পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミふb〜 ভারতবর্ষের সাধারণ ভাষা বা রাষ্ট্রভাষা ভারতবর্ষের রাষ্ট্রভাষা কি হওয়া উচিত, এই বিষয়ের আলোচনা নূতন নয়। কিন্তু প্রশ্নটির আলোচনা কলিকাতায় সম্প্রতি দু-তিনটি সভায় হইয়া গিয়াছে, খবরের কাগজেও হইয়াছে। অনেকেই বলিয়াছেন, বাংলারই সাধারণ ভাৰ্য বা রাষ্ট্রভাষ হওয়া উচিত। সাহিত্যের উৎকর্ষ, ভাষার সহজশিক্ষণীয়ত, ভাষার সৰ্ব্ববিধ ভাব, চিস্তা ও তথ্য প্রকাশ করিবার ক্ষমতা, বর্ণমালার উৎকর্ষ, এবং বহুলোকের স্বারা ব্যবহার-–এই সমস্ত গুণ একসঙ্গে বিবেচনা করিলে বাংলার সাধারণ ও রাষ্ট্রভাষা হইবার দাবী ভারতবর্ষীয় অন্য কোন ভাষার দাবী অপেক্ষ কম নহে। কিন্তু র্যাহারা হিন্দী-উল্লুর পক্ষপাতী, তাতার এই গুণটির উপরই বেশী জোৱ দিয়! থাকেন, যে, তিন্দী-উদ্বু অথবা হিন্দুস্থানী ভারতবর্ষে সকলের চেয়ে বেশী লোকের মাতৃভাষা ও সকলের চেয়ে বেশী লোকে বুঝে। ইহা সত্য কথা, যদিও হিন্দুস্থানীর সমর্থকেরা, উষ্ঠা কত লোকের মাতৃভাষা ও কত লোকে উহা বুঝে, সে বিষয়ে অত্যুক্তিপূর্ণ ও মিথ্যা দাবী করিয়া থাকেন। হিন্দুস্থানী ভারতবর্ষে সকলের চেয়ে বেশী লোকে বলে ও বুঝে, তাহার এই গুণটি ছাড়া আর সব বিষয়ে বাংল! ভাষা ও সাহিত্যের শ্রেষ্ঠতায় আমরা বিশ্বাস করি। হিন্দুস্থানীর যে রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত, তাহা কংগ্রেসক্ট বেশী জোর করিয়া বলেন এবং কংগ্রেসনেতারা কংগ্রেসের অধিবেশনসমূহে, হিন্দুস্তানী যাহারা বলিতে পারে না, তাহাদের মুখ-খোলা দুঃসাধ্য করিয়া তুলিয়াছেন। কেহ ইংরেজীতে কিছু বলিতে চাহিলে তাহারা দয়া করিয়া তাহাকে অনুমতি দিয়া থাকেন বটে, কিন্তু বাংলায় কেহ কিছু বলিতে চাহিলে কি ঘটিবে, কল্পনা করিতে পারি না। লীগ অব নেশুন্সের ভাষা ইংরেজী ও ফরাসী, কিন্তু যে-কেহ নিজের মাতৃভাষায় সেখানে বক্তৃতা করিতে পারে । আমরা সেখানে জাম্যান ভাষায় বকৃতা শুনিয়াছি । বাংলার দাবী কংগ্রেস-নেতাদের কাছে কেহ উপস্থিত করিয়াছিলেন বলিয়া আমরা অবগত নহি । করিলেও তাহাতে বাঙালী ছাড়া কেহ কর্ণপাত করিতেন বলিয়া বিশ্বাস হয় না। অবাঙালী কংগ্রেস-নেতারা সাধারণতঃ বাংলা জানেন না, সুতরাং উহার দাবী তাহাদের হৃদয়ঙ্গম হইবে না। প্রবাসী >へこ88 তদ্ভিন্ন, নানা কারণে বাংলা দেশ, বাঙালী, বাংলা ভাষা ইত্যাদি বঙ্গের বাহিরে লোকপ্রিয় নহে—যদিও বঙ্গ হইতে ংগৃহীত ধন সকলেরই প্রিয়। কেন এইরূপ হইয়াছে, সংক্ষেপে তাহার আলোচনা করা যাইবে না; সুতরাং সে চেষ্টা করিব না । কয়েকটা কথা বাঙালীদিগকে জানান বা মনে পড়াইয়া দেওয়া আবশ্যক। হিন্দীর চেয়ে বাংলার সহিত বিহারের ভাষার সাদৃশু বেশী। বিহারের উপপ্রদেশ মিথিলার ভাষা বাংলার আরও নিকট । মিথিলার ও বাংলার বর্ণমালা এক ৷ অথচ বিহারের লোকের নিজেদের ভাষাকে হিন্দী বলেন, এবং বিহারে বাঙালীর প্রতি বিরূপতা খুব বেশী । বিহারীরা বেশী সংখ্যায় বাংলা বুঝেন। আসামের ও বাংলার বর্ণমালা এক, আসামীয়ু বর্ণমালায় বেশীর মধ্যে আছে কেবল পেটকাট ব। আসামের ও বাংলার ভাষার মধ্যে প্রভেদ কলিকাতাব ও চটগ্রামের কথিত ভাষার প্রভেদের চেয়ে বেশী নয়। অথচ আসামীর বাংলা ভালবাসে ন', যদিও বুঝিতে পাবে অনেকেই । উড়িষ্যার ভাষা ও বাংলা ভাষার মধ্যে প্রভেদ কম । উড়িষ্যার বর্ণমাল পৃথক । কিন্তু বাংলা বর্ণমালায় উড়িষ্যার পুস্তক লিখিত হইলে, তাহ বাঙালীদের বুঝিতে শিক্ষিত উৎকলায়ের সাধারণত: অশিক্ষিত অনেক উৎকলীয় অথচ উৎকলে বাঙালী বিরাগ কষ্ট হইবে না । বাংল; বুঝেন ও বলিতে পারেন । সম্বন্ধেও এ কথ} সত্য । ভাজল । বিহার, উড়িষ্য ও আসামে বাংলার জ্ঞান বিস্তার করা হিনীর জ্ঞান বিস্তার করা অপেক্ষা ভাষার দিক্ দিয়া সহজতর, কিন্তু লোকের বিরাগ দূর করা অত্যন্ত কঠিন। বিহারে ত হিন্দী বিদ্যালয়ে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং আদালতে চলিয়াই গিয়াছে। উৎকলে ও আসামে লোকেরা বরং হিন্দী শিখিবে তৰু বাংলা শিখিবে না। ইহার জন্য এই সকল প্রদেশের লোকদিগকে দোষ দেওয়া আমাদের অভিপ্রেত নহে । বাঙালীদের মনে রাখা উচিত, যে, তাহার বাঙালী ছাড়া অন্য লোকদিগকে নিজের ভাষা ও সাহিত্যের গুণগ্রাহী করিবার কোন চেষ্টা করেন নাই। আমরা নানা কারণে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করিবার জন্ম কোন আন্দোলন করি নাই । আমাদের ধারণা, এরূপ