোট ( ছুপ: ) ও মস্তকে ফেন্ট-স্থাট— ইহাই এ-দেশের পোষাক। ফেণ্ট-হাটের ব্যবহার পনরষোল বৎসর মাত্র চলিয়াছে, কিন্তু এখন উহার ব্যবহার বালক বুদ্ধ, ধনী দরিদ্র সকলের মধ্যেই প্রচলিত। ইউরোপ হইতে লক্ষাধিক পুরনো হাট ধোলাই করিয়৷ কলিকাতায় আসে এবং সেখান হইতে স্বল্প মূল্যে এদেশে চালান হয় । স্ত্রীলোকদিগের পায়ে শোম্প জুতা থাকে। দেহে ছুপ। কোট, কিন্তু তাহাতে হাত থাকে না, কোটের নীচে হাতযুক্ত মৃতী ব| আসামী এণ্ডিব কামিজ এবং সামনে কোমরের নীচে বিলাতী এপ্রন’ জাতীয় বস্ত্রথও থাকে ধাহা ঝাড়নের কাজ করে। তিব্বতী স্ত্রীলোকের শির-সজ্জায় ও ভূষণে অনেক যত্ন করা হয় । ভোটীয় গৃহস্থের সম্পত্তির অধিকাংশ তাহার স্ত্রীর মস্তকের উপর থাকে, ইহা বলা বিশেষ অত্যুক্তি নহে। শিরসজার রূপ হইতে কোন স্ত্রীলোক কোন প্রদেশের তাহা বিচার করাও সহজ। টশী লামার প্রদেশের ( চাঙ প্রদেশ ) স্ত্রীলোকের শিরোভূষণ ধনুকাকার ; ইহা মূলতঃ একটি কাষ্ঠখণ্ডকে বাকাইয়া ও তাহাতে কাপড় জড়াইয়া তৈয়ারী করা হয়। ইহার উপর ফিরোজ ও প্রবালের গুচ্ছ ও লহর থাকে, ধনীগৃহে মুক্তার ব্যবহারও নীচের অংশে প্রচুর হইয়া থাকে। গহনাতেও ফিরোজ ও প্রবালের ব্যবহারই অধিক । লাসার স্ত্রীলোকের শিরোভূষণ ত্রিকোণাকার, ইহার উপর মুক্ত প্রবাল ফিরোজা উপরন্তু পরচুলার বেণীমাল কান হইতে পিঠ পৰ্য্যস্ত ঝুলিয়া থাকে। এই পরচুলার কেশ চীনদেশ হইতে আসে এবং লাসার ও তাহার আশপাশের অধিক সভ্য অঞ্চলের স্ত্রীলোকগণ এক এক জনে পঞ্চাশ-ষাট, এক শত দুই শত টাকা খরচ করিয়৷ এই বহুমূল্য অলঙ্কারে নিজেদের শোভা বৃদ্ধি করিয়া থাকে। কেশরাশি-সংলগ্ন বৃহৎ কর্ণভূষণ, গলায় ফিরোজাযুক্ত বৃহৎ চৌকোণ তাবিজদান—যাহা ভূতগ্রেড-নিবারণ-মন্ত্রে পরিপূর্ণ—তাবিজের পাশ হইতে বাহু ও কোমর পর্য্যন্ত ঝুলানো মুক্তাগুচ্ছ, ইহাই এদেশের স্ত্রীলোকের গহনা। মুসলমান ভিন্ন অন্য সকল স্ত্রীলোকেই দক্ষিণ হস্তে শঙ্খ পরিয়া থাকে। শঙ্খটিতে হাত গলাইবার মত পথ থাকে মাত্র, কোন মতেই তাহাকে চুড়ি বা বালা বলা যায় না । 舉 繳 鬱 পশমই ভোটদেশের প্রধান আয়ের বস্তু । উল, কস্তুরী, লোমযুক্ত চৰ্ম্ম ( ফৰ্ব ), ইহাই এখানকার প্রধান রপ্তানীর মাল এবং রপ্তানীর পথ প্রধানত: ভারতবর্ষের মুখে। গম, জব, যও ( ওটস্), মটর ও সরিষা এদেশে কিছু কিছু উৎপন্ন হয় । সম্বৎসরে একবার মাত্র ফসল হয়, তাহাও ভিন্ন উচ্চতায় ভিন্ন সময়ে পাকে । সেপ্টেম্বরের মধ্যে সৰ্ব্বত্রই ফসল কাটা হুহয় যায়। অক্টোবরে শরৎ ঋতুর আগমনে, গাছের পাতা পীতবর্ণ হইয়া ঝরিতে থাকে। গম যথেষ্ট জন্মাহলেও ভোটিয়ের রুটি খায়ু না । ইহার| গম যুব ভাজিয় পিষিয়া সত্ততে ( চম্বা ) পরিণত করে এবং রাজা হহঁতে ভিক্ষুক পৰ্য্যন্ত সকলেরই ইহা প্রধান খাদ্য । লবণ, মাখন, মিল ইত্যাদি গরম চায়ে দিয়া তাহাতে চম্বা ঢালিয়া হাতে মাখিয়া খাওয়াই ইহাদের প্রথা। প্রত্যেকের পৃথক পেয়ালা থাকে, ইহা প্রধানত: কাষ্ঠনিৰ্ম্মিত। এই পেয়ালাই তাহাদের রেকবে, থালী, গেলাস ইত্যাদির স্থান পূর্ণ করে। ভোজনের পর জিভ fদয় চাটিয়া পেয়ালা পরিষ্কার করিয়া বুকের কাছে চোগার ভিতর তাহা রাখা হয়। দেহ, মুখ, হাত প্রভৃতি ধৌত করা কদাচিৎ হয়, এমন কি বিহারের ভিক্ষুদেরও মুখ ও হাতের উপর ময়লার মোট শুর জমিয়া থাকে। ভোটদেশে এরূপ লোক অনেক পাওয়া যায় যাহারা আজীবন শরীরে জলক্ষেপ করে নাই । চা ও চম্বা ভিন্ন ইহাদের প্রধান খাদ্য মাংস এবং অধিকাংশ স্থলে তাহা কাচা বা কেবল রৌদ্রে শুকাইয়া খাওয়া হয়। মসন্ত্র ইত্যাদি দ্বারা মাংস পাক করার প্রথা শহরের ধনীদিগের মধ্যেই আবদ্ধ এবং ইহাও চীন ও নেপালী অফিসর বা সওদাগরদিগের প্রভাবের ফল । অভিজাত বংশের ভোটিয় চীনদেশের রীতিতে দুইটি কাঠশলাক চামচের মত ব্যবহার করিয়া ভোজন করে এবং তাহাদের খাদ্যের মধ্যে আট-ময়দাও স্থান পায়। চা এদেশে প্রচুর পরিমাণে পান করে, তাহার অধিকাংশই চীন দেশ হইতে আসে। চীন চা চাপে জমাইয়া ইটের মত করা হয় এবং যদিও ইহা তিন মাসের পথ হইতে আসে তবুও ভারতের চা অপেক্ষ ইহ সস্তা। এখানে চায়ে স্কুধচিনির ব্যবহার প্রচলিত নহে । প্রথমে সোডা ও লবণের সহিত চা খুব ফুটাইয়া পরে তাহা বঁাশের বা কাঠের চোঙ্গায় ঢালিয়া মাখনের সঙ্গে মাখিয়া লইলেই তিব্বতী চা প্রস্তুত হইল। ইহা দেখিতে দুধ-মেশানে চায়েরই মত।