পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বয়ম্বর ঐবিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় রাণুর বিবাহ। তিন দিন ধরিয়া রোশনচোঁকির বাঙ্গনবাড়ী-ঘর-দুয়ার স্বরে স্বরে ভরাট হইয়া গিয়াছে। স্বর কি ভাবে মনের মধ্যে পৰ্য্যন্ত প্রবেশ করিয়া যেন কুণ, রুণ করিতেছে । গায়েহলুদের দিন মেয়েদের প্রীতিভোজ । যে-ব্যাপারটি স্বরের মধ্য দিয়া আহত সেটি যেন রাণুকে আরও পরিপাটি করিয়া ঘিরিয়া ফেলিতেছে। সে যতই সঙ্কুচিত হইয়া ঘরের কোণ খুজিতেছে, বাড়ীর যত প্রশ্ন, যত আহ্বান যেন তারই অভিমুখী হইয়া ঘুরিয়া বেড়াইতেছে—“কোথায় গেল সে ?” ."ওমা! তুষ্ট নিশ্চিন্দি হয়ে একঠায় বসে আছিস — কি ব’লে গেলাম এক্ষুণি g.মিতিরেও ঐ এক থেজি – “রাণুকেই যে দেখছি না.এই যে “দেখেছ ? এক দিনেই কত বদলে যায় " ..."ছ, পুঘলে পালে, এবার কাটল মায়া ; কিছু না, কাকের কোকিলছানা পোষা निनि ” শুধু রাণু, রাণু আর রাণু” বিবাহের দিন সমস্ত ব্যাপারটি তাকে আরও নিবিড়তর ভাবে ঘিরিয়া ফেলিল। বর আসা থেকে আরম্ভ করিয়া সবাইকে দেওয়া-থোওয়া, বসান-খাওয়ানর মধ্যে, বা কিছু উৎসব, ব্যস্তত, চেঁচামেচি, হাসি, বচসা—সমস্তর মধ্যেই রাণু যেন কি একটা গৃঢ় অলক্ষে উপস্থিত আছে। তার পর আসল বিবাহের ব্যাপারটা-রাণু তো সেখানে সর্বের্থীসবাইকে যেন নিম্প্রভ করিয়া দিয়াছে, ছোট বড়, গুরু লঘু সবাইকে। অথচ এই রাণু সেদিন পর্যন্ত সংসারের আর সব ছেলেমেয়েদের মধ্যে মাত্র অপর এক জন ছিল । সংসারের কাজেকাজে আশ্বময়লা কাপড় পরী—খোজ পড়িয়াছে ফরমাসের জন্য—কাজের অবহেলা কিংবা ভ্রাস্তিতে খাইয়াছে বকুনিমুখভার করিয়া ফিরিয়াছে ; তাও কাজের তাগিলে কি মুখটাই বেণীক্ষণ বিষণ্ণ থাকিবার অবসর পাইয়াছে ? আদরের কথা ? হ্য, তা নেহাৎ যখন কাহারও অতিরিক্ত রকমের ফুরসং, বোধ হয় ডাকিয়া এদিক-ওদিক দুটো প্রশ্ন, দুটো মিষ্ট কথা .. বিবাহ জিনিষটা তাহা হইলে মন্দ নয়!—কেমন করিয়া যেন মনে হয় একটি প্রদীপ জালার কথা,-গান, উৎসব, শঙ্খ, উলুধ্বনির সঙ্গে যেন একটি আরতির দীপ দেবতার সামনে আলোয় আলোয় ঝলমল করিয়া উঠিল । আলোর কিন্তু একটা ছায়ার দিক আছে। ঠিক যেমন আছে একটা দীপ্তির দিক । এই কথাটি ভুলিলে চলিবে না, কেন না এই ছায়া-দীপ্তি লইয়াই তো জীবন। বিবাহবাড়ীর দৃপ্তটা একবার ভাবুন, বিশেষ করিয়া চারি দিকে নানা বয়সের যে মেয়েগুলি চলাফেরা করিতেছে তাদের কথা –সবচেয়ে ব্যস্ত, সবচেয়ে কলোচ্ছ্বসিত, কেহ ন চাহিলেও শুধু নিজের আনন্দের অতি প্রাচুর্ঘ্যে সৰ্ব্বত্র সঞ্চরিত—মনে হয় এরাই যেন উৎসবের প্রাণ। কিন্তু সাধারণভাবে এ-কথাটা সত্য হইলেও একটু লক্ষ্য করিলেই দেখা যাইবে উৎসবের আলোটি সকলের মুখে সমান ভাবে ফোটে নাই। এমন কি একটু ভাল করিয়া লক্ষ্য করিলে এদের মধ্যে অনেকগুলি গম্ভীর, নিম্প্রভ, এমন কি বিষ্ণ মুখেরও সন্ধান পাওয়া যাইবে। এইগুলির উপর আলোর ছায়া পড়িয়াছে। এই ছায়াকে কি বলিবেন ?—হিংসা ? যাহা ইচ্ছা হয় বলুন, সংজ্ঞায় কিছু আসে যায় না ; আমি এই মানিমাটুকুকে ছায়াই বলিলাম। রাণুর বিবাহ উপলক্ষ্যে এই রকম একটি ছায়াপাতের কথা বলিব ; অল্প কথা, কিন্তু বড়ই করুণ । এই হাস্যোজ্জল উৎসব-রজনীতে একটি মেয়ের চিত্ত ভারাতুর হইয়া উঠিয়াছে। তার কেন বিবাহ হয় নাই ? কবে হইবে । কবে তার চারি দিকে এই বাদ্য, এইr ॐ نامه میدهد.